ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

১২ হাজার টাকার পুকুর ১৯ লাখে ইজারা

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১৪ মে ২০১৮

১২ হাজার টাকার পুকুর  ১৯ লাখে ইজারা

মামুন-অর-রশিদ, রাজশাহী ॥ পুকুর ইজারায় দীর্ঘদিনের অনিয়ম ভেঙ্গেছে এবার প্রশাসন। যে পুকুর এতদিন মাত্র ১২ হাজার টাকায় ইজারা দেয়া হতো এবার সেই পুকুরের প্রকাশ্যে নিলামে ডাক উঠেছে ১৯ লাখ টাকার বেশি। মাত্র ১২ হাজার টাকায় গোপনে যে ব্যক্তি পুকুরটি ডেকে নিতেন এবার তিনিই ওই পুকুরটি নিয়েছেন ১৯ লাখ টাকায়। প্রকাশ্যে নিলাম দেয়ায় এ মূল্য নির্ধারণ হয়েছে এবার। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, সবকিছুতেই স্বচ্ছতা থাকা উচিত। পুকুর ইজারায় এতোদিন যে অনিয়ম হয়েছে এবার তা ভেঙে গেছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার একটি সরকারী পুকুর মাত্র ১২ হাজার টাকায় দীর্ঘদিন ধরে নরদাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিকে ইজারা দিয়ে আসছিল উপজেলা প্রশাসন। দীর্ঘদিন ধরে পুকুরটি ইজারা নিয়ে তিনি মাছ চাষ করে আসছিলেন। গোপনে তাঁকে ইজারা দেয়া হতো বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে এবার (গত বৃহস্পতিবার) তাঁকে প্রকাশ্য নিলাম ডাকের মাধ্যমে ১৯ লাখ টাকায় ইজারা দেয়ার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছে। এর ফলে দীর্ঘদিনের অনিয়ম ভেঙেছে, সরকারও মোটা অংকের রাজস্ব পেয়েছে। উপজেলা ভূমি অফিস সূত্রে জানা যায়, বাগমারার তিনটি অর্পিত সম্পত্তির (ভেস্টেড প্রোপার্টি) পুকুর প্রকাশ্য ইজারার জন্য গত ৭ মে উপজেলা প্রশাসন বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এর মধ্যে রয়েছে নরদাশ ইউনিয়নের গোড়সার গ্রামের তিন দশমিক ৯৮ একরের একটি পুকুর। গত বৃহস্পতিবার ছিল পুকুর তিনটি ইজারার দিন। ওইদিন আগ্রহী ব্যক্তিদের উন্মুক্ত ডাকে অংশ নেয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দফতর সূত্র জানায়, পুকুর তিনটি ইজারা নেয়ার জন্য ২০-২২ ব্যক্তি আসেন। এর মধ্যে নরদাশের গোড়সার গ্রামের পুকুরটি ইজারা নেয়ার জন্য আট ব্যক্তি ২০ হাজার টাকার জামানত দিয়ে উন্মুক্ত ডাকে অংশ নেন। এঁদের মধ্যে নরদাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সাবেক চেয়ারম্যান আবদুর রশিদও ছিলেন। নরদাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রশিদ সর্বোচ্চ ১৯ লাখ ৩০ হাজার টাকায় দর হাঁকেন। প্রকাশ্য নিলাম ডাকের নেতৃত্ব দেয়া সহকারী কমিশনার (ভূমি) সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে তাঁকেই (আবদুর রশিদ) ওই পরিমাণ টাকায় (১৯ লাখ ৩০ হাজার) তিন বছরের ইজারা দেওয়ার জন্য নির্বাচিত করেন নথিপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, পুকুরটি দীর্ঘদিন ধরে নরদাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রশিদকেই ইজারা দিয়ে আসছিল উপজেলা জলমহাল ইজারা কমিটি। ২০১৫ সালেও সর্বোচ্চ দরদাতা হিসেবে আবদুর রশিদকে মাত্র ১২ হাজার ৩ শ’ টাকায় তিন বছরের জন্য ইজারা দেয়া হয়। এর আগের বছরগুলোতেও এর দর আরও কম ছিল। স্থানীয় নরদাশ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মতিউর রহমান বলেন, এতদিন পুকুরটি কীভাবে ইজারা হতো তা এলাকার লোকজন জানতেন না। সরকার দীর্ঘদিন ধরে মোটা অংকের রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়ে আসছিল। তবে এবার প্রকাশ্য ডাকের ব্যবস্থা করায় সরকার সর্বোচ্চ এবং সঠিক দাম পেয়েছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, দীর্ঘদিন ধরে পুকুরটি গোপনে নামমাত্র মূল্যে ইজারা দিয়ে আসছিল উপজেলা জলমহাল কমিটি। পুকুরটি ইজারার জন্য প্রকাশ্যে কোন প্রচারণা এবং নোটিশও টাঙানো হতো না। তাঁরা উপজেলা ভূমি অফিসে এসেও এই বিষয়ে কোন তথ্য পায়নি কোনদিন। অনিয়মের মাধ্যমে পছন্দের ব্যক্তিকে পুকুর নামমাত্র টাকায় ইজারা দেয়া হতো। এই বিষয়ে উপজেলা জলমহাল ইজারা কমিটির সদস্য সচিব ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, প্রকাশ্যে ডাকের মাধ্যমে সর্বোচ্চ ১৯ লাখ ৩০ হাজার টাকায় পুকুরটি ইজারা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর আগে অনিয়মের মাধ্যমে ১২ হাজার ৫০০ টাকায় ইজারা দেয়া হয়েছে কিনা এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই সময়ে আমি ছিলাম না, কী হয়েছে তা জানি না। এবার অতিরিক্ত মূল্য হাঁকায় তিনি অবাক বলে মন্তব্য করেন। তবে প্রতিযোগিতামূলক ডাকের কারণে সর্বোচ্চ মূল্য পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। পুকুরটি ইজারাগ্রহীতা নরদাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি আবদুর রশিদ বলেন, সঠিক দামেই তিনি পুকুরটি ইজারা নিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, এর আগেও তিনি প্রকাশ্য ডাকের মাধ্যমে পুকুরটি ইজারা নিয়েছিলেন। তবে এবার সর্বোচ্চ দাম হাঁকিয়েছেন বলে জানিয়েছেন। বাগমারা উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি আবদুস সামাদ বলেন, সবকিছুতেই স্বচ্ছতা থাকা উচিত। পুকুর ইজারায় এতোদিন যে অনিয়ম হয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। গত ১৭ এপ্রিল উপজেলায় দুদকের গণশুনানিতে পুকুর ইজারাসহ ভূমি অফিসের বিভিন্ন অনিয়ম ওঠে এসেছে। ১২ হাজারের পুকুর ১৯ লাখ টাকায় ইজারা এর একটি অনন্য সুফল বলে মন্তব্য করেন তিনি।
×