ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

নাজিবের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১৩ মে ২০১৮

নাজিবের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা

মালয়েশিয়ার সদ্য বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক ও তার স্ত্রীর দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। দেশটির অভিবাসন কর্মকর্তারা শনিবার একথা জানিয়েছেন। বুধবার অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন জোটের কাছে তার নেতৃত্বাধীন বারিসান ন্যাসিওনাল (ন্যাশনাল ফ্রন্ট) অনেক ব্যবধানে হেরে যায়। নাজিব এক সময় সাবেক প্রধানমন্ত্রী মাহাথিরের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তি ছিলেন। এএফপি ও বিবিসি। নাজিব পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ছুটি কাটাতে শনিবার দেশের বাইরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন বিষয়টি জানাজানি হওয়ার কিছুক্ষণ পর তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার খবর আসে। তিনি যেন কুয়ালালামপুর এয়ারপোর্টে ঢুকতে না পারেন সেজন্য সেখানে একদল লোক বিক্ষোভ করে। নাজিব টুইটারে তার দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞার খবর নিশ্চিত করেন। নাজিব (৬৪) ও তার স্ত্রী রোসমাহ মানসুর এক সপ্তাহের জন্য জাকার্তা যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন, অর্থ আত্মসাতের মামলা এড়াতে নাজিব দেশ ছাড়ার চেষ্টা করছেন এমন ধারণার বশবর্তী হয়ে দেশটির অভিবাসন দফতর তাদের বিদেশ ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন ও সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকার পরিচালনা এবং নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত থাকার কারণে পরিবারকে আমি যথেষ্ট সময় দিতে পারিনি। তাই সপরিবারে এক সপ্তাহের জন্য বাইরে যাওয়ার মনস্থ করেছিলাম।’ কি কারণে এ সিদ্ধান্ত হয়েছে কর্তৃপক্ষ তা না জানালেও নাজিব এ নির্দেশ মেনে নিয়েছেন। তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালে মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ তহবিল ওয়ানএমডিবি থেকে ৭০ কোটি মার্কিন ডলার নিয়ে অনিয়মের অভিযোগ আছে। ২০১৫ সালে অভিযোগ উঠলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তার সরকারকে দায়মুক্তি দিয়ে রেখেছিল। রাজধানী কুয়ালালামপুরকে বিশ্ব অর্থনীতির অন্যতম কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা এবং অর্থনীতিকে শক্তিশালী করার লক্ষ্যে ২০০৯ সালে ওই তহবিল গঠন করা হয়েছিল। এতে ৩শ’ কোটি ডলারের বেশি অর্থ ছিল। ওই অর্থ নয়-ছয় করার মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে বলে ২০১৬ সালে যুক্তরাষ্ট্র ১শ’ কোটি ডলার সম্পদ জব্দ করার উদ্যোগ নেয়। মার্কিন ফেডারেল কোর্টে এ সংক্রান্ত একটি মামলাও হয়। মার্কিন বিচার বিভাগের দায়ের করা ওই মামলার কাগজপত্রে মালয়েশিয়ার সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের নাম উল্লেখ না করে তাকে ‘মালয়েশিয়া অফিসিয়াল ওয়ান’ বলা হয়। তিনি শুরু থেকেই এ অভিযোগ অস্বীকার করছেন। দেশটির বিচার বিভাগ অবশ্য তাকে এই অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি তদন্ত থেকে অব্যাহতি পান। তারা এ বিষয়ে নতুন তদন্তের দাবি জানিয়েছে। এই অভিযোগকে ঘিরেই মাহাথিরের সঙ্গে তার দূরত্ব তৈরি হয়। এ নিয়ে বিতর্কের জেরে মাহাথির এক সময় তাকে ক্ষমতা ছেড়ে দেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু নাজিব ক্ষমতা ছাড়তে রাজি না হওয়ায় নিজের সাবেক দলের বিপক্ষে গিয়ে বিরোধীদের সঙ্গে জোট বেঁধে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নেন মাহাথির। মাহাথিরের জনপ্রিয়তার জোরেই বুধবারের জাতীয় নির্বাচনে পাকাতান হারাপানের (এ্যালায়েন্স অব হোপ) বড় জয় পায়। ১৯৫৭ সালে ব্রিটিশ শাসন থেকে স্বাধীন হওয়ার পর গত ৬১ বছর ধরে একটানা ক্ষমতায় থাকা মালয়েশিয়ায় বারিসান ন্যাসিওনালের (বিএন) ভরাডুবি হয়। বিএন’র হয়ে ২২ বছর মাহাথিরই দেশ শাসন করেছেন। বৃহস্পতিবার ৯২ বছর বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি বয়সী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মাহাথির। তিনি বলেন, ‘ওয়ানএমডিবি তহবিলের বেশিরভাগ অর্থ আমরা ফেরত আনতে সক্ষম হব বলেই আমার বিশ্বাস।’ নাজিবের হয়ে কাজ করা সরকারী সংস্থাগুলোয় পরিবর্তন আসবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মাহাথির বলেন, ‘নির্দিষ্ট কয়েকজনকে অবশ্যই সরিয়ে দেয়া হবে। আমাদেরকে প্রশাসনের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়াতেই হবে।’ তিনি বলেন, তার সরকার প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে কারও বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেবে না, তবে তদন্তে নাজিবের আর্থিক অনিয়মের বিষয়টি ধরা পড়লে তাকে আইনের মুখোমুখি হতে হবে।
×