ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

স্বপ্ন পূরণের গৌরব

প্রকাশিত: ০৫:৫৯, ১৩ মে ২০১৮

স্বপ্ন পূরণের গৌরব

আমাদের মাতৃভূমি বাংলাদেশকে নিয়ে বিদেশীরা নানা সময়ে নানা ব্যঙ্গ-বিদ্রƒপ করেছে। তলাবিহীন ঝুড়ি আর বন্যা-মারী-দুর্ভিক্ষের দেশ হিসেবেও প্রচার করা হয়েছে। এ দেশের নাগরিকরা দরিদ্রÑ এমন একটি তাচ্ছিল্যও করা হয়েছে নানা সময়ে নানা দেশে। কিন্তু বাংলাদেশ যে একের পর এক উন্নতি করে চলেছে, তার সোনার সন্তানরা দেশের বাইরেও সুনামের সঙ্গে পেশাগত দায়িত্ব পালন এবং নতুন নতুন সব সৃজনশীল ও উদ্ভাবনী ক্ষমতা দেখিয়ে চলেছে, সেটি সাম্প্রতিক বছরগুলোতে একটু একটু করে প্রচারিত হচ্ছে। এখন আমাদের প্রধানমন্ত্রী কোন আন্তর্জাতিক সম্মেলনে ভাষণ দিলে সেটিও উন্নত সব দেশে আলোচিত ও প্রশংসিত হয়। বাংলাদেশের এ অগ্রযাত্রায় এক অনন্য অর্জন হলো মহাকাশে কৃত্রিম উপগ্রহের উৎক্ষেপণ। শুক্রবার ১১ মে গভীর রাতের পর থেকে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় আরও একটি গৌরবের অংশীদার হতে পারল। এখন মহাকাশে বাংলাদেশের একটি স্যাটেলাইট রয়েছে। সেই স্যাটেলাইটের নাম আবার দেশটির স্থপতি মহান নেতা বাঙালীর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের নামে। সব মিলিয়ে এ এক মহাশুভক্ষণ গোটা জাতির জন্যে। এ এক ঐতিহাসিক ঘটনা। বিশ্বের ৫৭তম দেশ হিসেবে স্যাটেলাইটের অভিজাত ক্লাবে যুক্ত হলো বাংলাদেশের নাম। দীর্ঘদিনের স্বপ্ন সফলভাবে পূরণের জন্য দেশবাসী নিঃসংকোচে বিশেষ গৌরব বোধ করতেই পারে। আমাদের স্যাটেলাইটটি মহাকাশে উড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রবাসে অবস্থানকারী বাংলাদেশের সকল মানুষের মর্যাদাও উর্ধগামী হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ফ্রান্স ও বাংলাদেশ যৌথভাবে স্যাটেলাইটটি পর্যবেক্ষণের কাজ করবে। পরে এর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে বাংলাদেশের হাতেই। এজন্য দেশের দুটি স্থানে ভূমি থেকে নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাসম্পন্ন স্টেশন তৈরি হয়েছে, যার চালিকাশক্তি হবেন দেশেরই বিজ্ঞানী ও কর্মীবৃন্দ। মহাকাশে উৎক্ষেপিত এ স্যাটেলাইট বা কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে বাংলাদেশ নানাভাবে উপকৃত হবে। স্যাটেলাইটের সক্ষমতা বিক্রি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও সাশ্রয় সম্ভব। এতকাল সরকারী ও বেসরকারী পর্যায়ে আমদের অন্য দেশের কৃত্রিম উপগ্রহ ব্যবহারের সুবিধা কিনতে হতো বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে। এছাড়া স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইন্টারনেট ও টেলিযোগাযোগ সেবার সম্প্রসারণ করা সম্ভবপর হবে। এ ধরনের স্যাটেলাইটের আরেকটি সুবিধা হলো দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলা ও ব্যবস্থাপনায় কার্যকর ভূমিকা রাখা। জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করার কাজেও এ স্যাটেলাইটকে কাজে লাগানো যাবে। ঝড় বা বড় ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময়ে মোবাইল নেটওয়ার্ক অচল হয়ে পড়ার আশঙ্কা থাকে। কোন কোন ক্ষেত্রে এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছে দেশের বিভিন্ন এলাকার অধিবাসী। এমন পরিস্থিতিতে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু রাখা সম্ভব হয়ে থাকে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট থেকে এ ধরনের উপকার মিলবে বলে আশা করা যায়। এছাড়া সুবিধাবঞ্চিত অঞ্চলের মানুষের ইন্টারনেট ও ব্যাংকিং সেবা, টেলিমেডিসিন ও দূরনিয়ন্ত্রিত শিক্ষাব্যবস্থা প্রসারেও ব্যবহার করা যাবে এ স্যাটেলাইট। অর্থাৎ এই স্যাটেলাইট দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক সহায়ক ভূমিকা রাখবে। বঙ্গবন্ধু-১ স্যাটেলাইট কেবল যে বাংলাদেশের মাথা বিশ্বসভায় উঁচু করে দিয়েছে কিংবা এটি থেকে অনেক অতীব প্রয়োজনীয় সুবিধা প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে এমনটি নয়। একই সঙ্গে এই ঐতিহাসিক ঘটনা বিজ্ঞানচেতনায় পিছিয়ে থাকা একটি জাতিকে বিজ্ঞান শিক্ষার আবশ্যকতা বিষয়েও সচেতন করার পথ প্রসারিত করেছে। সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে বাংলাদেশের সুনাম সীমানা অতিক্রম করেছে বহুকাল আগেই। আশা করা যায় আগামীতে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও কারিগরি চর্চায়ও দেশ যথেষ্ট উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে প্রশংসিত হবে।
×