ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শাহাব উদ্দিন মাহমুদ

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১৩ মে ২০১৮

অপ্রতিরোধ্য অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ

(গতকালের পর) ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিপ্লব বাংলাদেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে রীতিমতো বিপ্লব ঘটেছে। সারা দেশেই ছড়িয়ে পড়েছে এ শিল্প। ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের মধ্যে মোটর পার্টস ও মেশিনারিজ শিল্প, কৃষি যন্ত্রপাতি, মোটরসাইকেল যানবাহনের খুচরা যন্ত্রাংশ ঢাকা, বগুড়া, যশোর, কেরানীগঞ্জের জিঞ্জিরা বহুমুখী শিল্পাঞ্চল ছাড়াও অনেক স্থানেই গড়ে উঠছে শিল্প কারখানা। ঢাকার বাইরে বগুড়া, যশোর, পাবনায় গড়ে উঠছে ক্ষুদ্র মেশিনারিজ শিল্পের বিশাল পল্লী। উন্নত বিশ্বের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঝে মধ্যেই দেশীয় কারিগররা অভাবনীয় নানা মেশিনারিজ তৈরির দক্ষতা দেখিয়ে তাক লাগিয়ে দেন। গাজীপুর ও সাভারের বিরাট এলাকাজুড়ে রয়েছে পোল্ট্রি ও পোল্ট্রি ফিড কেন্দ্রিক নানা শিল্প কারখানা। বুড়িগঙ্গার তীর জুড়ে রফতানিমুখী গার্মেন্ট ছাড়াও তৈরি পোশাকের আলাদা শিল্প গুরুত্ব পাচ্ছে সর্বত্র। পঞ্চগড়ে বিস্তার ঘটছে চা শিল্পের। কুষ্টিয়ায় গড়ে উঠেছে চাল শিল্পের আরেক দুনিয়া। চার সহস্রাধিক চাতাল ও চাল কল কুষ্টিয়ার খাজানগরকে আমূল বদলে দিয়েছে। সারা দেশে স্থানীয় পর্যায়ে গড়ে তোলা ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকারের শিল্প কারখানা রয়েছে ৪০ হাজারেরও বেশি। এখাত থেকে সরকারের রাজস্ব আয় তিনশ কোটি টাকারও বেশি। এসব শিল্প কারখানার সঙ্গে জড়িয়ে আছে ৩৫ লাখ কর্মীসহ দেড় কোটি মানুষের জীবন জীবিকা ও ভাগ্য। সরকার ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের বিকাশে ‘দারিদ্র্য বিমোচন কৌশলপত্রে’ ক্ষুদ্র ও মাঝারি এবং রপ্তানি শিল্পের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপসহ নিবিড় কর্মসংস্থানভিত্তিক শিল্পায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। সরকারের ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প উন্নয়ন নীতিকৌশলের যথাযথ বাস্তবায়নের ফলে দেশে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে বিপ্লব চলছে। শিপইয়ার্ড শিল্পে বিপ্লব বর্তমান সরকারের সময়োপযোগী নীতি কৌশলের কারণে ক্রমেই যেন শিপইয়ার্ড শিল্প এগিয়ে যাচ্ছে অর্থনৈতিক বিপ্লবের দিকে। ঢাকার কেরানীগঞ্জ ও নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রাম, খুলনা, বরিশালসহ সংলগ্ন জেলাগুলোতে সমুদ্রগামী জাহাজসহ সব ধরনের নৌযান তৈরির শিল্প বিকশিত হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের খুলনা শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত খুলনা শিপইয়ার্ড লিমিটেড প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ একটি সরকারী জাহাজ নির্মাণ এবং মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান। এটি জার্মান সহায়তায় ১৯৫৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। জাহাজ, টহল বোট, ট্যাগ বোট প্রভৃতি ভারি শিল্প তৈরি হয় এ প্রতিষ্ঠান থেকে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সক্ষমতা বৃদ্ধিতে বিশ্বের সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সম্পন্ন অত্যাধুনিক ‘সাব আন্ডার ওয়াটার ওয়ার ফেয়ার’ বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন যুদ্ধ জাহাজ ‘লার্জ প্যাট্রোল ক্রাফট’ বা এলপিসি তৈরি করেছে খুলনা শিপইয়ার্ড। নিশান এবং দুর্গম নামে দুটি অত্যাধুনিক যুদ্ধ জাহাজ তৈরি করেছে খুলনা শিপইয়ার্র্ড। চীনের সহায়তায় মাত্র ২ বছরে এই জাহাজ নির্মিত হয় বাংলাদেশে। জাহাজ নির্মাণশিল্পের পথিকৃৎ হিসেবে খুলনা শিপইয়ার্ড ক্রমেই এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে। এছাড়া বাংলাদেশে বেসরকারী খাতে প্রায় অর্ধশতাধিক শিপইয়ার্ড এবং শতাধিক মেরিন ওয়ার্কশপ সক্রিয় রয়েছে। শিপইয়ার্ডগুলোর ৭০% ঢাকা এবং এর আশপাশে অবস্থিত, ২০% চট্টগ্রামে এবং ১০% খুলনা ও বরিশালে অবস্থিত। দেশের প্রায় সকল অভ্যন্তরীণ এবং সমুদ্র উপকূলীয় জাহাজ এই সব শিপইয়ার্ডে নির্মাণ এবং মেরামত হয়ে থাকে। স্থানীয় চাহিদা পুরণের জন্য এসব শিপইয়ার্র্ড ৩৫০০ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজের ডিজাইন তৈরি এবং নির্মাণ করে থাকে। বছর প্রতি নতুন নির্মিত জাহাজের সংখ্যা গড়ে ২৫০। ইতোমধ্যে দেশের বেশ কিছু শিপইয়ার্ড ১০০০০ টন ধারণক্ষমতা সম্পন্ন জাহাজ তৈরি করার ক্ষমতা অর্জন করেছে। বর্তমানে এই শিল্পে প্রায় ৫০০০০ দক্ষ এবং ১০০০০০ আধাদক্ষ কর্মী নিয়োজিত রয়েছে। দেশে আনুমানিক ১০০০০ টন ক্ষমতার আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন জাহাজ তৈরির ক্ষমতা সম্পন্ন প্রায় ১১টি স্থানীয় শিপইয়ার্ড রয়েছে। অর্থনীতিবিদদের ধারণা, জাহাজ শিল্প হতে পারে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের অন্যতম খাত। এ শিল্পের মাধ্যমে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করাও সম্ভব। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দেশের উজ্জ্বল ভাবমূর্তি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারে এ শিল্পটি। ইতিমধ্যে বাংলাদেশের জাহাজ শিল্প উন্নত বিশ্বের দেশগুলোরও দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছে। ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আসছে জাহাজ নির্মাণের কার্যাদেশ। জাহাজ নির্মাণ শিল্প সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তৈরি পোশাক শিল্পের মতো আরও একটি প্রধান রফতানি খাতে পরিণত হয়েছে। বাংলাদেশের জাহাজ এখন জার্মানি, নেদারল্যান্ডসসহ উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতেও রফতানি হচ্ছে। এদেশে তৈরি জাহাজ আন্তর্জাতিক মান স্পর্শ করতেও সক্ষম হয়েছে। যুদ্ধজাহাজ তৈরিরও কৃতিত্ব দেখিয়েছে বাংলাদেশের একটি ডকইয়ার্ড। বিশ্বের বিভিন্ন অংশে গুণগত মানসম্পন্ন পণ্য রফতানির মাধ্যমে গত ৫ বছরে বাংলাদেশের শিপবিল্ডিং ইন্ডাস্ট্রি মোট ৩৫টি জাহাজ রফতানির মাধ্যমে ১৯০ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা আয় করেছে। ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ উন্নত দেশের কাতারে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছে। সেজন্য টেকসই উন্নয়নের বিকল্প নেই। বর্তমান সময়ের সবচেয়ে আলোচিত ইস্যু হচ্ছে টেকসই উন্নয়ন। পৃথিবীর সব উন্নত দেশ তাদের শিল্পায়ন ও নগরায়নের জন্য টেকসই প্রযুক্তিকে বেছে নিচ্ছে। বাংলাদেশেও এখন টেকসই উন্নয়নকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। উৎপাদন, বিপণন ব্যবস্থার আধুনিকায়নসহ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের দ্বারপ্রান্তে এসে বিশ্বের দেশগুলোর পাশাপাশি শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ ও এগিয়ে চলছে শিল্পবিপ্লবের সুফল কাজে লাগাতে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে বাস্তবায়ন করছে বেশকিছু অগ্রাধিকার প্রকল্পের কাজ। এগুলো হলো পদ্মা সেতু প্রকল্প, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, মেট্রোরেল, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র, মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্র, পায়রা সমুদ্র বন্দর, পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগ, এলএনজি টার্মিনাল, ঘুনধুমে ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণ প্রকল্প। শেখ হাসিনার দূরদর্শী নেতৃত্ব, টেকসই উন্নয়ন, প্রযুক্তি অনুগামী শিল্পায়ন, গ্রীন ক্লিন এনার্জি ও বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিতে ব্যাপক অগ্রগতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এনজিও গ্লোবাল সামিট অব উইমেন বাংলাদেশ এবং সমগ্র এশিয়া, প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে নারী শিক্ষা ও নারী উদ্যোক্তাদের কর্মকাণ্ড প্রসারে অভূতপূর্ব নেতৃত্ব প্রদানের স্বীকৃতিস্বরূপ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গ্লোবাল ওমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেছে। এমতাবস্থায় গত ১৯ এপ্রিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা শোনা গেল। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টাইম ম্যাগাজিনের করা বিশ্বের প্রভাবশালী ১০০ ব্যক্তিত্বের মধ্যে আছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। টাইম ম্যাগাজিনে লেখা হয়েছে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের নেতৃত্ব দেয়া পিতার উত্তরাধিকার বয়ে চলা হাসিনা কখনও সংগ্রামকে ভয় পান না। বিশ্ব নেতৃবৃন্দের আশা অচিরেই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ উন্নত সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হবে। (সমাপ্ত) লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক [email protected]
×