ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

খালেদার মুক্তির জন্য কঠোর কর্মসূচীর চিন্তা বিএনপির

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ১৪ মে ২০১৮

খালেদার মুক্তির জন্য কঠোর কর্মসূচীর চিন্তা বিএনপির

শরীফুল ইসলাম ॥ বিএনপি এখন খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী বিজয়ী করতে নানামুখী কৌশল বাস্তবায়নে ব্যস্ত। দলের জনপ্রিয়তা প্রমাণের জন্য এ নির্বাচনে জয় পেতে নেতাকর্মীরা মরিয়া। তাই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আপাতত দায়সারা আন্দোলন কর্মসূচী পালন করছে। তবে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে কঠোর কর্মসূচী পালনের চিন্তা করছে বিএনপি। এ ছাড়া খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট কারচুপি হলে এর প্রতিবাদেও আন্দোলন কর্মসূচী পালনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। সূত্র মতে, খালেদা জিয়া কারাবন্দী হওয়ার পর তিন মাসেরও বেশি সময় অতিক্রম করলেও তার মুক্তির জন্য দলের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কঠোর কোন কর্মসূচী পালন না করায় তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মধ্যে চরম হতাশা বিরাজ করছে। সেই সঙ্গে তৃণমূল নেতাকর্মীদের পক্ষ থেকে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে কঠোর আন্দোলনের চাপ অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও লন্ডন প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দলের প্রভাবশালী সিনিয়র নেতাদের আপাতত খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের দিকে বেশি মনোযোগ দিতে বলেছেন। আর এ নির্বাচনের পর খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলন জোরদার করার কথা বলেছেন। বিশেষ করে খুলনা সিটির নির্বাচনে কারচুপি হলে সঙ্গে সঙ্গে কঠোর কর্মসূচী প্রণয়নের জন্যও প্রস্তুতি রাখতে বলেছেন। উল্লেখ্য, ৮ ফেব্রুয়ারি জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজা নিয়ে কারাবন্দী হন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তাকে পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। অসুস্থ থাকায় তার সেবা করার জন্য একজন কাজের মেয়েকেও খালেদা জিয়ার সঙ্গে কারাগারে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তবে বিএনপির পক্ষ থেকে খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ দাবি করে তার মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবি জানানো হয়েছে। এ দাবিতে বিএনপি এ পর্যন্ত বেশ কয়েক দফা আন্দোলন কর্মসূচীও পালন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল, মানববন্ধন, গণঅনশন এবং গণঅবস্থান কর্মসূচী। তবে বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা এসব কর্মসূচীকে দায়সারা কর্মসূচী বলে অভিহিত করেছেন। এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে বিএনপি এ পর্যন্ত যেসব কর্মসূচী পালন করেছে তা সফল করতে দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি তেমন লক্ষ্য করা যায়নি। অধিকাংশ কর্মসূচীতেই দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতি ছিল কম। তবে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা এসব কর্মসূচী পালনের চেষ্টা করেছেন। অবশ্য বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হয়েছে পুলিশী বাধার কারণে তারা কোন কর্মসূচীই ভালভাবে পালন করতে পারছে না। কর্মসূচী ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ টার্গেট করে নেতাকর্মীদের ওপর গ্রেফতার-নির্যাতন শুরু করে। আর পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয় কর্মসূচী পালনের নামে রাজপথে যেন কেউ শান্তিশৃঙ্খলা বিনষ্ট করতে না পারে সেজন্যই তারা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। জানা যায়, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কি কি অনিয়ম হয় তা পর্যবেক্ষণের জন্য বিএনপি একটি টিম গঠন করেছে। এই টিম সময় সময় নির্বাচন কমিশনে গিয়ে অনিয়মের অভিযোগ দায়ের করছে। সেই সঙ্গে কখন কোথায় কি অনিয়ম হচ্ছে তা লিখে রাখছে। এ টিমে রয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, ড. আব্দুল মঈন খান ও আমীর খসরু মাহমুদসহ বেশ ক’জন সিনিয়র নেতা। এ নির্বাচনে কারচুপির কারণে বিএনপি দলীয় প্রার্থী হেরে গেলে নির্বাচন কমিশনের প্রতি অনাস্থা প্রকাশের পাশাপাশি আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচীরও প্রস্তুতি নিয়ে রাখছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে দলের নেতাকর্মীরা ব্যস্ত থাকায় এবং খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে নিশ্চিত হতে না পারায় এখনও জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মকৌশল ঠিক করতে পারেনি বিএনপি। তবে খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর আন্দোলন জোরদারের পাশাপাশি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের কর্মকৌশলও নির্ধারণ করবে বিএনপি। তবে এ কৌশল কি হবে তা নির্ভর করছে কারাবন্দী বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ও লন্ডন প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ওপর। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় মেয়র ও কাউন্সিলর প্রার্থীদের বিজয়ী করতে সর্বস্তরের নেতাকর্মীরা মাঠে নেমে কাজ করছেন। লন্ডন থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন কেন্দ্রীয় ও খুলনা সিটির স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে। এ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে দলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশনে ২০ দফা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এরপরও নির্বাচনে অনিয়ম হলে আন্দোলন জোরদার করা ছাড়া বিএনপির কাছে আর বিকল্প থাকবে না বলে দলের নেতাকর্মীরা মনে করছেন। আর এ আন্দোলনের মাধ্যমেই একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ভোটের সুষ্ঠু পরিবেশের দাবি আদায়ের চেষ্টা করবে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে জয় পেতে ইতোমধ্যেই বিএনপি নানামুখী কৌশল নিয়েছে। প্রকাশ্যে প্রচারের চেয়ে গোপনে প্রচার কাজ চালানোর ওপর বেশি জোর দেয়া হয়েছে। এ ছাড়াও দলের কেন্দ্র থেকে শুরু করে তৃণমূল পর্যন্ত সর্বস্তরের নেতারা যার যার সুবিধা অনুসারে বিএনপির প্রার্থীদের পক্ষে কাজ করে যাচ্ছেন। ২০ দলীয় জোটের নেতাকর্মীদেরও এ নির্বাচনে সক্রিয় করা হয়েছে। বিশেষ করে ভোটের দিন যাতে সবাই সক্রিয় থাকে সে জন্য কর্মপরিকল্পনা করা হয়েছে। খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যেন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হয় এ জন্য দফায় দফায় নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপির পক্ষ থেকে চাপ সৃষ্টি করা হচ্ছে। দলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই নির্বাচন কমিশনে ২০ দফা প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। এরপরও নির্বাচনে অনিয়ম হলে আন্দোলন সরকারের পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধেও আন্দোলনের কথা বলা হচ্ছে দলটির পক্ষ থেকে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশনে বিএনপির পক্ষ থেকে যে ২০ দফা প্রস্তাব পেশ করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে নির্বাচনের সাত দিন আগে সেনাবাহিনী মোতায়েন, নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার না করা, প্রতিটি ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, নির্বাচনে সব প্রার্থীর প্রচারে সমান সুযোগ দেয়া, নিজ ওয়ার্ডের কোন ভোটারকে নির্বাচনের কোন দায়িত্ব না দেয়া, নির্বাচনের আগে দুই সিটির বিএনপি নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের মুক্তি দেয়া, অভিযোগ কেন্দ্র চালু করে অভিযোগের ১২ ঘণ্টার মধ্যে অভিযোগ নিষ্পত্তির ব্যবস্থা করা, পর্যাপ্ত সংখ্যক পেশাদার পর্যবেক্ষক নিয়োগ, কোন দলীয় নেতাকর্মীদের ভোট কেন্দ্রে অবস্থান করার সুযোগ না দেয়া, ভোট কেন্দ্রে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা ইত্যাদি। বিএনপি যাতে কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে মুক্ত করে সুষ্ঠু পরিবেশে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারে সে জন্য এখন থেকেই সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। এ জন্য দফায় দফায় বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে বৈঠক করে তাদের মাধ্যমে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টির কৌশল নেয়া হয়েছে। এ ছাড়া দলের পক্ষ থেকে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠনেরও দাবি করা হয়েছে। আর নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সরকারকে আলোচনায় বসারও দাবি জানানো হয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান জনকণ্ঠকে বলেন, দলের নেতাকর্মীরা খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীর বিজয়ের জন্য যার যার অবস্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। সরকারী দল ব্যাপক অনিয়ম করছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। তবে কারচুপি করে বিএনপিকে হারিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হলে আন্দোলন কর্মসূচী দেয়া হবে। তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আইনী লড়াইয়ের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ আন্দোলন কর্মসূচী পালন করা হচ্ছে। তবে শীঘ্রই খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন জোরদার করা হবে। বিএনপির মুখপাত্র ও সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আমরা এতদিন শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী পালন করেছি। শীঘ্রই তাকে মুক্তি না দিলে দলের নেতাকর্মীরা আর ঘরে বসে থাকবে না, আন্দোলনের কঠোর কর্মসূচীর মাধ্যমে তাকে মুক্ত করা হবে। তিনি বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে কারচুপির জন্য সরকারী দল যাবতীয় প্রস্তুতি নিয়েছে। বিএনপির নেতাকর্মী ও দলীয় প্রার্থীর এজেন্টদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হচ্ছে। তবে এ নির্বাচনে কারচুপি হলে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচী দেয়া হবে।
×