ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

খুলনায় উত্তেজনার পারদ ছড়িয়ে প্রচারে সরব প্রার্থীরা

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১৩ মে ২০১৮

খুলনায় উত্তেজনার পারদ ছড়িয়ে প্রচারে সরব প্রার্থীরা

স্টাফ রিপোর্টার, খুলনা অফিস ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি) নির্বাচনের দিন যতই এগিয়ে আসছে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ও কর্মী সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে। অপপ্রচার, ভয়ভীতি ও হুমকি প্রদর্শন, নির্বাচনী কাজে বাধা দান, কৌশলে ভোটারদের ওপর চাপ প্রয়োগের অভিযোগ করা হচ্ছে প্রার্থী ও দলের পক্ষ থেকে। বিশেষ করে মেয়র পদের বিএনপির প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ও তার দলের নেতারা সবচেয়ে বেশি অভিযোগ করছেন মেয়র পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের বিরুদ্ধে। বিএনপির নেতারা পুলিশের বিরুদ্ধে দলীয় নেতাকর্মীদের গ্রেফতার হয়রানির অভিযোগ করছেন বারবার। তালুকদার আব্দুল খালেক ও তার দলের নেতারা বিএনপির মেয়র প্রার্থী ও তাদের নেতাদের বক্তব্যের প্রতিবাদও করছেন। আবার কোন কোন ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বী কাউন্সিলর প্রার্থীও একে অপরের বিরুদ্ধে ভয়ভীতি প্রদর্শন, হুমকি ধমকি প্রদানের অভিযোগ করেন। অভিযোগ পাল্টা অভিযোগ, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীকে আক্রমণ করে বক্তব্য দেয়ায় কিছুটা উত্তেজনা সৃষ্টি হলেও সকলেই নির্বাচনী প্রচারে সরব রয়েছেন। মাঝে মাঝে ঝড়-বৃষ্টি হানাতেও মাইকে প্রাচারসহ নির্বাচনীয় কার্যক্রম সমান তালে এগিয়ে চলছে। আগামী ১৫ মে খুলনা সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন। সময় হাতে খুবই কম। যে টুকু সময় পাওয়া যাচ্ছে তা যথাযথভাবে কাজে লাগানোর জন্য মেয়র, সংরক্ষিত ওয়ার্ড ও সাধারণ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থীরা সকলেই এখন ব্যস্ত। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করা হলেও ভোর হতে না হতেই প্রার্থী ও কর্মীরা গণসংযোগে বেরিয়ে পড়েন। সকালে নগরবাসীর ঘুম ভাঙ্গে গণসংযোগে আসা প্রার্থী কিংবা ভোটার স্লিপ নিয়ে আসা প্রার্থীর কর্মীদের কড়া নাড়ার শব্দে। একই প্রার্থীর জন্য ভোটারদের দরজায় বার বার ধর্ণা দেয়া হচ্ছে। রাত ১১টা সাড়ে ১১টায়ও প্রার্থীরা কর্মীদের নিয়ে বাড়ি বাড়ি যাচ্ছেন। তখন কোন বাসার লোকজন হয়তো শুয়ে পড়েছেন। কড়া নাড়ার শব্দে কিছুটা বিরক্তি নিয়ে দরজা খোলার পর প্রার্থী ও কর্মীদের ব্যবহারে বিরক্তি থাকে না। এদিকে বিএনপি স্থানীয় পর্যায়ে সাংগঠনিক অবস্থা আওয়ামী লীগের মতো অতটা মজবুত করতে পারেনি। অবশ্য বিএনপি নেতারা বলছেন, পুলিশী হয়রানি, গ্রেফতার-নির্যাতনের কারণে নেতাকর্মীরা ঠিকমতো কাজ করতে পারছে না। আর দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীরা সকলেই নিজের ভোটের পাশাপাশি ধানের শীষের জন্য ভোট চাইছেন। কিন্তু একাধিক ওয়ার্ডে বিএনপির নেতা কাউন্সিল প্রার্থী রয়েছেন যারা ধানের শীষের পক্ষে ভোট চাইছেন না। প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে তারা নৌকার পক্ষে কাজ করছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। কাউন্সিল প্রার্থী ও নগর বিএনপির এক নেতাকে কয়দিন আগে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কার করা হয়েছে। ২০১৩ সালে অনুষ্ঠিত কেসিসি নির্বাচনে সব ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল প্রার্থীরা নিজের পাশপাশি মেয়র প্রার্থীর জন্য ভোট চাননি। তাছাড়া ওই নির্বাচনে অওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা এবারের মতো এত সংগঠিত ছিল না। এবার নির্বাচনী প্রচারে আওয়ামী লীগ অনেক এগিয়ে রয়েছে। বিএনপি প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন অভিযোগ তুললেও তারা নির্বাচনী লড়াইয়ের জন্য মাঠে রয়েছে। প্রতিদিন মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ মতবিনিময় সভা, পথসভায় অংশ নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় অনেক নেতা খুলনায় অবস্থান নিয়ে তার নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছেন। তালুকদার আব্দুল খালেক ভোর হতে না হতেই গণসংযোগে বেরিয়ে পড়েন। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবেÑ খালেক ॥ কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত ও ১৪ দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আলহাজ তালুকদার আব্দুল খালেক শনিবার সকালে নগরীর ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের মতিয়াখালী ব্রিজ থেকে নির্বাচনী প্রচার শুরু করেন। এরপর শিপইয়ার্ড, মতিয়াখালী মৌজা, মোল্লা বাড়ি, লবণচরা, জিন্নাহপাড়া, বান্ধা বাজার, বোখারী পাড়া, মোক্তার হোসেন রোড সংলগ্নসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, নগরীর অনেক এলাকার মানুষ এখনও পরিপূর্ণ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। তিনি বিজয়ী হলে খুলনা সিটির দরিদ্র মানুষের জন্য সিডিসির পাশাপাশি নতুন প্রকল্প নেয়া হবে। দরিদ্র বস্তিবাসীদের স্যানিটেশন ব্যবস্থা, ড্রেনেজ ব্যবস্থাসহ সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। মেয়র প্রার্থী খালেক বলেন, আমরা কথায় নয় কাজে বিশ্বাসী। একটি দল নির্বাচন এলেই কথার ফুলঝুরি দিয়ে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করে। তারা দীর্ঘদিন মেয়র পদে থেকেও খুলনার মানুষকে কাক্সিক্ষত উন্নয়ন দেখাতে পারেনি। তাদের সময়ে কেসিসিতে অস্থায়ী চাকরি পেতে হলেও ব্যাপক হারে ঘুষ দিতে হয়েছে। তিনি বলেন, নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি করা, ঘুষ, দুর্নীতিমুক্ত কেসিসি গড়া এবং সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জবাবদিহিতার আওতায় আনা আমরা লক্ষ্য। এজন্য তিনি ১৫ মের নির্বাচনে নৌকা প্রতীককে ভোট দিয়ে বিজয়ী করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। গণসংযোগে মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু ॥ কেসিসির নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ও ২০ দলীয় জোট সমর্থিত মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু শনিবার সকালে নগরীর মিয়াপাড়া, মৌলভীপাড়া, দোলখোলা, টিবি বাউন্ডারি রোড, টুটপাড়া ও সংলগ্ন এলাকাসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ করেন। এ সময় তিনি বলেন, সরকার এবং সরকারী দল আতঙ্ক ছড়িয়ে বিএনপিকে মাঠ থেকে সরিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করছে। কিন্তু তাদের কোন অপচেষ্টাই সফল হয়নি ও হবে না। তিনি জনগণের হাতে লিফলেট তুলে দিয়ে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট প্রার্থনা করেন। মঞ্জু পাগলের প্রলাপ করছেনÑ শেখ হারুন ॥ কেসিসি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী তালুকদার আব্দুল খালেকের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হারুনুর রশীদ শনিবার দুপুরে দলীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, তালুকদার আব্দুল খালেকের জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে বিএনপির মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু পাগলের প্রলাপ করছেন। সম্প্রতি তিনি বিভিন্ন ধরনের উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করছেন। তিনি অভিযোগ করেন, বিএনপি নেতা নজরুল ইসলাম মঞ্জু জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। এই শহরের মানুষ তা জানে। তিনি বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর জয় জয়কার দেখে মঞ্জু সাধারণ মানুষসহ রাজনীতিবিদদের জঙ্গী ও সন্ত্রাসী কায়দায় হুমকি দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী খালেকের প্রধান সমন্বয়কারী ও আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য এসএম কামাল হোসেনসহ নির্বাচন সম্পর্কে নানা ধরনের কটূক্তি ও মন্তব্য করছেন বিএনপির প্রার্থী মঞ্জু। শেখ হারুন বলেন, ৭৫’র পরবর্তী সময়ে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে খুলনার ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন এসএম কামাল হোসেন। তখন তিনি খুলনায় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন। গ্রামের বাড়ি হিসেব করলে খুলনা থেকে নজরুল ইসলাম মঞ্জুর বাড়ির চেয়ে এসএম কামালের বাড়ি অনেক কাছে। তিনি অতিথি পাখি বা উড়ে এসে জুড়ে বসেননি। পুলিশ আতঙ্কে কর্মীরাÑ মঞ্জু ॥ খুলনা সিটি কর্পোরেশন-কেসিসি নির্বাচনে বিএনপি মনোনীত ধানের শীষ প্রতীকের মেয়র প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু অভিযোগ করেন ‘বাড়ি থেকে বেরোলেই ডিবি অথবা থানা পুলিশ। গণ গ্রেফতার চলছে। কর্মীরা বাড়িতে ঘুমাতে পারছে না। আত্মগোপনে থেকে গণসংযোগ করতে হচ্ছে। ভোটার স্লিপ বিতরণ করতে দিচ্ছে না পুলিশ। অফিস থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে।
×