ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জাফর ওয়াজেদ

রাজনৈতিক এতিমদের অক্ষম আর্তনাদ

প্রকাশিত: ০৪:৫৮, ১৪ মে ২০১৮

রাজনৈতিক এতিমদের অক্ষম আর্তনাদ

মাঝে মাঝে তিনি দেশে আসেন। এসেই বাকচাতুর্য ছড়িয়ে দিতে কুণ্ঠাবোধ করেন না। দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য তার ভাবনা চিন্তার কোন সার পাওয়া যায় না। তবে প্রতিপক্ষের প্রতি এক ধরনের প্রচ্ছন্ন হুমকি কিংবা আস্ফালন তিনি অনায়াসে উচ্চারণ করতে পারেন। দেশে কথা বলার স্বাধীনতা তথা বাকস্বাধীনতা বিদ্যমান বলেই তিনি ক্ষমতাসীনদের দেশ ছেড়ে কানাডায় চলে যেতে নির্দেশ দিতে পেরেছেন। শুনে, মনে করা অস্বাভাবিক নয় যে, তিনি প্রচ- ক্ষমতাধর। তার অঙ্গুলি হেলনে নদীর ঢেউ উঠানামা করে বুঝি। বলেছেন তিনি, ‘অনেক হয়েছে, অনেক লুটপাট করেছ। এখন বিদায় নাও। লুটের টাকা নিয়ে তোমরা ভাল থাক। কানাডায় চলে যাও। দেশের মানুষকে শান্তিতে থাকতে দাও।’ নিজে বছরের অধিকাংশ সময় বিদেশ থাকেন। তাই তিনি অন্যদেরও বিদেশ যেতে বলেছেন, তা নয়। প্রতিপক্ষদের অর্থকড়ি সমেত কানাডায় অভিবাসী হতে বলছেন কোন সদুদ্দেশ্য থেকে, তাও নয়। আসলে তিনি ধু ধু মরুভূমিতে দাঁড়িয়ে কেবলই বালিয়াড়ি দেখছেন। আর তা দেখে বলছেনও, ‘পরিস্থিতি অত্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করতে চলেছে।’ এই অবস্থাটা তিনি একাই পর্যবেক্ষণ করছেন। কিন্তু ষোল কোটি মানুষের দেশে আর কারও মুখে শোনা যায় না পরিস্থিতি নাজুক। বিদেশ থেকে দেশে এলে জনজীবনের অনেক অসঙ্গতি দৃশ্যমান হতেই পারে বিদেশের তুলনায়। জন্মেছেন কলকাতায়, বেড়ে উঠেছেন ঢাকায়, বিয়েশাদি করেছেন পাকিস্তানে। একাত্তরের নয় মাস সেই পাকিস্তানে ছিলেন শ্বশুর বাড়িতে। এমন বৈচিত্র্যের অধিকারী মানুষটি যেসব বাক্য উচ্চারণ করছেন আজকাল, তাতে বিস্ময় জাগতে পারে। একি কথা শুনি বিদ্বানের মুখে! এটা তো জানা যে, বিদ্বান হলেই বুদ্ধিমান হবেন, জ্ঞানী হবেন কিংবা মানবকল্যাণের অবতার হবেন, এমন কোন কথা নেই। তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ তিনি ড. কামাল হোসেন। তার সম্পর্কে বলা হয়, তিনি এদেশের এমন একজন নক্ষত্র, যিনি আলোকিত হতে চান অপরের আলোয়। নিজস্ব কোন আলো তার কাছ থেকে বিচ্ছুরিত হয় না। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর উদারতায় তাঁরই ছেড়ে দেয়া আসনে ১৯৭০ ও ১৯৭৩ সালে। মন্ত্রীও হন বঙ্গবন্ধুর মন্ত্রিসভার। আইনমন্ত্রী হিসেবে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নের কাজে নেতৃত্বদানের কৃতিত্ব ছাড়া, তার ঝোলাতে আর কোন ‘অবদান’ এর কথা শোনা যায় না। দেখাও যায় না। পেশায় আন্তর্জাতিক আইনজীবী। দেশে-বিদেশে এই পেশাখাত হতে প্রচুর রোজগার করেন। কিন্তু দীর্ঘকাল আয়কর দেননি। বিষয়টি উদ্ঘাটিত হয় বছর কয়েক আগে। এজন্য তিনি অনুতপ্ত হয়েছেন, তা নয়। তার বিপুল অর্থ সম্পদ ব্যক্তিগত ভোগবিলাস ছাড়া আর অন্য কোন খাতে ব্যয় হতে দেখা বা শোনা যায়নি। সামাজিক কোন খাতে কখনও সামান্য অর্থ দান করার নজিরও রাখেননি। তাই বলে তিনি ‘গৃধঘœ’-এ কথা বলা সঙ্গত হয় কি? দেশের বিপদে-আপদে, অসময়ে তার উপস্থিতি বা দেখা পাওয়া দুষ্কর প্রায়। গত চার দশকে রাজনৈতিক অবস্থানে থাকাকালে রাজপথে মেহনতি মানুষের পক্ষে, নিপীড়িত-নিষ্পেষিত মানুষের হয়ে কাজ করেছেন, এমনটা দেখা যায়নি। গত দু’দশক ধরে ড. কামালকে মাঝে মাঝে রাজনৈতিক সমাবেশ ও সেমিনারে বেশ ‘ভাল ভাল নীতিবাক্য’ উচ্চারণ করতে দেখা গেছে। সুবচন তার মুখে বেশ মানানসই হলেও তিনি নিজে সেইসব বচনের ধারে কাছে যান না। কোন রাজনৈতিক দায়িত্ব নেবারও নেই সক্ষমতা। বক্তৃতা, বিবৃতি, ভাষণদানের পরদিনই তিনি দেশত্যাগ করেন। আবার ধুমকেতুর মতো হঠাৎ আবির্ভূত হন। যে আওয়ামী লীগের প্লাটফরমে দাঁড়িয়ে তিনি রাজনীতির মঞ্চে আবির্ভূত হয়েছিলেন, সেই আওয়ামী লীগই তার প্রতিপক্ষ গত দু’দশক ধরে। আওয়ামী লীগের ধ্বংসকামনাই তার জীবনের শেষপ্রান্তে এসে একমাত্র ব্রত হিসেবে নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনার বিনাশে তিনি যে কোন তৎপরতায় অবলীলায় জড়িয়ে পড়েন। তাই দেশ যখন উন্নয়নশীল দেশের পথে যাত্রা শুরু করেছেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, তখন তার ক্ষোভ, অসূয়া ও পরশ্রীকাতরতার মাত্রা তীব্র হচ্ছে। নির্বাচনের বছরে নির্বাচনবিরোধী কোন গোপন তৎপরতার অংশ হিসেবে ড. কামাল ও তার সহযোগী রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘এতিম’ হিসেবে পরিচিতরা সভা-সমাবেশে নিজেদের ‘দিবাস্বপ্ন’ তুলে ধরে বেশ পয়মন্ত ভাবেন নিজেদের, বোধ করেন স্বস্তি। বাহাত্তরে তৈরি সংবিধানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে তিনি কুণ্ঠাবোধ করেন না। ক’দিন আগে ডক্টর কামাল ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের নিয়ে আলোচনা সভায় বসে বেশ ভালই ঢেঁকুর তুলেছেন। তারা দিব্যদৃষ্টি দিয়ে দেখতে পাচ্ছেন, ক্ষমতাসীন সরকারের জনপ্রিয়তা শূন্যের কোটায়। এ মুহূর্তে নির্বাচন হলে ভরাডুবি নিশ্চিত। শুনে মনে হতে পারে সেই পুরনো প্রবাদকে ‘গাঁজার নৌকা পাহাড় বেয়ে যায়।’ যে কামাল হোসেন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারেননি আজও, কোন নির্বাচনেই বিজয়ের মুখ দেখেননি, অর্ধ শিক্ষিত, অক্ষরজ্ঞান সম্পন্নদের কাছে তিনি হেরে গেছেন। তার মেধা, বিদ্যা বুদ্ধি, প্রজ্ঞার কোন আবেদনই নেই শিক্ষিত-অশিক্ষিত ভোটারদের কাছে। ভোটাররা জানে, তিনি দেশে থাকেন না। জনগণের সঙ্গে হাত মেলাতে স্বস্তি বোধ করেন না। সেই তিনিই যখন বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সরকারী দল ১০ ভাগ আসনও পাবে না। মনে হবে জ্যোতিষী বাণী, তা নয়। আসলে বর্তমান সরকার তথা শেখ হাসিনার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া, বিদেশে সম্মান অর্জন থেকে বিশ্ব নেত্রীত্বে উন্নীত হওয়ার বিষয়টি অক্সফোর্ডে পড়া আইনজীবীটি মেনে নিতে পারছেন না। কোন রাজনৈতিক দলই তাকে তেমনভাবে গুরুত্ব না দিলেও বিএনপি-জামায়াত এবং বামদের কাছে তার একটা ‘বাজার মূল্য’ রয়েছে। যার সঙ্গে বাস্তবতা মেলে না। ডক্টর কামালকে যারা বঙ্গবন্ধু আমলে ‘সিআইএর এজেন্ট’ হিসেবে অভিহিত করতেন, তিনি সেই বামদের সমন্বয়ে গঠিত ফ্রন্টের আহ্বায়কও ছিলেন অনেক দিন। দেউলিয়া বামরা তার মধ্যে মার্কসবাদী চেতনা খুঁজে না পেলেও বৈতরণী পার হওয়া ও নিজেদের দেউলিয়াত্ব ঘোচাতে ব্যবহার করেও সুবিধে করতে পারে নি। বেগম জিয়া যখন অবরোধ ডেকে পেট্রোলবোমায় জীবন্ত মানুষ হত্যায় কঠোর পন্থা বেছে নিয়েছিলেন, দেশবাসী ভেবেছিলেন, কামাল হোসেন এসবের বিরোধিতা শুধু নয়, এমন নির্মমতা থেকে খালেদাকে সরে আসার আহ্বান জানাবেন। কিন্তু হা হতোস্মি! তিনি তার দুই সহযোগী মান্না ও সুলতানকে সঙ্গে নিয়ে বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করে আন্দোলনকে বেগবান করে গণতন্ত্র রক্ষার জন্য অনুনয়-বিনয় করেছিলেন। বেগম জিয়ার সঙ্গে নির্বাচনী জোট করার স্বপ্ন তিনি দেখতেই পারেন। কিন্তু তাতে যে তিনি জনগণের রায় তার পক্ষে নিতে পারবেন, সেটা ভাবাও দুঃস্বপ্নের মতো। আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে তিনি গণফোরাম নামে দল গঠন করেছিলেন সিপিবি, ন্যাপ, গণতন্ত্রী পার্টির কতিপয় নেতা এবং সুশীলদের কিছু চেনামুখ নিয়ে। সেই গণফোরাম এখন কেবল কাগজে কলমেই টিকে আছে। আর গণতন্ত্রের জন্য হাহাকার করা কামাল হোসেন তিন দশক ধরে এই দলের প্রধান হয়ে বহাল তবিয়তে রয়েছেন। দলে গণতন্ত্রের চর্চা না থাকায় অনেকেই সটকে পড়েছেন। বছরখানেক আগে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন, আর রাজনৈতিক দলে থাকছেন না। শুনে দেশবাসী স্বস্তির নিশ্বাস ফেলেছিল। কিন্তু তিনি তার সেই অবস্থানে থাকেন নি। এখনও ফোরামের নামে সভা, সেমিনার আয়োজন করেন। সভাপতির ভাষণও দেন। কিন্তু জঙ্গীবাদ, সন্ত্রাস, ধর্মান্ধতা, যুদ্ধাপরাধী সম্পর্কে টু শব্দটি করেন না। যেমন করেননি খালেদার মানুষ হত্যা কর্মসূচীর বিরোধিতা। কামাল হোসেনকে সৎ ও যোগ্য মানুষদের রাজনৈতিক প্রতিনিধি হিসেবে অনেক সুশীল অভিহিত করেন। তাদের এই বিশেষণে ভূষিত করার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হয় সুশীলদের দেউলিয়াত্ব। কামাল হোসেনকে জ্ঞানী, মেধাবী, প্রজ্ঞাবান বলে সুশীলরা যতোই প্রচার করুক না কেন, স্রেফ মেধা দিয়ে রাজনীতি সব সময় হয় না। এর জন্য প্রয়োজন সাধারণ কিছু কা-জ্ঞান এবং সাধারণ মানুষের মন মানসিকতা ও চাহিদা বোঝার ক্ষমতা। যা কামাল হোসেন ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের নেই। অমন প্রজ্ঞাবান ব্যক্তিটির মধ্যে সঙ্কীর্ণতার মাত্রা এতই বেশি যে, তাতে হতচকিত হতে হয়। আদালতে দাঁড়িয়ে তিনি এ্যাটর্নি জেনারেলকে বলেছিলেন, ‘শাট আপ, বাস্টার্ড। টেক ইউর সিট।’ প্রতিক্রিয়ায় এ্যাটর্নী জেনারেল মাহবুবে আলম বলেছিলেন, ‘ইউ ক্যান নট আটার দিজ ওয়ার্ড।’ এ সময় প্রধান বিচারপতি ডক্টর কামালের উদ্দেশে বলেন, আপনি একজন সিনিয়র আইনজীবী, এ ধরনের শব্দ চয়ন ঠিক না। উত্তপ্ত এই পর্যায়ে আদালত বিরতিতে যায়। পুনরায় আদালত বসার পর কামাল হোসেন ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করে ক্ষমা চেয়েছিলেন। এ ক্ষেত্রে তিনি খালেদা জিয়ার পঙ্ক্তিভুক্ত। বেগম জিয়া সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন, ‘চুপ, বেয়াদব।’ এই মামলাটাই ছিল বিএনপি আমলে ২০০৫ সালে ১৩৮ জন চিকিৎসকের বৈধতা নিয়ে স্বাচিপের দায়ের করা রিট মামলা। কামাল হোসেন বিএনপির সিদ্ধান্তের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলেন। এই ডক্টর সাহেব ১৯৮৬ সালে সংসদ নির্বাচনে যোগ দেবার জন্য আওয়ামী লীগকে বাধ্য করেছিলেন। এমনকি দলীয় প্রধানের সঙ্গে অশোভনীয় আচরণও করেছিলেন। ছাত্রলীগ নেতা মনিরুজ্জামান বাদলকে হত্যার অভিযোগে দল থেকে মোস্তফা মহসীন মন্টুকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হলে ডক্টর কামাল স্বরূপে আবির্ভূত হন। বহিষ্কার অগণতান্ত্রিক বলে তাত্ত্বিক রূপরেখা তুলে ধরার সময় অপ্রাসঙ্গিক কথাবার্তা বলতে থাকেন। প্রয়াত আবদুল জলিল দাঁড়িয়ে আপত্তি জানাতে থাকলে ডক্টর কামাল চিৎকার করে বলেন, ‘শাট আপ, সিট ডাউন। জনাব জলিল ধীর কণ্ঠে বলেন, বাংলায় বলুন। নির্বাহী কমিটিতে শোভা পায় এমন কথা বাংলা ভাষায় বলুন। এরপরই কামাল হোসেন দল থেকে পদত্যাগ করেন। কোন নীতি, নৈতিকতা ও মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব থেকে নয়, ব্যক্তিগত ক্ষোভ ও সন্ত্রাসের পক্ষে অবস্থান নিয়ে তিনি সেই যে আওয়ামী লীগ বিরোধী অবস্থান তৈরি করেছেন, সেখানেই ‘বনসাই’ হয়ে আছেন। ২০১২ সালে এই তিনি আর্তনাদ করে ওঠেন, যে কোন সময়ে তাকে ‘গুম’ করা হতে পারে। তিনি ‘গুম’ আতঙ্কে ভুগছেন। উর্দূর টানে বাংলা বলা কামাল হোসেনের এই আর্তনাদে দেশবাসী হেসেছিল হয়ত। এই কামাল হোসেন স্বরূপে আরও উদ্ভাসিত হয়েছিলেন ১/১১ এর সময়। ‘ল অব নেসেসিটির’ দোহাই দিয়ে তিনি তিন মাস মেয়াদী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের শাসন পাঁচ বছর বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। ডক্টর ইউনুসকে দিয়ে নয়া রাজনৈতিক দল গঠন করাতে উদ্বুদ্ধও করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধে কামাল হোসেনের কোন অবদান নেই। থাকার কথাও নয়। পাকি জেনারেল মিঠঠা খানের কাছে আত্মসমর্পণ করে তিনি শ্বশুরবাড়ি পাকিস্তানে ফিরে যান। ভুট্টো তাদের এই জামাতাকে সম্ভবত শিখিয়ে পড়িয়ে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সস্ত্রীক বিমানে উঠিয়েছিলেন। এই কামাল হোসেনের কারণে সিমলা বৈঠকে ১৯৫ জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের বিষয়টি ঝুলে যায়। চুক্তিতে তা অন্তর্ভুক্ত করা যায়নি। ১৯৮১ সালে রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ তাকে প্রার্থী করেছিল। ঢাকার বিএনপি মনোনীত মেয়র আবুল হাসনাত বক্তৃতায় তাকে হুমকি দিলে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন। এই একটি কাজ তিনি ভালই রপ্ত করেছেন। আর তাই সরকারী দলের নেতাদের দেশ ছেড়ে কানাডায় যাবার ‘সুপরামর্শ’ দিয়েছেন। কামাল হোসেন রাজনীতিক নন বলেই দলের লোকরা তাকে এখনও ‘স্যার’ সম্বোধন করেন। কোন আওয়ামী লীগারের মুখে কখনও শুনিনি, ‘কামাল ভাই’ শব্দটি। সাধারণ মানুষ থেকে অনেক দূরত্ব দূরে থাকা কামাল হোসেন দেশের মালিক জনগণ বলে আপ্ত বাক্য উচ্চারণ করলেও এই জনগণের পক্ষে তাকে কখনও মাঠে নামতে দেখা যায়নি। বরং গণবিরোধী অবস্থানেই দেখা গেছে। রাজনীতিতে এতিম তিনি আরও এতিমদের নিয়ে বেশ জোশ প্রকাশ করেন কদিন আগে। যারা আবার তাকে নেতা মানেন। অধ্যাপক বদরুদ্দোজা চৌধুরী বিকল্পধারা নামক একটি সংগঠনের মালিক। তিনিও তার পুত্রর ঘরোয়া দলটির নেতা কামাল হোসেনকে পেয়ে বেশ আর্তনাদ করলেন, আমরা কিন্তু ছেড়ে দেব না গর্জে ওঠার অপেক্ষায় আছি। মান্না, রবরা অপেক্ষায় আছেন। কামাল হোসেন গণতন্ত্রের জন্য তার সঙ্গে কাজ করার ওয়াদা করেছেন বলে তিনি জানান। রাজনীতিতে এতিম বি চৌধুরী, রব, মান্না, কাদের সিদ্দিকীকে নিয়ে কামাল হোসেন নতুন সংসার পাতছেন। গড়ছেন রাজনৈতিক এতিমখানা। লক্ষ্য সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে বিষোদগার করা ও বিএনপি-জামায়াতকে ক্ষমতায় আনা এবং নিজেরাও ক্ষমতার অংশীদার হওয়া। তাদের সঙ্গে ডাঃ জাফরুল্লাহ চৌধুরী নামক খালেদার পরার্মশদাতা ও আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত সুলতান মনসুরও কোরাস গাইছেন। এরা ঢোল, করতাল নিয়ে মাঠে নামার অপেক্ষায় কিনা জানি না। তবে মান্না ঢাবি ক্যাম্পাসে একটি লাশ পড়ার অপেক্ষায় সম্ভবত এখনও বিনিদ্র রজনী কাটান। রব, কাদের সিদ্দিকীর মতো রাজনৈতিক এতিমরা আস্ফালনের ঢংয়ে যা-ই বলেন না কেন, সবই শোনায় অক্ষমের আর্তনাদ। নির্বাচনী বছরে তাদের কণ্ঠস্বর আরও শোনা যাবে। আরও উচ্চকিত হবেন তারা সরকারের নিন্দা-মন্দে। কিন্তু বিএনপি জামায়াত আমলের লুটপাট, দুর্নীতি নিয়ে ‘টু’ শব্দটিও উচ্চারণ করবেন না। রাজনৈতিক এতিমরা অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারে। জনগণের কাছে যেহেতু এদের গ্রহণযোগ্যতা নেই, তাই তারা প্রাসাদ ষড়যন্ত্রের সঙ্গে একাত্ম হয়ে নানাবিধ গুঁটি চালানোর কাজে নিয়োজিত হতে পারেন। এদের সঙ্গে ডক্টর ইউনুসকেও দেখা যেতে পারে আগামীতে। এই এতিমদের অর্থ সাহায্য করার লোকের অভাব নেই। এরা নিজেরাও বেশ অর্থবিত্তের অধিকারী। এদের হাত থেকে দেশকে রক্ষা করার দায়িত্ব জনগণেরই। কোন দলের ভরসায় জনগণ থাকবে না, নিশ্চিত।
×