ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশকে কব্জায় নেয়ার চেষ্টা

নির্বাচন সামনে রেখে নীলনক্সা বাস্তবায়নে বিরোধীরা মাঠে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৩ মে ২০১৮

নির্বাচন সামনে রেখে নীলনক্সা বাস্তবায়নে বিরোধীরা মাঠে

তপন বিশ্বাস ॥ আবার ষড়যন্ত্র। আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নীলনক্সা বাস্তবায়নে এবার সিভিল প্রশাসনের পাশাপাশি পুলিশকে কব্জায় রাখতে কাজ শুরু করেছে সরকারবিরোধী শক্তি। ইউএনও, ডিসির পাশাপাশি পুলিশের গুরুত্বপূর্ণ পদে তাদের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের বসাতে উঠেপড়ে লেগেছে। পাশাপাশি আস্থাভাজনদের বিভিন্ন কৌশলে সরকারের চোখে অপরাধী প্রমাণ করে ওএসডি করে রাখা এমনকি পদোন্নতি বঞ্চিতও করা হচ্ছে। সিভিল প্রশাসনের চেয়ে এবার পুলিশ প্রশাসনের ওপর তারা বেশি নজর দিয়েছে বলে সরকারের গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে। ডিসেম্বরে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ষড়যন্ত্র অব্যাহত রয়েছে। বিগত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দেশের বড় একটি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়নি। তারা মনে করেছিল নির্বাচনে অংশ না নিলে আন্তর্জাতিক চাপে সরকার পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে। তা ছাড়া নির্বাচন তারা প্রতিহত করতে পারবে। সে লক্ষ্যে দেশে ব্যাপক অরাজকতাও সৃষ্টি করে তারা। শুরু হয় জ্বালাও-পোড়াও। সাধারণ মানুষকে পুড়িয়ে মারাসহ নানাবিধ ক্ষতি সাধন করা হয়। এক পর্যায়ে পুলিশকেও টার্গেট করে হামলা চালানো হয়। হেফাজতের আন্দোলনও হয়। কিন্তু সব আন্দোলন পুলিশ ব্যর্থ করে দেয়। সরকারের কঠোর অবস্থানে এবং পুলিশের দায়িত্বশীল ভূমিকায় তারা প্রতিক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়। শত বাধাবিপত্তির মধ্যে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বাচন সম্পন্ন করে। নির্বাচনের পর কিছুটা হলেও আন্তর্জাতিক চাপ ছিল। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকল চাপ কাটিয়ে দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট থাকেন। একের পর এক সাফল্যে দেশকে এগিয়ে নিয়ে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের রোল মডেল। সূত্র জানায়, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকার বিরোধীরা নীলনক্সা বাস্তবায়নে আরও আগে থেকে মাঠে নেমে পড়েছে। নির্বাচনের সময় ক্রমান্বয়ে ঘনিয়ে আসছে। আবার বিরোধী শিবির দুর্বল হয়ে পড়ছে। যুদ্ধাপরাধীর বিচারসহ সরকারের নানাবিধা কর্মকা-ে জামায়াত-শিবির ইতোমধ্যে কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। প্রকাশ্যে তাদের মাঠে নামাও কঠিন হয়ে পড়েছে। সরকারের সঙ্গে বিরোধীরা এখনও সমঝোতায় আসেনি বা আসারও কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। এ অবস্থায় নির্বাচন প্রতিহত করাই তাদের লক্ষ্য। আর নির্বাচন প্রতিহত করতে তাদের সবচেয়ে বড় বাধা পুলিশ প্রশাসন। যে কারণে এই প্রশাসন তাদের হাতের মুঠোয় নেয়ার লক্ষ্যে বেশ কিছুদিন ধরে তারা কাজ করে যাচ্ছে। এ লক্ষ্যে সরকারবিরোধী মনোভাবাপন্ন এবং তাদের আস্থাভাজন পুলিশ কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করে তাদের পদোন্নতি দেয়ানোর পাশাপাশি সরকারের অতি আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের বিভিন্ন অজুহাতে সরকারের নেকনজরের বাইরে নেয়া, পদোন্নতি বঞ্চিত করাসহ বিভিন্ন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। ইতোপূর্বে ১৫ কর্মকর্তাকে ডিআইজি হিসেবে পদোন্নতি দেয় সরকার। এর অধিকাংশই সরকারবিরোধী কর্মকর্তা। ওই দফায় সরকারের আস্থাভাজন কর্মকর্তাদের খোঁড়া অজুহাতে বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সামনে আসছে আবারও ডিআইজি, অতিরিক্ত আইজিপি পদে পদোন্নতি। এতেও একইভাবে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের কর্মকর্তাদের বঞ্চিত করার প্রক্রিয়া চলছে। এই কাজে ব্যাপক অর্থ বিনিয়োগ করার খবর পেয়েছে গোয়েন্দারা। অতিরিক্ত আইজি পদে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত করতে সরকারের আস্থাভাজন এবং মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের এক কর্মকর্তাকে নারী কেলেঙ্কারি দিয়ে ওএসডি করিয়ে রাখা হয়েছে। সিলেটে ডিআইজি ও পুলিশ কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জামায়াত-শিবিরের অসংখ্য আস্তানা ধ্বংস করা, ৬৩ জেলায় একযোগে বোমা হামলার হোতা লুৎফরকে গ্রেফতারসহ দুই শতাধিক জামায়াত-শিবিরের জঙ্গীকে আটক করায় এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে তাকে ওএসডি করিয়ে রেখেছে। এ জাতীয় কর্মকর্তা নির্বাচনের সময় বিশেষ ভূমিকা রাখবে বলে তাকে ফাঁসাতে মোটা অঙ্কের টাকা বিনিয়োগ করেছে। সূত্র জানায়, বর্তমান পুলিশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ পদে রয়েছেন সরকার বিরোধী মনোভাবাপন্ন কর্মকর্তারা। ইতোপূর্বে তারা ভোল পাল্টিয়ে সুকৌশলে সরকারের আস্থাভাজন বনে যান। এক বড় বিভাগের ডিআইজি রয়েছেন জামায়াত পন্থী এক পুলিশ কর্মকর্তা। চারদলীয় জোট সরকারের আমলে তিনি মতিউর রহমান নিজামীর জেলার এসপি ছিলেন। আর ওই জেলা এসপি হয়েছিলেন নিজামীর ডিও’র ভিত্তিতে; যা রেকর্ডে রয়েছে। এ জাতীয় কর্মকর্তারাও সরকারের আস্থাভাজন বনে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন রয়েছেন। আসন্ন নির্বাচনে এই সকল কর্মকর্তার নির্দেশে পুলিশ কাজ করবে। পাশাপাশি সরকারে প্রকৃত আস্থাভাজন কর্মকর্তারা থাকছেন কম গুরুত্বপূর্ণ পদে। এমনকি কোন কোন ক্ষেত্রে ওএসডিও হয়ে থাকতে হচ্ছে। সূত্র জানায়, সিভিল প্রশাসনে ডিসি পদের ওপর তারা বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে ডিসি ফিটলিস্টে মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের কর্মকর্তাদের বাদ দিতে বোর্ডে অধিকসংখ্যক কর্মকর্তা একাট্টা ছিলেন। ডিসি ফিটলিস্ট করার বোর্ডের ছয় কর্মকর্তার মধ্যে চার কর্মকর্তাই ছিলেন সরকারবিরোধী মনোভাপন্ন। এই তালিকায়ও অধিকাংশ সরকারবিরোধী কর্মকর্তারা স্থান পান। মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের কর্মকর্তাদের পেলে এই বোর্ড পুরনো এবং অখ্যাত কবির কবিতা মুখস্থ বলতে বলেন; যার সঙ্গে ডিসিগিরি করার কোন সম্পৃক্ততা থাকার কথা নয়। এই সকল কর্মকর্তা এতটাই সংঘবদ্ধ যে তাদের আটকাতে দুই-এক কর্মকর্তার পক্ষে সম্ভব নয়। সূত্র জানায়, আসন্ন নির্বাচনের আগে পুলিশ ও প্রশাসনে আরও কিছু ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। সরকারের অতি আস্থাবান আরও কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হতে পারে। ষড়যন্ত্র করে তাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের বাইরে রাখাই এই মুহূর্তে তাদের মূল লক্ষ্য। এতে অধিকাংশের বিরুদ্ধে তদন্তে তেমন কোন অভিযোগ প্রমাণিত না হলেও একের পর এক অভিযোগ দিয়ে তাদের আটকে রাখবে।
×