ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গাছের দায় কার?

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ১৪ মে ২০১৮

গাছের দায় কার?

রাজধানীর ধানমন্ডি লেকের ধারে কৃষ্ণচূড়া গাছ উপড়ে বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) পরিচালক প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমানের অকালমৃত্যু যেমন দুঃখজনক, তেমনি মর্মান্তিক। এই মৃত্যুতে পরিবার ও স্বজনদের সান্ত¡না দেয়ার ভাষা আমাদের জানা নেই। উল্লেখ্য, প্রতিদিনের মতো শুক্রবার সকালে তিনি হাঁটতে বেরিয়েছিলেন ধানমন্ডি লেকের ধারে। সেখানে এক ঝাঁক কচিকাঁচার সমাবেশ চলছিল কৃষ্ণচূড়া উৎসবে। মনোরম সেই দৃশ্যের ভিডিও তুলছিলেন তিনি মোবাইলে। এ সময় আকস্মিক ভেঙ্গে পড়ে একটি কৃষ্ণচূড়া গাছ। অন্যরা সরে যেতে পারলেও তিনি পারেননি। প্রশ্ন হলো, ফুলে ফুলে সুশোভিত কৃষ্ণচূড়া গাছের আকস্মিক পতনজনিত এই অকালমৃত্যুর দায় কার? মহানগরীর সৌন্দর্যবর্ধনের নিমিত্ত সুন্দর ও মনোরম বৃক্ষরাজি রোপণের কথা প্রায় সবাই একবাক্যে বলে থাকেন। অবশ্য বৃক্ষ একটি নগরীর শুধু সৌন্দর্যবর্ধনই করে না, গাছগাছালি প্রকৃতি ও পরিবেশ রক্ষার জন্যও অত্যন্ত উপযোগী। ঢাকা মহানগরী এমনিতেই সর্বাধিক বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, তীব্র জলাবদ্ধতা, মশা-মাছির-ভাঁগাড় ইত্যাদির জন্য বহির্বিশ্বে সুপরিচিত। প্রতিবছর এসব সমস্যা সঙ্কট নিয়ে বিস্তর লেখালেখি এবং প্রতিকারার্থে নানা প্রকল্প ও পরিকল্পনা নেয়া হলেও- প্রায় সবই পর্যবসিত হয়েছে ব্যর্থ পরিণামে। ইতোমধ্যে রাজধানীর লোকসংখ্যা বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রায় দু’কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত ঢাকা শহরের ফুসফুস বলে খ্যাত ছোট-বড় পার্কগুলো বেদখল হয়ে গেছে অনেক আগেই। খেলার মাঠ বলে রাজধানীতে আজ আর কিছু অবশিষ্ট নেই। অন্তত ৫৩টি খালের শহর বলে সুপরিচিত রাজধানীর খালগুলোও প্রায় নিশ্চিহ্ন। ফলে তীব্র জলাবদ্ধতা ও জলজট বিশেষ করে বর্ষাকাল ও বৃষ্টির মৌসুমে ঢাকা শহরের নিত্যসঙ্গী বলা চলে। জনসংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে বিবিধ যানবাহন ও গণপরিবহন। ফলে অসহনীয় ও তীব্র যানজট কর্মব্যস্ত রাজধানীর নিত্যসঙ্গী। বেদখল হয়ে যাওয়া পার্ক, খেলার মাঠ ও খালগুলোর দুর্দশার কথা আগে বলেছি। এখন যেটুকু অবশিষ্ট আছে, যেমন ধানমন্ডি লেক, রমনা পার্ক, সোহ্রাওয়ার্দী উদ্যান, চন্দ্রিমা উদ্যান, হাতিরঝিল, গুলশান পার্ক, শেরেবাংলা উদ্যানÑ এসব নিয়মিত দেখভাল ও রক্ষণাবেক্ষণের দায় কার বা কোন্ কর্তৃপক্ষের? এসব পার্ক দেখাশোনার জন্য স্থানীয় সরকারের অধীনে নিশ্চয়ই পর্যাপ্ত স্টাফ ও লোকবল আছে। তাদের মধ্যে উদ্যানতত্ত্ববিদ, প্রকৌশলী, নিসর্গবিদ, নগর পরিকল্পনাবিদ থাকাও স্বাভাবিক। সর্বোপরি মালি ও বনমালী নিশ্চয়ই আছেন, যে বা যারা গাছগুলো ও ফুলের বাগান নিয়মিত দেখাশোনা ও পরিচর্যা করে থাকেন। রাজধানীর মাটি যে নরম এবং অপেক্ষাকৃত ভঙ্গুর এ কথা সর্বজনবিদিত। রাজধানী গড়েই উঠেছে আবর্জনা ফেলে ফেলে একেবারেই অপরিকল্পিতভাবে। এর ওপর পড়েছে ইট-পাথর, সিমেন্ট ও কংক্রিটের পলেস্তারা। প্রতিবছর নিয়মিত ভারি বৃষ্টি ও জলাবদ্ধতায় এই মাটি ক্ষয়ে ক্ষয়ে আলগা হয়ে যায়। ফলে পাকা রাস্তা ভেঙ্গে পড়ে। রাস্তাঘাট খানাখন্দকে ভরে যায়। গাছের গোড়া আলগা হয়ে পরিণত হয় শিথিল বৃক্ষরাজিতে। ফলে সে সবের অনিবার্য আকস্মিক পতনে অকালে নিহত হন প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর, সুখ্যাত চলচ্চিত্র পরিচালক খালিদ মাহমুদ মিঠু প্রমুখ। অপ্রিয় হলেও সত্ত্বেও যে, এসব অনাকাক্সিক্ষত দুর্ঘটনা অতি সহজেই এড়ানো সম্ভব। অবশ্য যদি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ও সিটি কর্পোরেশনের লোকজন নিয়মিত যার যার দায়িত্ব পালন করেন। মহানগরীর সৌন্দর্যবর্ধন ও পরিবেশ সুরক্ষার জন্য বৃক্ষরোপণ অপরিহার্য ও অত্যাবশ্যক। কেমন ধরনের এবং কোন্ প্রজাতির বৃক্ষরাজি মহানগরীর সবিশেষ উপযোগী তা নির্ধারণ করার দায়িত্ব উদ্ভিদতত্ত্ববিদ ও নিসর্গবিদদের হাতে ছেড়ে দেয়াই বাঞ্ছনীয়। তবে রোড আইল্যান্ড ও ডিভাইডারে বড় ডালপালাসমৃদ্ধ গাছ না লাগানোই উচিত। কেননা তাতে যানবাহন চলাচলে বিঘ্ন ঘটে এবং বিদ্যুত সরবরাহ ব্যাহত হতে পারে। বৃক্ষরাজি রোপণের ক্ষেত্রে ঢাকার জলাবদ্ধতা ও অতি বৃষ্টির বিষয়টিও মাথায় রাখা জরুরী। তা না হলে এ রকম অনাকাক্সিক্ষত ও দুঃখজনক দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকবে।
×