ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই এত বজ্রপাত

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১৩ মে ২০১৮

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণেই এত বজ্রপাত

শাহীন রহমান ॥ এ বছর এপ্রিলের ২৯ তারিখ থেকে শনিবার পর্যন্ত ১৪ দিনের এক হিসেবে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা দেড় শ’ ছাড়িয়েছে। গত তিন দিনে বজ্রপাতে মারা গেছে ৫০ জনের বেশি মানুষ। কালবৈশাখী শুরুর পর থেকেই প্রতিদিনই বজ্রপাতে কোথাও না কোথাও মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। এক হিসেবে দেখা গেছে বিশ্বে বজ্রপাতে মৃত্যুর সংখ্যা বাংলাদেশেই সবচেয়ে বেশি। গত ৮ বছরে মৃত্যুর সংখ্যা ২ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। প্রতি বছরই গড়ে এখানে ২৫০ জনের মৃত্যু হচ্ছে শুধুমাত্র বজ্রপাতের কারণে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন ভৌগলিক অবস্থানের কারণেই বাংলাদেশে বজ্রপাতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। একই কারণে বছরে গড়ে বজ্রপাতের ঘটনা ৩ হাজার ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এ বছর শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে কালবৈশাখীর প্রকোপ বাড়ছে। গত মার্চ থেকে কালবৈশাখীর সঙ্গে প্রায় প্রতিদিনই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে। মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া যাচ্ছে প্রতিদিনই। এখনও অব্যাহত রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এখানে এপ্রিল মে মাসেই বজ্রপাতের ঘটনা বেশি হয়। তবে গবেষণায় বেরিয়ে এসেছে শীত মৌসুম বাদে প্রায় সারা বছরই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে। গত বছর নবেম্বর পর্যন্ত বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে দেশে। কেন বিশ্বের অন্যান্য দেশের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে এ বিষয়ে আগে তেমন বেশি গবেষণা না হলেও সম্প্রতি এই বিষয় নিয়ে দেশে গবেষণা চলছে। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. এমএ ফারুখ সম্প্রতি তার এক গবেষণায় উল্লেখ করেছেন দেশের একদিকে বঙ্গোপসাগর এবং ভারত মহাসাগরের অবস্থান। সেখান থেকে গরম এবং আদ্র বাতাস দেশের ভেতরে প্রবেশ করছে। আর উত্তরে হিমালয়ের অবস্থান। সেখান থেকে আসছে ঠা-া বাতাস। এই দুই বাতাসের সংমিশ্রণে বজ্রপাতের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হচ্ছে। শীতের পর বঙ্গোপসাগর থেকে উষ্ণবাতাস আসতে শুরু করে। অন্যদিকে মিহলায় থেকে আসে ঠা-া বাতাস। দক্ষিণের গরম হাওয়া আর উত্তরের ঠা-া বাতাসে অস্থিতিশীল বাতাস তৈরি হয়। আর এর থেকে তৈরি হয় বজ্রমেঘের। এ রকম একটি মেঘের সঙ্গে আর একটি মেঘের ঘর্ষণের কারণে সৃষ্টি হচ্ছে বজ্রপাত। বিশেষজ্ঞরা বলছেন এ রকম উচ্চ ভল্টের বৈদ্যুতিক তরঙ্গ যখন মাটিতে নেমে আসে তখন মাটি থেকে উঁচু কোন বস্তুতে আগে আঘাত করে। তবে ভৌগলিক কারণে এখনও বজ্রপাতের ঘটনা বেশি ঘটলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন মূলত সচেতনতার অভাবের কারণেও মৃত্যুর হার বাড়ছে অন্য যে কোন দেশের তুলনায় অনেক বেশি। তারা বলেন, বিশ্বের যে কয়টি অঞ্চলে বজ্রপাত বেশি হয় তার মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া অন্যতম। আর দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে পুরো বাংলাদেশ ভারতের কিছু অংশ এবং নেপালেও বজ্রপাত হয়ে থাকে। তবে দেশের মধ্যে উত্তরাঞ্চল এবং উত্তর পশ্চিমাঞ্চলে বেশি বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে। দেশে গড়ে বছরে এখন বজ্রপাতের ঘটন ঘটছে ৩ হাজারটি। গত ৮ বছরে এ কারণে মারা গেছে দুই হাজারের বেশি মানুষ। প্রতি বছর ২৫০ জনের মৃত্যু হচ্ছে। দেশে অন্য কোন দুর্যোগের এত সংখ্যক মৃত্যুর রেকর্ড নেই। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ে এক হিসাব বলছে ২০১০ সাল থেকে ১৭ সালেই বজ্রপাতে মারা গেছে দেশে ১৮শ’র বেশি মানুষ। বিশেজ্ঞরা বলছেন বজ্রপাতে এত অধিক সংখ্যক লোকের মৃত্যুর ঘটনা বিশ্বে কোথাও নেই। সম্প্রতি দেশে বজ্রপাতের ভয়াবহতা বিবেচনায় নিয়ে এটি জাতীয় দুর্যোগ হিসেবে গণ্য করেছে সরকার। বিশেষজ্ঞরা বলছেন বাংলাদেশ ছাড়াও বিশ্বে ভেনিজুয়েলা ব্রাজিলে বজ্রপাত বেশি হলেও সেখানে মৃত্যুর সংখ্যা অনেক কম। এ ছাড়াও মিয়ানমার নেপাল এবং ভারতেও বজ্রপাত হলেও মৃত্যুর হার বাংলাদেশের চেয়ে অনেক কম। কাজের জন্য কৃষক যখন খোলা মাঠে বা ঘরের বাইরে অবস্থান করেন তখনই বজ্রপাতে বেশি মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। তবে একটু সচেতন হলেই মৃত্যুর হার কমিয়ে আনা সম্ভব বলে তারা মনে করেন। এ ছাড়া দেশের ভেতরে বড় বড় গাছ যেমন তালগাছ বা ওই জাতীয় গাছের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। এ কারণেও মৃত্যুর ঘটনা বাড়ছে। বাংলাদেশ এ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক এফআর সরকার বলেন, আকাশে যে মেঘ তৈরি হয় তার ২৫ থেকে ৭৫ হাজার ফিটের মধ্যে বজ্রপাতে ঘটনা ঘটে বেশি। এ এলাকার মধ্যে দুটি ত্বরিত প্রবাহের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ফিকশন ঘটে। এখানে খাড়াভাবে যে বজ্রপাতে সৃষ্টি হয় তাতে তাপের পরিমাণ থাকে ৩০ হাজার থেকে ৫০ হাজার ডিগ্রী ফারেনহাইট। বজ্রপাতের গতিও প্রতি সেকেন্ডে ৬০ হাজার মিটার বেগে নিচে বা ওপরের দিকে চলে যায়। ফলে এ পরিমাণ তাপসহ বজ্র আওয়াজ মানুষের দেহের ওপর পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই মৃত্যু হওয়া স্বাভাবিক। তারা বলেন, বাসাবাড়িতে যে বিদ্যুত ব্যবহার করা হয় তার ক্ষমতা থাকে ২২০ ভোল্টের মতো। শিল্পকারখানায় প্রায় ১২শ’ ভোল্টের বিদ্যুত ব্যবহার হয়। আর জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুতের ক্ষমতা থাকে ১১ হাজার ভোল্টের মতো। মানুষের দেহে ১১০ ভোল্টের ওপর বিদ্যুতের শক লাগলে মৃত্যু অনিবার্য। ষড়ঋতুর এই দেশে বৈশাখ-জৈষ্ঠ্য মাস ঝড়বাদলের সময় হিসেবে পরিচিত। এ সময়ে আকাশে মেঘ জমলেই কালবৈশাখীর বয়ে যাওয়ার সম্ভবনা বেশি থাকে। সঙ্গে বজ্রসহ বৃষ্টিপাত বেশি হয়ে থাকে। বছরের অন্যান্য সময়ের চেয়ে গ্রীষ্মকাল সময়ে বজ্রপাতের পরিমাণ অনেক বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু সম্প্রতি এ বজ্রপাত বিধ্বংসীরূপ নিয়েছে। বিগত কয়েকদিনের ব্যবধানে দেশে প্রায় অর্ধশত মানুষ মারা গেছে বজ্রপাতের শিকার হয়ে। আহতের পরিমাণও অনেক। বজ্রপাতে মৃতের এ ঘটনা অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি। আবহাওয়া অধিদফতরের সাবেক পরিচালক শাহ আলম বলেন, বিশ্বে উষ্ণায়নের প্রভাবে বজ্রপাতের ভয়াবহতা বাড়ছে। তিনি বলেন, এর ফলে শুষ্ক মৌসুমে দেশের পানির স্তর যেমন নিচে নেমে যাচ্ছে তেমনি নদী নালা খাল বিলের পানিও শুকিয়ে যাচ্ছে। ফলে বায়ু ম-লে উষ্ণতা বেড়ে যাচ্ছে। এর কারণে কালবৈশাখীর ঝড়ও বাড়ছে। বজ্রপাতও বেশি হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়াম-লের তাপমাত্রা যেমন বৃদ্ধি পাচ্ছে, অপরদিকে কার্বনডাইঅক্সাইডের পরিমাণও লক্ষ্যগুণ বেশি। ফলে কার্বনডাইক্সাইডের শোষণ ক্ষমতা একেবারে কমে এসেছে। ক্রমেই পৃথিবীর উষ্ণায়ন বাড়ছে। এ কারণে বজ্রপাত ভয়াবহ রূপ নিতে পারে। শীত শেষে যখন শুষ্ক মৌসুম শুরু হয় তখন দিনের বেলায় সূর্যের তাপে সাগর, নদী, পুকুর, খাল বিলের পানি বাষ্পীভূত হয়ে ওপরে উঠে যায়। এই বাষ্পীভূত পানি আকাশে মেঘসৃষ্টি করে বৃষ্টিপাতের সৃষ্টি করে। সাগর থেকে গরম হাওয়া দেশের ভেতরে প্রবেশ করছে। অপর দিকে হিমালয় থেকে হিমেল হাওয়া দেশের ভেতরে ঢুকে মেঘ তৈরি করছে। উভয় মেঘের সংস্পর্শে এসেই বজ্রপাতের ঘটনা ঘটছে। সূর্যতাপ না থাকায় এবং ঠা-া আবহাওয়ার কারণে রাতের বেলায় বজ্রপাতের ঘটনা খুব কম হয়ে থাকে। আবার শীতপ্রধান এলাকায় কখনও বজ্রপাতের ঘটনা ঘটতে দেখা যায় না। বিশেষ করে গ্রীনল্যান্ড, এন্টার্কটিকা ও সাইবেরিয়া অঞ্চলে ঠা-া আবহাওয়ার কারণে কখনই বজ্রপাত হয় না। আবার যে মেঘে দুটি ত্বরিত প্রবাহের মধ্যে আনুভূমিক সংঘর্ষ হয় তা থেকে সৃষ্ট বজ্রপাতে তেমন কোন ক্ষতি হয় না। বজ্রপাতের আগাম সঙ্কেত দেবে লাইটনিং ডিটেক্টিভ সেন্সর ॥ এ দিকে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। দুর্যোগ ব্যবস্থাপপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বজ্রপাতের ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে এবং আগাম সঙ্কেত দিতে দেশের আটটি স্থানে পরীক্ষামূলকভাবে বজ্রপাত চিহ্নিতকরণ যন্ত্র বা লাইটনিং ডিটেক্টিভ সেন্সর বসানো হয়েছে। ঢাকা আবহাওয়া অধিদফতরের প্রধান কার্যালয় ছাড়াও ময়মনসিংহ, সিলেট, পঞ্চগড়, নওগাঁ, খুলনা, পটুয়াখালী এবং চট্টগ্রামেও এই সেন্সর বসানো হয়েছে। এই যন্ত্রের মাধ্যমে ঝড়-বৃষ্টির সময় কোন জেলায় বজ্রপাত হতে পারে তা সুনির্দিষ্ট করে বলতে পারবে আবহাওয়া অফিস। এমনকী ১০ মিনিট থেকে আধাঘণ্টা আগে বজ্রপাতের সঙ্কেত দেয়া যাবে। এতে ওই এলাকার মানুষ নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ার সময় পাবে। ফলে বজ্রপাতে প্রাণহানি কমে আসবে দেশে। বজ্রনিরোধক ব্যবস্থা নেই রাজধানীর উচ্চ ভবনগুলোতে ॥ দেশের বজ্রপাত বাড়লেও রাজধানীর বড় বড় ভবনগুলোর বজ্রনিরোধক কোন ব্যবস্থা নেই। বিশেষজ্ঞরা বলছেন আবশ্যক হলেও রাজধানীর নব্বই ভাগ ভবনে বজ্রপাত নিরোধক কোন ব্যবস্থা নেই। অথচ বজ্রপাত ঝুঁকি বিবেচনা করেই জাতীয় বিল্ডিং কোডে ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে বজ্রপাত নিরোধক দ- বা আর্থিং বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীর মতে পাকা ভবনে আর্থিং ব্যবস্থা রাখা হলে বজ্রপাতে ঝুঁকি ও প্রাণহানির সংখ্যা অনেক কমানো সম্ভব। কারণ যেসব ভবনে আর্থিংয়ের ব্যবস্থা নেই সেসব ভবনে বজ্রপাতের সময় ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রপাতির ব্যবহার ঝুঁকিপূর্ণ। এ সময় ল্যান্ড ফোনের ব্যবহার থেকে অবশ্যই দূরে থাকবে হবে। প্রয়োজনে ল্যান্ড ফোন বিচ্ছিন্ন করে রাখতে হবে। বড় গাছ কেটে ফেলা এবং পিলার না থাকায় বজ্রপাতে মৃত্যু হচ্ছে বেশি ॥ এ দিকে বিশেষজ্ঞরা বলছেন গত কয়েক দশকে বড় বড় গাছ কেটে ফেলার কারণেও হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটছে বলে তিনি খোলা মাঠে বা বাইরে যেহেতু বজ্রপাতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে বেশি, সেক্ষেত্রে উন্মুক্ত স্থানেও এক ধরনের পিলার বসিয়ে আর্থিংয়ের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ব্রিটিশদের সময় সারাদেশে খোলা জায়গায় এ ধরনের পিলার বসানো হয়েছিল। যেগুলো বজ্রপাতের হাত থেকে রক্ষা করত। এখন তার সবই চুরি হয়ে গেছে। পিলারগুলো ফ্রিকোয়েন্সি অনুযায়ী একটি থেকে আরেকটির দূরত্ব মেপে মাটির নিচে পুঁতে রাখা হয়েছিল। এগুলো পিতল, তামা, লোহা, টাইটেনিয়মসহ ধাতব চুম্বক সমন্বয়ে গঠিত হওয়ায় বজ্রপাতে যে ইলেক্ট্রিক চার্জ তৈরি হয় সেটি সরাসরি এ পিলারগুলো এ্যাবজর্ভ করে আর্থিংয়ের কাজ করত। এতে বজ্রপাত হতো কিন্তু মানুষ মারা যেত না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশে যেসব এলাকায় বজ্রপাতের ঝুঁকি বেশি রয়েছে সেসব এলাকায় এ ধরনের আর্থিংয়ের ব্যবস্থা করে বজ্রপাতে ঝুঁকি কমানো যেতে পারে। তারা বলেন, খেজুরগাছ লাগানো ছাড়াও আর্থিংয়ের মাধ্যমে বজ্রপাত থেকে নিরাপদ থাকা যায়। যে স্থানে বজ্রপাত হবে সেখানে সবচেয়ে উঁচু যে বস্তুটি থাকবে বজ্রপাত মূলত তার ওপর গিয়ে পড়ে। যদি কেউ বজ্রপাতের সময় নদীতে খোলা নৌকায় অবস্থান নেয় তাহলে তার ওপর বজ্রপাত হবে। কারণ সেখানে সে সবচেয়ে উঁচু স্থানে রয়েছে। বজ্রপাতের সময় ঘরের ভেতর থাকা সবচেয়ে নিরাপদ।
×