ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কোটা আন্দোলন খালেদার মুক্তির দাবিতে পরিণত করার ছক

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১৩ মে ২০১৮

কোটা আন্দোলন খালেদার মুক্তির দাবিতে পরিণত করার ছক

শংকর কুমার দে ॥ প্রধানমন্ত্রী কোটা বাতিলের ঘোষণা দেয়ার পর কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলন আবারও উত্তপ্ত হয়ে ওঠায় নজরদারি শুরু করেছে গোয়েন্দা সংস্থা। গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ওপর কঠোর অবস্থানে যেতে পারে সরকার। কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে সরকারকে বেকায়দায় ফেলে বিরোধী দলের আন্দোলনে পরিণত করে বিএনপি দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে পরিণত করার ছঁক কষছে বলে গোয়েন্দা সংস্থার দাবি। গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, রবিবার কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন দাবিতে দেশের প্রতিটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। তার পরের দিন সোমবার ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশের মহানগরের থানা ও উপজেলা সদরে আগামী সোমবার বিক্ষোভ ডেকেছে বিএনপি। বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের রায় ঘোষণার নির্ধারিত তারিখের আগের দিন বিএনপি এ কর্মসূচী ঘোষণা এবং এর আগের দিন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের বিক্ষোভ কর্মসূচী পালনের ঘোষণার মধ্যে কোন যোগসূত্র আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে গোয়েন্দা সংস্থা। তবে কোটা সংস্কারের আন্দোলন ভিসির বাসভবনে হামলা, অগ্নিসংযোগ, ভাংচুরের মতো সহিংস হলে কঠোর অবস্থানে নেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করে মাঠে থাকবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জানমাল রক্ষার নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি যাতে আয়ত্তের বাইরে চলে না যায় সেই জন্য গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়েছে। তদন্তের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, কোটা সংস্কারের আন্দোলনকে কেন্দ্র করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে হামলা, ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ, লুটপাট ও সন্ত্রাসের তা-বলীলা চালানো, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে মৃত্যু, রগকাটা, লন্ডন থেকে ঢাকায় টেলিফোনের মাধ্যমে উস্কানি দিয়ে নৈরাজ্য ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির মাধ্যমে দেশব্যাপী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটানোর চেষ্টা করা হয়। কোটা ব্যবস্থা বাতিল করার ঘোষণা দিয়ে কোটা আন্দোলনের কারণে যে অস্থিতিশীল ও উত্তপ্ত পরিস্থিতির সৃষ্টির সব বাধা দূর করে দিয়ে কার্যত আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের রবিবারের কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন দাবিতে রবিবার দেশের প্রতিটি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভের ডাক দেয়ার ঘটনাটি অব্যাহত থাকলে তার ধারাবাহিকতায় আবারও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে সংবাদ সম্মেলনে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক নুরুল হক নুর কোটা বাতিলের প্রজ্ঞাপন ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের কর্মসূচীতে হামলার প্রতিবাদে কর্মসূচী ঘোষণা দেন। অপরদিকে বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের রায় ঘোষণার নির্ধারিত তারিখের আগের দিন সোমবার ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশের মহানগরের থানা ও উপজেলা সদরে আগামী সোমবার বিক্ষোভ ডেকেছে বিএনপি। শনিবার সকালে ঢাকার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে জরুরী সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী কর্মসূচী ঘোষণা করে বলেন, খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ১৪ মে সোমবার ঢাকা মহানগরসহ সারাদেশের মহানগরের থানা ও উপজেলা সদরে বিক্ষোভ কর্মসূচী পালন করা হবে। আগামী মঙ্গলবার সুপ্রীমকোর্টের প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে আপীল বিভাগ খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে রায় ঘোষণার তারিখ নির্ধারিত থাকার মধ্যে এই ধরনের কর্মসূচী ঘোষণা করা হলো কেন? শনিবার একই দিনে ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের কর্মসূচী ঘোষণা ও শনিবারই বিএনপির খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিকে আন্দোলন কর্মসূচী ঘোষণার মধ্যে কোন যোগসাজশ আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। পুলিশ ঢাবি ভিসির বাসভবনে সহিংসতার সৃষ্টি করার অভিযোগে দায়ের করা পাঁচটি মামলার তদন্ত করছে। শাহবাগ থানা ও রমনা থানায় দায়ের করা পাঁচটি মামলার তদন্ত করছে পুলিশ, পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট ও ছায়া তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের (ভিসি) বাসভবনে হামলার জন্য শাহবাগ থানায় ৪টি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একটি মামলার বাদী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা এসএম কামরুল আহসান। অপর তিনটি মামলার বাদী পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি ও শাহবাগ থানার পুলিশ। ভিসির বাসায় হামলাকারীদের শনাক্ত করতে পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম কাজ করছে। কোটা সংস্কারের দাবির আন্দোলনকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে বিএনপির নিয়ন্ত্রণে নেয়ার জন্য সেই রাতে ভিসির বাসভবনে হামলার জন্য ছাত্রদল ও ছাত্র শিবির নিজেরা তো মুখোশ পরিহিত অবস্থায় ছিলই, এমনকি ভাড়াটিয়া পেশাদার সন্ত্রাসীদের এনেছিল এই দুইটি ছাত্র সংগঠনের নেতারা। ওই সময়ে এসব ঘটনার কোন কিছুই আঁচ করতে পারেননি কোটার দাবিতে আন্দোলনরত মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীরা। সেই সুযোগে কোটা আন্দোলনকে বেগবান করতে লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্র করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান। কোটা আন্দোলনকে আরও সংগঠিত (অর্গানাইজড) করতে টেলিফোনে কথোপোকথনের মাধ্যমে নির্দেশ দেন বিএনপির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক দলের সভাপতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মামুনকে। অধ্যাপক মামুন নিজেও তারেক রহমানের সঙ্গে কথোপকথনের কথা স্বীকার করেছেন। তবে তার আগেই বিএনপির দলীয় নেতাদের সঙ্গে শলাপরামর্শ করেন তারেক রহমান। টেলিফোনের কথোপকথনের অডিও টেপটি এখন পরীক্ষা করছে গোয়েন্দা সংস্থা। ভিসির বাসভবনে হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত চার জনকে বিভিন্ন মেয়াদের রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদের পর কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ছায়া তদন্ত করছে গোয়েন্দা সংস্থাসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন ইউনিট। কোট সংস্কার আন্দোলনের সময় মৃত্যু ও রগ কাটার মতো উস্কানিমূলক মিথ্যা তথ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেসবুক) প্রচার করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে যারা সহিংস করে তুলেছে তাদেরকে খুঁজে বের করতে তদন্ত করে যাচ্ছে ঢাকা মহানগর পুলিশের সাইবার ক্রাইম ইউনিট। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রী কোটা প্রথা বাতিল ঘোষণা করার পর আবারও ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণা এবং সর্বোচ্চ আদালতে বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের রায় ঘোষণার নির্ধারিত তারিখের আগে তাদের আন্দোলনের কর্মসূচী ঘোষণার মধ্যে তৃতীয় পক্ষের কোন হাত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আন্দোলনের আড়ালে দেশে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করার জন্য তাদের পেছনের উস্কানিদাতা, মদদদাতা, পৃষ্ঠপোষক হিসেবে অশুভ শক্তি কলকাঠি নেড়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করার ষড়যন্ত্র কিনা তা তদন্ত করে দেখছে বলে গোয়েন্দা কর্মকর্তার দাবি।
×