ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে দ্রুত মেডিক্যাল টেস্ট করাতে হবে

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১৩ মে ২০১৮

ধর্ষণের ঘটনা ঘটলে দ্রুত মেডিক্যাল টেস্ট করাতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেছেন, আমাদের দেশে ধর্ষণের শিকার হলে মেডিক্যাল টেস্ট করতে অনেক সময় দেরি হয়ে যায়। এতে করে আলামত নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু এক্ষেত্রে বিচারের জন্য একমাত্র সাক্ষী-প্রমাণ হলো মেডিক্যাল রিপোর্ট। তাই ধর্ষণের কোন ঘটনা ঘটলে যত দ্রুত সম্ভব মেডিক্যাল টেস্ট করাতে পরামর্শ দেন প্রধান বিচারপতি। তিনি বলেন, বলা হচ্ছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলায় কেবল তিন শতাংশ শাস্তি নিশ্চিত হচ্ছে। এক্ষেত্রে অবশ্যই হতাশ না হয়ে কারণ খুঁজে বের করতে হবে। এজন্য প্রয়োজনে কর্মশালা করার কথাও বলেন তিনি। নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের মামলায় বেশির ভাগ আসামি খালাস পাওয়ার অভিযোগ করার আগে দেখতে হবে গলদ কোথায়। বিনা বিচারে দীর্ঘদিন আটক আছেন অথবা প্রতিনিধিত্ব বিহীন অবস্থায় কিংবা আইনজীবী না থাকার কারণে মামলা শুনানি করতে পারছে না এরূপ দরিদ্র কারাবন্দীদের আইনী সহায়তা দেয়ার জন্য উদ্যোগ নিন। কারাগারের সঙ্গে জেলা লিগ্যাল এইড অফিসের নিবিড় যোগাযোগ স্থাপন করুন। শনিবার উচ্চ আদালতে সরকারী আইনী সেবা বিচারপ্রার্থীগণের প্রত্যাশা ও জেল আপীল মামলা পরিচালনায় আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্টদের ভূমিকা এবং করণীয় শীর্ষক মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। এতে বিভিন্ন জেলার জেল সুপার, জেলা ও দায়রা জজ, সুপ্রীমকোর্ট শাসন, আইনজীবীসহ লিগ্যাল এইড কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ে কর্মকর্তারা উপস্থিত হয়ে নিজেদের মতামত তুলে ধরেন। সুপ্রীমকোর্ট কোর্ট কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের সভাপতিত্বে এ সময় আরও বক্তব্য দেন আপীল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম, সুপ্রীমকোর্ট বার-এর সম্পাদক ব্যারিস্টার এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন, সুপ্রীমকোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার মোঃ গোলাম রব্বানী, অতিরিক্ত কারা মহা-পরিদর্শক কর্নেল ইকবাল হাসান ও জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রান সংস্থার পরিচালক মোঃ জাফরোল হাছান। বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আপীল বিভাগের বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী বলেন, ‘সংবিধান অনুযায়ী সকল নাগরিকের ন্যায়বিচার পাওয়ার অধিকার আছে। ধনীর জন্য আইন প্রয়োগ হলে গরিবের জন্য কেন হবে না? শুধু নিয়মকানুন জানার অভাবে অনেকে জামিনযোগ্য মামলাতেও কারাগারে আছেন। জজদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আইন থাকলে সেটা কেউ প্রয়োগ না করলে বেআইনী কাজ করছেন ও তিনি আইন মানছেন না। এর আগে আমরা দেখতাম, জেল আপীলের শুনানিই হতো না। হাইকোর্টে আমরা যখন ছিলাম, ভাগ করে চেম্বারে বসে নথি দেখে রায় দিতাম। এখন লিগ্যাল এইডে যারা আছেন তাদের এই আপীলগুলো শুনানির জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। এসব আপীলেও পেপারবুক থাকতে হবে। সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম বলেছেন, সুপ্রীমকোর্টের কাছে দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি। আইনে কী আছে সেটা বিচারপ্রার্থী জনগণ বুঝতে চায় না। যারা হৃতদরিদ্র তারাই জেল আপীল করেন। কিন্তু অনেক জেল আপীল ত্রুটিপূর্ণ হওয়ায় সেগুলো তালিকাভুক্ত হয় না। হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় পড়ে থাকে। এসব জেল আপীল যাতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় পাঠানো হয় সেদিকে নজর রাখতে হবে। তা নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে আমাদের নিজ নিজ ভূমিকা পালন করা গেলেই এসব বিচারপ্রার্থীদেরকে আইনী সহায়তা দেয়া সম্ভব হবে। বিচারপতি ইনায়েতুর রহিম বলেন, গত ২ বছরে সুপ্রীমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি চার শতাধিক জেল আপীল নিষ্পত্তি করেছে। এটা নিষ্পত্তি করা সহজ বিষয় নয়। দেখা যাচ্ছে কোন মামলায় আসামির সাজা হয়েছে ৫ বছর কিন্তু জেল আপীল নিষ্পত্তির আগেই ওই সাজা ভোগ করে ফেলেছেন। এর কারণ হচ্ছে ত্রুটিপূর্ণ জেল আপীল। আপীল করা হয়েছে কিন্তু তার সঙ্গে রায়ের কপি নেই। এ কারণে এসব আপীল শাখায় পড়ে থাকে। তাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের আহ্বান জানান তিনি।
×