ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ক্লিয়ারমেন বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৭ ফুটবল

শেষ মুহূর্তের গোলে চ্যাম্পিয়ন রাজশাহীর সোনাদীঘি স্কুল

প্রকাশিত: ০৭:০১, ১৩ মে ২০১৮

শেষ মুহূর্তের গোলে চ্যাম্পিয়ন রাজশাহীর সোনাদীঘি স্কুল

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ কমলাপুর স্টেডিয়ামের টার্ফ। খেলা শুরুর ঠিক আগ মুহূর্ত। মাঠে দু’দলের খেলোয়াড়রা নিজ নিজ সীমানায় গোল হয়ে শেষবারের মতো শলা-পরামর্শ করে নিচ্ছে। খুব অল্প সময়েই এক দলের ‘টিম মিটিং’ শেষ। কিন্তু অন্য দলেরটা শেষ হওয়ার কোন লক্ষণই নেই। অধৈর্য রেফারি মাহমুদ জামাল ফারুকী নাহিদ বার তিনেক বাঁশি বাজানোর পর অবশেষে সম্বিত ফিরলো তাদের। প্রেসবক্সে বসা একজন বললেন, ‘এত লম্বা মিটিং করলো। দেখব তারা জিতে কি না। না জিতলে এত লম্বা মিটিংয়ের কোন গুরুত্ব থাকবে না।’ ফাইনাল খেলা এক ঘণ্টার (৩০+৩০ মিনিট)। পুরো ৫৯ মিনিটেও কোন গোল হলো না। গোল হলো একটি এবং সেটা শেষ মুহূর্তে। কোন দলটি হজম করল গোল? যারা টিম মিটিংয়ে কালক্ষেপণ করছিল। ক্লিয়ার মেন বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৭ চ্যাম্পিয়নশিপের চূড়ান্তপর্বের খেলা শেষ হয়েছে। শনিবার ফাইনালে মুখোমুখি হয় ঢাকার বিএএফ শাহীন স্কুল বনাম রাজশাহীর সোনাদীঘি উচ্চ বিদ্যালয়। সোনাদীঘি স্কুল ১-০ গোলে শাহীন স্কুলকে হারিয়ে শিরোপা জেতে। ম্যাচের শেষ মিনিটে প্রতিপক্ষের বক্সের ডানপ্রান্তে ফ্রি কিক পায় সোনাদীঘি স্কুল। প্রর্বিত কুমারের হাওয়ায় ভাসিয়ে দেয়া বলে বক্সের ভেতর ত্বরিত গতিতে ছুটে এসে দর্শনীয় হেডে বলে জাল পাঠিয়ে সতীর্থদের নিয়ে গোলের উল্লাসে মাতে বিপ্লব তির্কী। শেষ পর্যন্ত তার গোলটিই হয়ে ওঠে শিরোপা জয়ের নিয়ামক। ফাইনাল খেলায় বেশকিছু অসঙ্গতির কথা না বললেই নয়। মাঠের সেন্টার পয়েন্টের ঠিক বাইরে বসানো হয় জায়ান্ট স্ক্রিন। এটা আসলে স্থাপন করা হয় সম্পূর্ণ ভুল জায়গায়। এটাকে বরং গ্যালারিতে উঁচু জায়গায় বসালেই ভাল হতো। তাছাড়া স্ক্রিনটি বসিয়েও কোন লাভ হয়নি। কারণ প্রচ- রোদের আলোয় স্ক্রিনের ছবি ঠিকমতো দেখাই যাচ্ছিল না। খেলা শুরু হয় বেলা সাড়ে ১১টায়। বলতে গেলে কড়া রোদ ও প্রখর দুপুর। খেলাটা বিকেলে অনুষ্ঠিত হলে কী খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যেত? স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে বিভিন্ন প্রান্তে জায়গা ফাঁকা রেখে দুই স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা স্কুল ড্রেস পরে খেলা উপভোগ করতে আসে। হাতে ছিল ভুভুজেলা, ব্যানার, প্ল্যাকার্ড। বলতে গেলে উৎসবমুখর পরিবেশ। তারা বাদে স্থানীয় কিছু দর্শকও ছিল। তাদের সংখ্যাটা নিঃসন্দেহে আরও বাড়তো যদি বিকেলে খেলাটা হতো। দুই দলই সমানতালে গতিশীল ফুটবল খেলে। কিন্তু প্রবল গরমের কারণে দম হারিয়ে শেষদিকে ক্লান্ত হয়ে পড়ে। একটু পরপরই সব ফুটবলারকেই ঘন ঘন জল পান করতে দেখা যায়। উভয় দলেরই একাধিক স্কিলফুল ফুটবলার দেখা গেছে। এখন বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) তাদের ‘প্রতিভাবান ফুটবলার’ হিসেবে বেছে নেবে কিনা, সেটাই হচ্ছে প্রশ্ন। যদিও বাফুফের টেকনিক্যাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক ডিরেক্টর পল স্মলিকে ফাইনালে দেখা গেছে, যার কাজ এই টুর্নামেন্টে অংশ নেয়া প্রতিভাবান ফুটবলার বেছে নেয়া। কিন্তু অনুসন্ধানে জানা গেছেÑ শুধু ফাইনাল ম্যাচ ছাড়া এই আসরের আর কোন খেলাই দেখেননি পল। ম্যাচে দুই দলই গোল করার একাধিক সুযোগ নষ্ট করে। উভয় দলেরই ডিফেন্ডাররা চমৎকার দৃঢ়তা প্রদর্শন করে। সোনাদীঘির প্রর্বিত কুমার সবচেয়ে বেশিবার (দু’বার) এবং সবচেয়ে আক্ষেপ জাগানিয়া গোল করার সুযোগ নষ্ট করে। শেষ মিনিটে বিপ্লবের গোলে বাজিমাত করে সোনাদীঘি (তাদের ১৫ খেলোয়াড়ের ১১ জনই আদিবাসী সম্প্রদায়ের)। বিজয় নিশ্চিত হতেই উল্লাসে ফেটে পড়ে গ্যালারিতে উপস্থিত দলটির দু’শো শিক্ষার্থী-সমর্থক, যারা রাজশাহী থেকে তিনটি বাসে করে সারারাত ভ্রমণ করে সকালে ঢাকায় পৌঁছায় খেলা দেখতে। কোন সন্দেহ নেই, এত কষ্ট করে তাদের ঢাকায় এসে খেলা দেখা সার্থক।
×