ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

মীর আবদুল আলীম

অভিমত ॥ পাহাড়ে অবৈধ বসতি

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১৩ মে ২০১৮

অভিমত ॥ পাহাড়ে অবৈধ বসতি

পাহাড় ধসে মানুষ মরলে নীতিমালা হয়, তদন্ত কমিটি হয়, তদন্ত কমিটি সুপারিশ পেশ হয়, কিন্তু তা কার্যত আর বাস্তবায়ন হয় না। ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানির পর ৩৬টি সুপারিশ বাস্তবায়নের কথা বলা হয়। কিন্তু গত ১১ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। অথচ সুনির্দিষ্ট নীতিমালার বাস্তবায়ন ও রাজনৈতিক সদিচ্ছায় পাহাড় ধসে হতাহত কমিয়ে আনা অতি সহজ কাজ। কিন্তু এ সহজ কাজটা কে করবে? পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসকারীদের আবাসনের ব্যবস্থা নিশ্চিত করার বিষয়টি প্রথম থেকেই উঠে এসেছে। এরপরও স্থায়ী কোন সমাধান হয়নি। ছিন্নমূল মানুষের কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় তারা ঝুঁকিপূর্ণ জায়গায় বসবাস করছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্থানীয় এবং রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ব্যক্তিরাই অবৈধভাবে এসব ঘর তৈরি করে দরিদ্র লোজজনকে ভাড়া দিচ্ছেন। যেহেতু এর সঙ্গে আর্থসামাজিক এবং রাজনৈতিক প্রক্রিয়া জড়িত, সেজন্য চাইলেও তাদের সেখান থেকে সরিয়ে নেয়া যাচ্ছে না। বড় ধরনের হতাহতের ঘটনা ঘটলেই নীতি নির্ধারণ পর্যায়ে ক’দিন হম্বিতম্বি হয়। পরে অনেক ক্ষেত্রেই তা স্তিমিত হয়ে যায়। ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে ১২৭ জনের প্রাণহানির পর সবাই নড়ে চড়ে বসেছিল। ঐ ঘটনার পর তদন্ত কমিটি যে সুপারিশ দিয়েছে তা ১১ বছরেও তা বাস্তবায়ন হয়নি। এরপরও বিভিন্ন সময় পাহাড় ধসের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু টনক নড়ছে না। প্রশাসন সব জানে। অজ্ঞাত কারণে তারা চুপ থাকে। আর এই নীরবতাই মানুষের জীবন কেড়ে নিতে সহায়তা করে। একের পর এক পাহাড় চাপা পড়ে জানমালের ক্ষয়ক্ষতির ঘটনায় পাহাড় ব্যবস্থাপনায় আমাদের অক্ষমতাকেই প্রকাশ করছে। বিগত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম, বান্দরবান, রাঙ্গামাটি, কক্সবাজারসহ অন্যান্য পাহাড়ী এলাকায় ভূমিধসে প্রায় সহস্রাধিক ব্যক্তির মৃত্যুর খবর আমরা পত্রিকা মারফত জেনেছি। ফি বছর ধরে ভয়াবহ নিশ্চিত দুর্ঘটনায় এমন কর”ণ মৃত্যুকে স্বাভাবিকভাবে মেনে নেয়া যায় না। চট্টগ্রাম মহানগরীতে ২০০৭ সালের ১১ জুলাই শিশু, নারীসহ ১২৭ জনের প্রাণহানি ঘটে। পরের বছর লালখান বাজার এলাকায় পাহাড় ধসে ১১ জনের মৃত্যু হয়। ২০০৯ ও ২০১০ সালে মারা যান ১৫ জন। ২০১১ সালের জুলাই মাসে টাইগারপাস এলাকায় পাহাড় ধসে ১৭ জনের মৃত্যু হয়। একই বছর আগস্টে বিশ্বব্যাংক কলোনিতে ২ জনের মৃত্যু হয়। ২০১২ সালে ২৩ জনের প্রাণহানি ঘটে। ২০১৩ সালে মারা যান ৫ জন। ২০১৫ সালের ১৮ জুলাই বায়েজিদ থানাধীন আমিন কলোনিতে পাহাড় ধসে তিনজনের মৃত্যু হয়। এর দুই মাস পর ২১ সেপ্টেম্বর একই থানাধীন মাঝিরঘোনা এলাকায় পাহাড় ধসে মা-মেয়ের মৃত্যু ঘটে। ২০১৫ সালের ১৯ জুলাই মারা যায় ৫ শিশুসহ ৬ জন। সর্বশেষ ২০১৭ সালে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসে মারা যান আরও ১৭ জন। এবারের বর্ষা প্রায় আসন্ন। তার আগেই এই ধরনের দুর্ঘটনা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরী। নিয়তির জালেই যেন পাহাড়ের মানুষের জীবন বন্দী। কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করে মৃত্যুকূপ থেকে পাহাড়ের মানুষকে রক্ষা করা হবে। এছাড়া বন্ধ হয়নি পাহাড় কাটার আশঙ্কা কিংবা বন উজাড়ের ঘটনা। পাহাড় হন্তারকদের পাহাড় কাটা থেকে বিরত করা যায়নি। অন্যদিকে প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশনের কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারীর লোভাতুর কর্মকর্তাদের সহায়তায়ই পাহাড়ের পাদদেশে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস অব্যাহত রাখছে এক শ্রেণীর দালাল। আর বিলম্ব নয়, এবারের বর্ষার আগেই পাহাড়ের পাদদেশ থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসতিদের আবাসন নিশ্চিত করে তাদের নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হোক। লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক
×