ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সুমন্ত গুপ্ত

দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্র হচ্ছে শ্রীমঙ্গলে

প্রকাশিত: ০৭:১৯, ১৩ মে ২০১৮

দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্র হচ্ছে শ্রীমঙ্গলে

ধোঁয়া ওঠা এক কাপ চা দিয়ে সকাল শুরু করেন এমন লোকের সংখ্যা কম নয়। সারা দিনে এক কাপ চা পান করেন না এমন লোকও পাওয়া দুষ্কর। দিন দিন চা পানের পরিমাণ বাড়ছে। উৎপাদনের চেয়ে এই চাহিদা বাড়ছে দ্রুতগতিতে। চাহিদার তুলনায় কতটুকু চা উৎপাদিত হয়েছে, তা হিসাব করে প্রতিবছরই কম-বেশি পরিমাণ চা আমদানি করছেন ব্যবসায়ীরা। গত ১০ বছরের উৎপাদন ও চাহিদার তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা যায়, এই সময়ের ব্যবধানে চায়ের উৎপাদন বেড়েছে দুই কোটি কেজি। অর্থাৎ বছরে গড়ে উৎপাদন বাড়ছে সাড়ে ৩ শতাংশ হারে। একই সময়ে চায়ের চাহিদা বেড়েছে ৩ কোটি ৩৮ লাখ কেজি। বছরে চাহিদা বাড়ছে সাড়ে ৬ শতাংশ হারে। সিলেটে মালনীছড়া চা বাগান প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে ১৮৪৯ সালে ব্রিটিশ হার্ডসন এই উপমহাদেশে প্রথম চা বাগান প্রতিষ্ঠা করেন। বাংলাদেশের ছোট-বড় মিলিয়ে ১৬৪টি চা বাগানের মধ্যে শুধুমাত্র বৃহত্তর সিলেটেই রয়েছে ১৩৫টি চা-বাগান। যার মধ্যে ৯২টি বাগান শুধু মৌলভীবাজার এবং শ্রীমঙ্গলে অবস্থিত। তাছাড়া, সিলেট জেলায় ২০টি এবং হবিগঞ্জ জেলায় ২২টি চা বাগান রয়েছে। কিন্তু বৃহত্তর সিলেটের বাগানগুলোয় উৎপাদিত চা নিলামের জন্য নিয়ে যেতে হত চট্টগ্রামের নিলাম কেন্দ্রে। ফলে অনেক আগে থেকেই এখানে চা নিলাম কেন্দ্র চালুর দাবি করা হচ্ছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান যে চায়ের রাজধানী শ্রীমঙ্গলে নির্মাণ করা হবে দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্র। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আগামী কাল ১৪ মে আনুষ্ঠানিকভাবে শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় চা নিলাম কেন্দ্রের প্রথম নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। সিলেট বিভাগের চারটির জেলার মধ্যে (মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ এবং সিলেট) তিনটিই চা উৎপাদনকারী জেলা। ২০১৬ সালের বার্ষিক চা উৎপাদন সূচক মোতাবেক, ৭০,০০০ ম্যাট্রিক টন মোট চা উৎপাদনের মধ্যে শুধুমাত্র বৃহত্তর সিলেটেই উৎপাদিত হয় ৬০,০০০ মেট্রিক টন চা। সিলেটে উৎপাদিত এই চায়ের ৭৫ শতাংশ জন্মেছিল শুধুমাত্র মৌলভীবাজারের বাগানগুলোতে। নব্বইয়ের দশকে বিশ্বে চা রফতানির তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ছিল পঞ্চম। সবচেয়ে বেশি পরিমাণ চা রফতানি হয় সেই সময়। ১৯৮২ সালে চা রফতানি হয় ৩ কোটি ৪৪ লাখ কেজি। সবচেয়ে কম রফতানি হয় ২০১৬ সালে, ৪ লাখ ৭০ হাজার কেজি। অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়তে থাকায় রফতানিও কমে গেছে। ২০১৬ সালের চা রফতানিতে বাংলাদেশ ছিল ৭৭তম। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে দেশের দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক চা নিলাম কেন্দ্রের উদ্বোধন হয়। তবে এ কেন্দ্রে এতদিন কোন নিলাম অনুষ্ঠিত হয়নি। এবার সেই প্রতীক্ষার অবসান হতে যাচ্ছে। টি ট্রেডার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (টিটিএবি)’র পরিচালনায় এ কেন্দ্রে পর পর তিনটি আন্তর্জাতিক নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত চায়ের আন্তর্জাতিক নিলাম বন্ধ রাখা হবে। টি সেলস কো-অর্ডিনেশন কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ১৪ মে প্রথম নিলামের পর ২৬ জুন ও ১৭ জুলাই আরও দুটি নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। টি প্লান্টার্স এ্যান্ড ট্রেডার্স এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের পরিচালনায় এ কেন্দ্রে পর পর তিনটি আন্তর্জাতিক নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। এ সময় চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত চায়ের আন্তর্জাতিক নিলাম বন্ধ রাখা হবে। এই তিন নিলামের পর পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে দেশের দ্বিতীয় নিলাম কেন্দ্রের পরবর্তী কার্যক্রম সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেবে চা বোর্ড। দেশের দ্বিতীয় নিলাম কেন্দ্রের উদ্বোধনের পর চা বোর্ডের পক্ষ থেকে মৌলভীবাজারে পাঁচটি ব্রোকারেজ হাউসের লাইসেন্স ইস্যু করা হয়েছে। ব্রোকার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে রয়েছে জালালাবাদ টি ব্রোকার্স, এসটি ব্রোকার্স লিমিটেড, এসটিএলটি ব্রোকার্স লিমিটেড, গ্রেটার সিলেট টি ব্রোকার্স লিমিটেড ও শ্রীমঙ্গল টি ব্রোকার্স লিমিটেড।
×