ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

কবুতর পালনে বাণিজ্যিক সফলতা

প্রকাশিত: ০৭:১৭, ১৩ মে ২০১৮

কবুতর পালনে বাণিজ্যিক সফলতা

মুহাম্মদ শফিকুর রহমান আজ থেকে চল্লিশ বছর আগের কথা। শখের বসেই ঢাকার করিমুল্লাহবাগের জুবায়ের হোসেন এক জোড়া কবুতর কিনে আনেন। তখন নানা জনের নানা কথা শুনতে হয় তাকে। এক জোড়া থেকে এখন তা তিনশ জোড়া ছাড়িয়ে গেছে। শখ এখন আর শখ নেই। তার আয়ের অন্যতম উৎস। আগেরকালে কবুতর ছিল যোগাযোগ মাধ্যম। কবুতরকে শান্তির প্রতীক ভাবা হয়। কবুতরের বাচ্চা রোগীর পথ্য হিসাবে জনপ্রিয়। পোষা যত পাখি আছে, তার মধ্যে লাভের বিবেচনায় কবুতরের অবস্থান প্রথমদিকে। মূলধন কম লাগে। খোলা জায়গায় বাসা ঝুলিয়ে পালা যায়। রাজধানীর ঢাকা শহরের অসংখ্য ছাদের ওপর রং বেরঙয়ের কবুতরের সমারোহ চোখে পড়ে। অনেক সুডেন্টের হাত খরচের উৎস কবুতর। কবুতরের উৎপাদন ক্ষমতা অন্য পাখিদের চেয়ে বেশি। গড়ে বছরে ১০.৮৩ জোড়া বাচ্চা পাওয়া যায়। ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর হার ৮৮.৫ ভাগ। অল্প সময়ে কবুতরের বাচ্চা বাজারজাতকরণের উপযোগী হয়। বাচ্চা বিক্রয় উপযোগী হতে মাত্র ২৮ দিন লাগে। সল্প সময়ের প্রজনন কাল, অল্প খাবার গ্রহণ, প্রকৃতি থেকে খাবার গ্রহণ করা কবুতর পালনে বাড়তি সুবিধা। এই সুবিধা অন্য পোষা পাখিদের বেলায় নেই বললেই চলে। বাচ্চা উৎপাদনের জন্য বাংলাদেশের আবহাওয়া খুব উপযোগী। ১৫ থেকে ২০ বছর কবুতরের আয়ুকাল। দেশের ঝিনাইদাহ, পটুয়াখালী, বান্দরবন, কক্সবাজার, বরগুনা, খুলনা জেলায় বেশি সংখ্যক মানুষ কবুতর পালন করে বলে জানা যায়। কবুতর পালন করে বাড়তি উপার্জন তো বটেই। অসংখ্য মানুষ কবুতর পালনকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন। কুমিল্লার হাজী জয়নাল আবেদিন ১৯৮৫ সালে এক জোড়া কবুতর কিনেন। ২০১০ সালে তিনি বাণিজ্যিকভাবে কবুতর পালন শুরু করেন। বর্তমানে তার খামারে কবুতরের সংখ্যা এক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। কবুতর খামারের আয় দিয়ে পরিবারের সকল খরচ, পাচ ছেলে ৪ মেয়ের লেখাপাড়া, জায়গা ক্রয়, দুই ছেলেকে সৌদি আরব, বাহরাইন প্রেরণ, চারটি বাড়ি ক্রয়, একটি মাছের খামার গড়ে তুলেছেন । তার খামারে সিরাজি, হুমা, চুন্নি, গিরেবাজ, বাবুরাজ, লোটন, ময়ুরি, কুটারবল, চনা, কিং আউবেলসহ প্রায় ৩০ প্রজাতির কবুতর রয়েছে। তিনি জানান কবুতর পালন করতে হলে খোলামেলা পরিবেশ প্রয়োজন। তার মতে কবুতর পালন করে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি আমিষের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। মঠবাড়িয়ার তুষখালীর তারেক কবুতর পালন করে বেকারত্ব দূর করেছে। তিনি জানান, রোগ ব্যাধি কম থাকায় কবুতর পালন লাভজনক। তিনি সরকারী বেসরকারী ব্যাংক কর্তৃক কবুতর পালনের জন্য সহজ শর্তে ঋন দেবার দাবি জানান। যুব উন্নয়ন অধিদফতর হাস মুরগি পালনের প্রশিক্ষণ ও ঋণ দেয়। অথচ কবুতর পালনের প্রশিক্ষণ ও ঋণ দেয় না। কবুতর পালনকে পেশা হিসাবে বেছে নিয়েছেন এমন লোকের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। শুধু কবুতরের জন্য ওষুধ তৈরি হয় না। ইনজেকশন পাওয়া যায় না। আর জেলা পশু সম্পদ অফিস কবুতর বিষয়ে সহায়তা করে না বললেই চলে। এমনটাই কবুতর খামারিদের অভিযোগ। ভর্তুকি না হোক। সামান্য ওষুধ, ফিড বা মিনারেল এবং মাঠপর্যায়ে সহায়তা করলে ব্যাপক সফলতা পাওয়া সম্ভব। হাঁস মুরগির ওষুধ দিয়ে কবুতরের চিকিৎসা করা হয়। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের প্রকট অভাব। এসবই অত্যন্ত সম্ভাবনাময় কবুতর সেক্টরকে পিছিয়ে রেখেছে। যশোরের শর্শায় কয়েক হাজার যুবক শুধু কবুতর পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছে। কলবাগানের কবুতর খামারী জাকিরুল ইসলাম জানান, উন্নত জাতের কবুতর পালনে প্রচুর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা অছে। তিনি জানান ইংল্যান্ডসহ উন্নত দেশগুলোতে খাবার উপযোগী এমনও কবুতর আছে, যার ওজন এক কেজির উপরে। বিদেশ থেকে উন্নতজাতের কবুতর নিয়ে আসায় নানা রকম প্্রতিবন্ধকতা আছে। পেটস এনিমেল এ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রহমান জানান, তারা নতুন কবুতর পালকদের নানা রকম সহায়তা করেন। একশ জোড়ার ও বেশি কবুতর আছে রবিউল ইসলাম রবির। তিনি জানান, কবুতরের আসল পরিচর্যা হলো পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। শুকনো জায়গায় কবুতর থাকতে পছন্দ করে। তিনি তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন, মূলত দক্ষতা ও কারিগরি জ্ঞানের অভাবে নতুন কবুতর খামারিরা লোকসানে পড়েন। নতুনদের তিনি আলো,বায়ু চলাচল করে এমন জায়গায় কবুতরের খাঁচা স্থাপনের পরামর্শ দেন। সপ্তাহের কোন না কোন দিন জেলা শহরগুলোতে কবুতরের হাট বসে। স্থায়ী বাজার বা নির্দিষ্ট স্থান বলতে কিছু নেই। কবুতর বাজারজাতকরণে খামারিরা সমস্যার মুখে পড়েন। ছাত্র ছাত্রী গৃহবধূর হাত খরচের টাকাই কেবল নয়। কবুতর পালনে অর্থনীতিকভাবে স্বর্নিভর মানুষদের সংখ্যা নিহায়তই কম নয়। তাই সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ব্রনালয় ওষুধ, উন্নত জাতের কবুতর, প্রশিক্ষণ, ঋণ সহায়তা দিয়ে কবুতর খামারিদের সাহায্য করবে এমনটাই সকলের প্রত্যাশা।
×