ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোগ নির্ণয়ে দক্ষ জনশক্তি

প্রকাশিত: ০৪:৩৭, ১৫ মে ২০১৮

রোগ নির্ণয়ে দক্ষ জনশক্তি

রাজধানীর মুগদায় ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এ্যাডভান্সড এডুকেশন এ্যান্ড রিসার্চের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী যা বলেছেন তা সবিশেষ প্রণিধানযোগ্য। স্বীকার করতে হবে যে, দেশে জনসংখ্যা ও রোগী অনুপাতে চিকিৎসক, নার্স, আয়া সর্বোপরি রোগ নির্ণয়ে আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনায় দক্ষ জনশক্তির যথেষ্ট অভাব রয়েছে। প্রধানত এই কারণেই দেশের রোগীরা ক্রমশ বিদেশমুখী হয়ে থাকে। দেশে সরকারী-বেসরকারী উদ্যোগে নানা হাসপাতাল ও রোগ নির্ণয় কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ও হচ্ছে। দেশে প্রয়োজন অনুপাতে ডাক্তার-নার্স-আয়ার পাশাপাশি রোগ নির্ণয় ও প্যাথ ল্যাব পরিচালনার জন্য দেশেই দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন তিনি। সত্য বটে, দেশে বিবিধ ক্যান্সার নিরূপণ ও চিকিৎসা, কিডনি ও লিভার হাসপাতাল বোন ম্যারো ট্রান্সপ্লান্ট ইত্যাদি পরিচালনার জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহারে পর্যাপ্ত দক্ষ জনশক্তির অভাব প্রকট। দুঃখজনক হলো, অনেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সামান্য এক্সরে মেশিন থাকলেও টেকনিশিয়ান নেই। দক্ষ জনবলের অভাবে বিভিন্ন প্যাথ-ল্যাবে রোগ নির্ণয়ের জন্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিডিং আসে বিভিন্ন রকম। এর অবসান হওয়া জরুরী ও অত্যাবশ্যক। তদুপরি উন্নত বিশ্বে নিত্যনতুন যন্ত্রপাতি আবিষ্কার ও ব্যবহৃত হচ্ছে। দেশেও সে সবের আমদানি ও ব্যবহারের ওপর সরকার উৎসাহ দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ। স্বীকার করতে হবে যে, দেশের সরকারী হাসপাতালগুলোতে অল্প বিস্তর চিকিৎসা সুবিধা মেলে। বর্তমান সরকারের আন্তরিক উদ্যোগে বিভিন্ন সরকারী হাসপাতালে জনবল পর্যাপ্ত না হোক, কমবেশি বাড়ানো হয়েছে। ওষুধপত্রসহ চিকিৎসা উপকরণের সরবরাহও আশানুরূপ। এক্স-রেসহ রোগীদের পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ-সুবিধাও আছে। আছে ডাক্তার, নার্স, আয়া, ওয়ার্ডবয় এমনকি নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তাদের বেতন- ভাতাও বাড়ানো হয়েছে। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, এতকিছুর পরও সরকারী হাসপাতালের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ তথা রোগীদের অভিযোগের অন্ত নেই। এসব হাসপাতালে প্রায় বিনামূল্যে অথবা স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা সুবিধা পাওয়া যায় বিধায় অপেক্ষাকৃত মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও গরিব মানুষ স্বভাবতই ভিড় জমিয়ে থাকেন। সারাদেশের গ্রাম-গঞ্জ থেকেও রোগীরা এসে ভিড় জমান রাজধানীতে, যারা একটু জটিল রোগব্যাধিতে আক্রান্ত হয়েছেন। কেননা, জেলা শহর এবং উপজেলাগুলোতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রসহ হেলথ কমপ্লেক্স থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকসহ রোগ নির্ণয়ের সুযোগ-সুবিধা কম। আর এ কারণেই রাজধানীর ঢামেক, মিটফোর্ড, পঙ্গু ও হৃদরোগ হাসপাতালসহ বিশেষায়িত হাসপাতালগুলোতে রোগীদের প্রচ- ভিড় পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। সেই অনুপাতে থাকে না রোগীর শয্যা, ওষুধপত্র, রোগ নির্ণয়সহ আনুষঙ্গিক সুযোগ-সুবিধা, সর্বোপরি পর্যাপ্ত ডাক্তার-নার্স ইত্যাদি। অতঃপর রোগীরা প্রায় জিম্মি হয়ে পড়েন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে। সিন্ডিকেট বাণিজ্য শুরু হয় এখান থেকেই। একটি আদর্শ তথা মডেল হাসপাতাল তো দূরের কথা, মোটামুটি মানসম্মত চিকিৎসা মেলে এবং অনিয়ম-দুর্নীতিও অপেক্ষাকৃত কম এমন একটি হাসপাতালও নেই বললেই চলে। সরকারী হাসপাতালের সব চিকিৎসক-নার্স-আয়া-ওয়ার্ডবয় খারাপ ও দুর্নীতিগ্রস্ত এমন কথা বলা আমাদের উদ্দেশ্য নয়। তবে অধিকাংশ খারাপ এবং অনিয়ম দুর্নীতির ভিড়ে ভালটুকু প্রায়ই হারিয়ে যায়। হাসপাতালের ওষুধপত্র পাচার হয়ে যায় বাইরে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে রোগীর কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়া হয় গুচ্ছের টাকা। এ্যাম্বুলেন্স থেকে ট্রলিÑ সর্বত্রই পয়সার খেলা। প্রধানত অর্থ আত্মসাৎসহ আন্তরিকতার অভাবেই ভাঙ্গা যাচ্ছে না সিন্ডিকেটের অনৈতিক প্রভাব ও আধিপত্য। রোগী ও স্বজনরা মিলে যদি একযোগে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলেন, তাহলে এর দৌরাত্ম্য কমলেও কমতে পারে। এ ক্ষেত্রে কঠোর হতে হবে সরকার তথা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কেও। এর পাশাপাশি গড়ে তুলতে হবে রোগ নির্ণয়ের জন্য আধুনিক যন্ত্রপাতি পরিচালনার জন্য দক্ষ জনশক্তি।
×