ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বিজয়ীর বেশে

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ১৪ মে ২০১৮

বিজয়ীর বেশে

আবার ফিরে এলেন তিনি। দেখলেন, জয় করলেন। এ বিজয়ের গৌরব তার একার নয়, তার নিজের জনগণ তথা দেশাবাসীরও। দেশের মানুষ তাকে চেনে, জানে, উপলব্ধি করে। তাই সমর্থনের পাল্লাটা তার দিকেই ভারি। তার প্রতি অতীতেও নিবেদিত ছিল জনগণ। তাই তিনি একটি নাম। একটি ব্রান্ড। একটি গৌরবময় অধ্যায়ের মূর্তমান মানব। টানা বাইশ বছর জনসমর্থন নিয়ে তিনি শুধু দেশই শাসন করেছেন, তা নয়। একটি পশ্চাৎপদ দেশকে আধুনিক রাষ্ট্রে পরিণত করার মধ্য দিয়ে সমৃদ্ধশালী দেশে উন্নিত করার গৌরবেও তিনি গৌরবান্বিত। আধুনিক মালয়েশিয়ার রূপকার হিসেবে অভিহিত করা হয় তাকে। তিনি এমন এক ব্যক্তি যার অবদানের কথাটাই বেশি করে বলা হয়, তবে স্বেচ্ছাচারী শাসক হিসেবে তার অবস্থান তাতে চাপা পড়ে যায়। তিনি মাহাথির মোহাম্মদ, এমন একজন রাজনীতিক যে, শাসনক্ষমতা হতে নিজ থেকে সরে যাওয়ার পর মালয়েশিয়া নামক দেশটিতে গণতন্ত্রের নামে নানা কিছু হওয়ার অভিজ্ঞতা বুকে নিয়ে এর জনগণ ৯২ বছর বয়সী বয়োবৃদ্ধ মাহাথিরকেই আবার বেছে নিয়েছে। ২০০৩ সালে তিনি স্বেচ্ছায় ক্ষমতা ছেড়ে দিয়েছিলেন। তারই এক সময়ের শিষ্য তারই সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় বসেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নাজিবের দুর্নীতিসহ নানা অপকর্মের বিরোধিতা করে তার পদত্যাগের দাবিতে তিনি সোচ্চার হন। দীর্ঘ বিরতির পর রাজনীতিতে সক্রিয় হন। যোগ দেন বিরোধী জোটে। যে জোটে তার এক সময়ের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক সহকর্মী এবং পরে দুর্নীতি ও সমকামিতার দায়ে কারারুদ্ধ আনোয়ার ইব্রাহিম। ভাগ্যের কী নির্মম পরিহাস! তার রেকর্ড ভাঙ্গা বিজয়ের নেপথ্যে রয়েছেন এই ইব্রাহিমই। যাকে তিনি একদা কারাগারে পাঠান, এখন তার মুক্তি চাইছেন। তার হাতেই আগামীতে ক্ষমতা তুলে দিতে চান। মালয়েশিয়ার ছয় দশকের ঐতিহ্য ভেঙ্গে প্রথমবারের মতো ক্ষমতায় এলো বিরোধী জোট পাকাতান হারাপান। যার নেতৃত্বে মাহাথির। টানা ৬২ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা মাহাথিরের রাজনৈতিক জোট বারিসান ন্যাশনালকে হারালেন তিনিই। বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক সরকারপ্রধান তথা প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়ে রেকর্ড গড়েছেন। ঘুরে-ফিরে সেই মাহাথিরের হাতেই মাতৃভূমিকে তুলে দিল মালয়রা। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সফল রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে প্রতিভাত মাহাথিরকে সততা ও সুশাসনের অবস্থান তৈরি করতে হবে। সততা, দৃঢ়তা ও নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের ইতিহাস স্রষ্টা হিসেবে তিনি নতুন ইতিহাস গড়তে যাচ্ছেন আবারও। একুশ বছর বয়সে রাজনীতিতে প্রবেশ করেন। পরবর্তী সাত বছর চিকিৎসক হিসেবে প্রাকটিস অব্যাহত রাখেন। ১৯৬৯ সালে ‘মালয় ডিলেমা’ নামের গ্রন্থ লিখে বিতর্কিত হন। দল থেকে বহিষ্কৃত হলেও পরে ফিরিয়ে নেয়া হয়। ১৯৮১ সালের ১৬ জুলাই প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। তার শাসানামলে দেশটি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। তার রাজনৈতিক জীবন সত্তর বছরের বেশি। ২০১৪ সালে চট্টগ্রামের ইউনিভার্সিটি অব ইনফরমেশন টেকনোলজি এ্যান্ড সায়েন্সের এক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে মাহাথির জানিয়েছিলেন, তার পিতামহের বাড়ি ছিল রাঙ্গুনিয়ার কোন এক গ্রামে। অনুসন্ধানে জানা গেছে কর্ণফুলীর তীরে অবস্থিত প্রসিদ্ধ গ্রাম মরিয়মনগর। উনিশ শতকের শেষে এই গ্রামের এক যুবক ব্রিটিশ শাসিত মালয়েশিয়ায় পাড়ি জমান জাহাজের নাবিক হিসেবে। সেখানেই বিয়েথা করেন। তার পিতা ছিলেন ইংরেজী স্কুলের শিক্ষক। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত বলা যায় তাকে। মালয়েশিয়ায় দীর্ঘদিন ধরে মানবাধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও প্রকৃত গণহত্যার প্রবল ঘাটতি রয়েছে। মাহাথির সেই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাবেন বলে প্রত্যাশা বিশ্ববাসীরও।
×