ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস

প্রকাশিত: ০৪:৪২, ১৫ মে ২০১৮

জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস

যুক্তরাষ্ট্র সোমবার তার দূতাবাস জেরুজালেমে স্থানান্তর করেছে। কয়েক মাস ধরে বিশ্বব্যাপী সমালোচনা উপেক্ষা করে এই দূতাবাস স্থানান্তর করা হলো। ফিলিস্তিনীদের ক্ষোভ ও ইসরাইলের প্রশংসার মধ্য দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট কাজটি করলেন। খবর এএফপি, গার্ডিয়ান ও জেরুজালেম পোস্টের। ইসরাইলের স্থানীয় সময় সোমবার বিকেল চারটায় (জিএমটি ১৩০০) উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে হোয়াইট হাউস প্রতিনিধি ও ইসরাইলী কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে দূতাবাস স্থানান্তর হয়। অনুষ্ঠানে আট শ’ অতিথি উপস্থিত হন। উপস্থিত অতিথিদের মধ্যে মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন সুলিভানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল অনুষ্ঠানে অংশ নেন। যার মধ্যে ট্রাম্প কন্যা ইভাঙ্কা ও জামাতা জ্যারেড কুশনার ও বাণিজ্যমন্ত্রী স্টিভেন মানুচিন রয়েছেন। এছাড়া রয়েছেন ১২ কংগ্রেস সদস্য। অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে পুলিশ ও ইসরাইলী সেনারা সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ব্যবস্থা বজায় রাখে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও রবিবার জানিয়েছেন, ফিলিস্তিন ও ইসরাইলের মধ্যে শান্তি প্রক্রিয়া স্থাপন এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে তা শেষ হয়ে যায়নি। অন্যদিকে গাজা সীমান্তে ফিলিস্তিনীরা বিক্ষোভ দেখিয়েছে। এদিকে রবিবার আল-কায়েদা নেতা আয়মান আল-জাওয়াহিরি নতুন এক অডিও বার্তায়, মার্কিন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছেন। পাঁচ মিনিটের ওই বার্তায় তিনি বলেন, ট্রাম্প আধুনিক ক্রুসেডের সত্যিকারের মুখ। তিনি সহানুভূতির সঙ্গে কাজ করেন না। কেবল জিহাদের মাধ্যমে একে প্রতিরোধ করতে হবে। ফিলিস্তিনের ভবিষ্যত রাজধানী জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস সরানো নিয়ে উত্তাল হয়ে উঠেছে পুরো বিশ্ব। দূতাবাসের উদ্বোধনী উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠান বর্জন করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্বের বেশির ভাগ দেশ। এ পদক্ষেপের কঠোর সমালোচনা করেছে রাশিয়া। মিসর ও মেক্সিকোর রাষ্ট্রদূতরাও অনুষ্ঠান বর্জন করেছেন। অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে ইসরাইলে নিয়োজিত বিভিন্ন দেশের ৮৬ জন রাষ্ট্রদূতকে আমন্ত্রণ জানান হয়েছিল। এদের মধ্যে মাত্র ৩০ জন আমন্ত্রণ গ্রহণ করে। যার মধ্যে মার্কিন দূতাবাস স্থানান্তরের সিদ্ধান্তের বিরোধিতাকারী দুটি দেশও রয়েছে। দেশগুলো হলো হাঙ্গেরি ও চেক রিপাবলিক। অনুষ্ঠানে পুরো ইসরাইলী মন্ত্রিসভা, নেসেট কমিটিগুলোর সভাপতিরা, নেসেট পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা বিষয়ক কমিটির সদস্য এবং এমকে জোটের বাকি অংশও যোগ দেয়। গুয়েতেমালা ও প্যারাগুয়ের প্রেসিডেন্টরাও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। মার্কিন প্রেসিডেন্টের জেরুজালেমে দূতাবাস সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্তের পর দেশ দুটিও তাদের দূতাবাস সেখানে নেয়ার কথা জানায়। এক ভিডিও কনফারেন্সের বার্তার মাধ্যমে জেরুজালেমে মার্কিন দূতাবাস উদ্বোধন করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। জেরুজালেমে বিদ্যমান কনস্যুলেট ভবনে স্বল্প পরিসরে দূতাবাস উদ্বোধন হয়। দূতাবাস উদ্বোধনকে সামনে রেখে ইসরাইল গাজা সীমান্তে সেনা সংখ্যা দ্বিগুণ করে। অতিরিক্ত দুই ব্রিগেড পদাতিক সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। আরেক ব্রিগেড মোতায়েন করা হয়েছে পশ্চিম তীরে। ফিলিস্তিনী প্রেসিডেন্ট মাহমুদ আব্বাস দূতাবাস স্থানান্তরকে মধ্যপ্রাচ্য শান্তি প্রচেষ্টার ওপর শতাব্দীর সবচেয়ে বড় আঘাত হিসেবে বর্ণনা করেছেন। গত ডিসেম্বরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তেলআবিব থেকে মার্কিন দূতাবাস জেরুজালেমে সরিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। এর মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে নিরপেক্ষ থাকার কয়েক দশক ধরে অনুসৃত নীতি থেকে সরে আসে যুক্তরাষ্ট্র। তারপর থেকে বিশ্বব্যাপী ক্ষোভের সঞ্চার হয়। পূর্ব জেরুজালেমকে ফিলিস্তিন তাদের ভবিষ্যত রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে চায়। আর ইসরাইল পুরো জেরুজালেমের দাবিদার। পুরোবিশ্ব মনে করে আলোচনার মাধ্যমে রাজধানী ইস্যুটি সমাধান করা উচিত। মুসলমান, খ্রীস্টান ও ইহুদীদের কাছে পবিত্র নগরী জেরুজালেম। ১৯৬৭ সালের আরব-ইসরাইল যুদ্ধে ইসরাইল শহরটি দখল করে নেয়। পবিত্র নগরীর ওপর ইসরাইলের সার্বভৌমত্ব আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত নয়। ১৯৯৩ সালের ইসরাইল-ফিলিস্তিন চুক্তি অনুযায়ী জেরুজালেমের পরিচয় কী হবে তার সুরাহা শান্তি আলোচনায় ঠিক করার ব্যবস্থা রাখা হয়।
×