ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আজ মা দিবস

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৩ মে ২০১৮

আজ মা দিবস

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আমাদের মাকে আমরা বলতাম তুমি, বাবাকে আপনি/আমার মা গরীব প্রজার মতো দাঁড়াতো বাবার সামনে/কথা বলতে গিয়ে কখনোই কথা শেষ করে উঠতে পারতো না/আমাদের মাকে বাবার সামনে এতই তুচ্ছ দেখাত যে/মাকে আপনি বলার কথা আমাদের কোনোদিন মনেই হয়নি/আমাদের মা আমাদের থেকে বড় ছিল, কিন্তু ছিল আমাদের সমান/আমাদের মা ছিল আমাদের শ্রেণীর, আমাদের গোত্রের, আমাদের বর্ণের ...। আমাদের মা কবিতায় এভাবেই হুমায়ুন আজাদ প্রকাশ করেছিলেন জননীর প্রতি আপন অনুভব ও ভালবাসা। সন্তানকে মানুষ করতে একজন মা যেন তার জীবনের পুরোটাই দিয়ে যান আত্মত্যাগের খেরোখাতায়। শত যন্ত্রণা ও বেদনা সহ্য করেও সন্তানের সামনে মলিন হয় না জননীর মুখখানি। আজ দিনটি সর্বংসহা সেই মায়েদের জন্য। আজ রবিবার বিশ^ মা দিবস। যদিও সন্তানের প্রতি গর্ভধারিণীর ভালবাসার জন্য কোন বিশেষ দিবসের প্রয়োজন হয় না। তারপরও হয়তো দিবসের সূত্র ধরে বিশ^জুড়ে সন্তানেরা আজও মাকে ভালবাসবে প্রতিদিনের মতো। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে ভিন্ন ভিন্ন তারিখে দিনটি পালন করা হয়। বাংলাদেশে দিবসটি পালিত হয় মে মাসের দ্বিতীয রবিবার। বিশেষ দিনটিকে উপলক্ষ করে মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালবাসা জানাবে তার গর্ভজাত সন্তানরা। ইহজগতের নানাবিধ সম্পর্কের মাঝে মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্কটির নেই কোন তুলনা। মা, আম্মা কিংবা আম্মু যে নামেই ডাকা হোকÑএমন মধুর আর কোন শব্দের সন্ধান মেলে না শব্দকোষে। তাই তো সাম্যের কবি কাজী নজরুল ইসলাম ‘মা’ কবিতায় লিখেছেনÑ যেখানেতে দেখি যাহা/ মা-এর মতন আহা/একটি কথা এত সুধা মেশা নাই/মায়ে মতন এত আদর সোহাগ সে তো/আর কোনখানে কেহ পাইবে না ভাই/ ছিনু খোকা এতটুকু/একটুতে ছোট বুক যখন ভাঙিয়া যেতো, মা-ই সে তখন/ বুকে করে নিশিদিন/ আরাম-বিরামহীন/ দোলা দিয়ে শুধাতেন, কি হলো খোকন?’/.... মা’র বড় কেউ নাই/ কেউ নাই কেউ নাই।/ নতি করি বল সবে ‘মা আমার! মা আমার!’ ১৮৬১ থেকে ১৮৬৪ সাল মার্কিন গৃহযুদ্ধে প্রাণ হারায় লাখো তরুণ-যুবক। সন্তানহারা মায়েরা কেঁদে ফিরে টেক্সাসের পথে পথে। মায়ের বুক খালি করা যুদ্ধ বন্ধের দাবিতে মায়েরাই রাজপথে নামেন। ১৮৭০ সালে জুলিয়া ওয়ার্ড হোই নামের এক মা ঘোষণা করেন মা দিবসের ঘোষণাপত্র। সে ঘটনার ৩৮ বছর পর মার্কিন নারী আনা জার্ভিস মে মাসের ™ি^তীয় রবিবারকে পালন করলেন মা দিবস হিসেবে। এক সময় বিশ^জুড়ে স্বীকৃতি পায় দিবসটি। তবে যতই দিন গড়িয়েছে মা দিবস যেন ততটাই বাণিজ্যিক হয়েছে। সেই প্রেক্ষাপটে একসময় ক্ষুব্ধ হয়ে মা দিবসকে ‘হলমার্ক ডে’ বলতেও ™ি^ধা করেননি আনা জার্ভিস। মাকে কার্ড পাঠিয়ে ভালবাসা প্রকাশ পায় নাÑএ সত্যি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন এই মাতৃরূপী এই নারী। তাই উপহারের পরিবর্তে মাকে প্রতিটি ক্ষণ মনে রাখার কথা বলেছিলেন তিনি। বাংলাদেশে মা দিবস পালনের চল খুব বেশি দিনের নয়। তারপরও ফেসবুকের কল্যাণে এখন সবারই জানা আজ মা দিবস। গত কয়েকদিন ধরেই ফেসবুকের পাতায় পাতায় মা দিবসের ডাক। কিন্তু এভাবে কি মায়ের প্রতি ভালবাসা প্রকাশ পায়? বোধ হয় পায় না। মাকে ভালবাসার জন্য বিশেষ কোন দিনের প্রয়োজন নেই। মায়ের জন্য ভালবাসা প্রতিদিনের। তারপরও দিবস বলে কথা! দিনটি যাদের মনে থাকবে তাদের মধ্যে কাজ করবে মাকে আরও বেশি ভালবাসা বাড়তি এক প্রেরণা। মা দিবস উপলক্ষে প্রতিবছরের মতো এবারও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করেছে বিশেষ নিবন্ধ। টিভি চ্যানেলগুলো প্রচার করছে বিশেষ অনুষ্ঠান। প্রতিবছরের মতো এবারও রত্মগর্ভা মায়েদের সম্মাননা জানাবে আজাদ প্রোডাক্টস।
×