ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

যাত্রী নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও যৌন হয়রানি ঠেকাতে বাসে ৯৯৯ থাকতে হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৩ মে ২০১৮

যাত্রী নিরাপত্তা বৃদ্ধি ও যৌন হয়রানি ঠেকাতে বাসে ৯৯৯ থাকতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ যাত্রী নিরাপত্তা বাড়ানো এবং যৌন হয়রানি ঠেকাতে গণপরিবহনে জরুরী সেবার জাতীয় হেল্পডেস্ক নম্বর ৯৯৯ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ, বিআরটিএ। এছাড়া প্রতিটি বাসের ভেতরে ওই বাসের নম্বর দৃশ্যমান রাখতে হবে। এ বিষয়ে বিআরটিএকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মোঃ নজরুল ইসলাম। বুধবার তিনি এ বিষয়ে গণমাধ্যমকে বলেন, এ বিষয়ে বিআরটিএকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। তিনি জানান, আমরা বিআরটিএকে বলেছি, বাসের ফিটনেস সার্টিফিকেট দেয়া এবং নবায়নের সময় বিষয়টি যেন নিশ্চিত করা হয়। এছাড়া তারা বিভিন্ন বাসে ৯৯৯ নম্বরটি লাগিয়ে দেবে। এটা যেহেতু একটি জাতীয় হেল্পলাইন, যাত্রীরা যদি কোন সমস্যায় পড়েন, তাহলে তারা এই নম্বরে ফোন করতে পারবেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিআরটিএ সচিব মুহাম্মদ শওকত আলী বলেন, দুদকের শুনানির ফলোআপ হিসেবে গত সপ্তাহে একটা বৈঠক হয়েছিল। সেখানে সচিব মহোদয় গণপরিবহনের ভেতরে ট্রিপল নাইন নম্বরটি বসিয়ে দেয়ার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, এটা দিলে মানুষ তাদের অভিযোগ তাৎক্ষণিকভাবে জানাতে পারে। শওকত আলী বলেন, বাসের ভেতরে দৃশ্যমান স্থানে যদি এই নম্বরটা বসিয়ে দেয়া যায়, তখন যাত্রীরা বিশেষ করে মহিলা বা যারা হয়রানির শিকার হন, তারা তাৎক্ষণিকভাবে অভিযোগ জানাতে পারবেন। এছাড়া বাসের ভেতর ওই বাসের নম্বর থাকলে সহজেই বাসটি শনাক্ত করা সম্ভব হবে। কবে থেকে গণপরিবহনে এই নম্বর লেখার কাজ শুরু হবে জানতে চাইলে বিআরটিএর উপ-পরিচালক মাসুদ আলমের সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন মুহাম্মদ শওকত আলী। মাসুদ আলম জানান, তারা এখনও এ বিষয়ে কাজ শুরু করেননি। এটা নিয়ে একটা আলোচনা চলছে আমাদের হেড অফিসে। মৌখিক নির্দেশনা পেয়েছি। তবে এখনও এটা নিয়ে আমরা কাজ শুরু করিনি। কিন্তু এটা হবে শিওর। বিআরটিএ কর্মকর্তারা বলেন, গণপরিবহনে যৌন হয়রানির বেশ কিছু অভিযোগ ওঠার প্রেক্ষাপটে গত ৩০ এপ্রিল বিআরটিএর সেবা নিয়ে দুদকের গণশুনানিতেও বিষয়টি আসে। এরপর সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ থেকে এ বিষয়ে নির্দেশনা দেয়া হয়। গত বছর ২৫ অগাস্ট চলন্ত বাসে ধর্ষণের পর এক তরুণীকে হত্যা করে টাঙ্গাইলের মধুপুরে লাশ ফেলে যায় চালক ও তার সহকারীরা। এরপর গত ২১ এপ্রিল উত্তরা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীকে বাসের ভেতর যৌন হয়রানির অভিযোগ ওঠে। পরে তুরাগ পরিবহনের বাসের চালক, হেলপারসহ তিনজনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ৫ মে চট্টগ্রামে বেসরকারী প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে বাসে চালক ও সহকারী যৌন হয়রানি করেছেন বলে অভিযোগ উঠে। ওই বাসের চালক এবং তার সহকারীকে ধরে পুলিশে দেয় শিক্ষার্থীরা। ১০ মে ঢাকার শ্যামলীতে আরেকটি বাসে যৌন হয়রানির শিকার হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। ওই শিক্ষার্থীর সহপাঠীরা চালকের সহকারীকে পুলিশের হাতে তুলে দেন। পুলিশের টেলিকমিউনিকেশন এ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলজি (টিএ্যান্ডআইএম) বিভাগের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মোর্শেদুল আনোয়ার খান গণপরিবহনে হেল্পডেস্ক নম্বর ৯৯৯ প্রদর্শন বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, জনগণের সহায়তার জন্যই এ নম্বর চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশের যে কোন নাগরিক যে কোন প্রান্ত থেকে ৯৯৯ এ ফোন করলে সাহায্য পাবেন। বিশেষ করে জরুরী পুলিশী সহায়তা, অগ্নিনির্বাপণ ও এ্যাম্বুলেন্স- এই তিনটা সহায়তার জন্যই তো এই নম্বর চালু হয়েছে। ‘এই নম্বরটা যদি কেউ নাগরিকদের সুবিধার জন্য বিভিন্ন জায়গায় প্রদর্শনের ব্যবস্থা করেন, তাহলে তো ভালই। সেখান থেকে কল এলে আমরা সহায়তা করবই। নাগরিকদের সহায়তা করার জন্যই তো এ প্রতিষ্ঠান। আমরা বিআরটিএর উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। আমরাও চাই, এ বিষয়ে আরও ব্যাপক প্রচার হোক। বাংলাদেশের সবাই এই নম্বর জানুক, উপকৃত হোক। এখানেই এ উদ্যোগের স্বার্থকতা।’ ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ পুলিশ এই কল সেন্টার সেবা চালু করে। সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা চালু থাকে এ কল সেন্টার। ৯৯৯ নম্বরে কল করলে কোন টাকা খরচ হয় না।
×