ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে না পারলে জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত ॥ ড. রাজ্জাক

নিজেদের লুটপাট আড়াল করতেই বিএনপির হাস্যকর অভিযোগ

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ১৩ মে ২০১৮

নিজেদের লুটপাট আড়াল করতেই বিএনপির হাস্যকর অভিযোগ

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ খালেদা জিয়া ও তাঁর দল বিএনপি নিজেদের লুটপাট ও দুর্নীতি আড়াল করতেই সরকারের বিরুদ্ধে হাস্যকর অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ তুলেছে দাবি করে অবিলম্বে তা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ও সাবেক খাদ্যমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক। তিনি বলেন, এ বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য দিতে না পারলে তাদের (বিএনপির) জাতির কাছে ক্ষমা চাওয়া উচিত। বিএনপির অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের রাজনীতি নতুন নয়। তারা তাদের অতীত অপকর্ম লুকাতে চিরাচরিত অপপ্রচারের আশ্রয় নেয় এখনও নিচ্ছে। শনিবার বিকেলে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার ধানম-ির রাজনৈতিক কার্যালয়ে দলের পক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এমন অভিযোগ করে ড. রাজ্জাক বলেন, সরকারের বিরুদ্ধে দুই লাখ কোটি টাকা লুটপাটের যে অভিযোগ বিএনপি করেছে তা সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বিএনপি নেতাদের এই তথ্যের উৎস জানাতে হবে। এর সঙ্গে কারা জড়িত সে তথ্যও দিতে হবে। আসলে ঢালাওভাবে মিথ্যাচারের মাধ্যমে বিএনপি জাতিকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। সম্পূর্ণ মিথ্যাচারের মাধ্যমে খালেদা জিয়া দুর্নীতির কারণে যে জেলে রয়েছেন, সেদিক থেকে জাতির দৃষ্টি সরিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। বিএনপির দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) বিচারাধীন ৩২টি অর্থপাচার মামলার বেশির ভাগই বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে। এখানে যেসব উল্লেখযোগ্য নেতা রয়েছেন তাদের মধ্যে তারেক রহমান, গিয়াস উদ্দিন আল মামুন, মোর্শেদ খান ও খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে দুদক কর্তৃক দায়েকৃত বিদেশে অর্থপাচার ও মানিলন্ডারিং মামলা চলমান রয়েছে এবং লুৎফজ্জামান বাবর, আলী আসগর লবী, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও তাঁর স্ত্রীসহ অনেক বিএনপি নেতাদের বিদেশে অর্থ পাচারের বিষয়টি তদন্তাধীন রয়েছে। সরকারী ব্যাংকের ২৫ শতাংশ ঋণ ২০/২২ জন লোকের কাছে সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বরেন, এটা সেভাবে সত্য নয়। তারা আমাদের সময়ে ঋণ নেয়নি। ২০/২৫ জনের কথার তথ্যও সঠিক নয়। যে তথ্য আছে তারা দীর্ঘদিন যাবত ব্যবসায়-শিল্পের সঙ্গে জড়িত। শিল্পপতি হিসেবে পরিচিত। গণতান্ত্রিক অর্থনীতিতে কিছুটা মুষ্টিমেয় মানুষের কাছে যায়-এটা অস্বীকার করা যাবে না। বর্তমান সরকারের সময়ে কিছু দুর্নীতির অভিযোগের তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের উদাহরণ টেনে ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ আনা আর প্রমাণীত হওয়া এক কথা নয়। দুর্নীতির যেগুলো অভিযোগ দুদকে রয়েছে, সংসদ সদস্য এবং জাতীয় সংসদের হুইপ পর্যন্ত দুদকে হাজিরা দিয়েছেন। আইন, বিচারবিভাগ এবং দুদক স্বাধীনভাবে কাজ করছে। আমরা এটুকু বলতে পারি, সরকার বা দলের পক্ষ থেকে কোন প্রকার হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। তারা স্বাধীনভাবে কাজ করছে। কেউ যদি দুর্নীতিপরায়ণ প্রমাণীত হয়- সে আগামীতে দলের মনোনয়ন পাবেন না, দল থেকে বহিষ্কার হতে পারে। সে বিষয়ে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। জিয়া পরিবারের দুর্নীতির খ-চিত্র তুলে ধরে আওয়ামী লীগের এ নেতা বলেন, বিএনপি শাসনামলে ব্যাংকের টাকা চুরির সংস্কৃতি শুরু হয়। শুরু হয় ঋণ খেলাপী সংস্কৃতি। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাই সাঈদ ইস্কান্দার, তাঁর পুত্র তারেক রহমান ও আরাফাত রহমান কোকো এবং তাদের ব্যবসায়িক পার্টনার গিয়াস উদ্দিন আল মামুন ডান্ডি ডায়িং, খাম্বা লিমিটেড, ওয়ান শিপিংসহ ১৫টি প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া সম্পত্তি দেখিয়ে ৯৮০ কোটি টাকা ঋণ গ্রহণ করে। এমনকী ক্ষমতার অপব্যবহার করে এই অবৈধ ঋণের সুদ মওকুফ করেছে এবং পরবর্তীতে ওই ঋণের টাকাও মাফ করা হয়েছে। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া পরিবার ভুয়া সম্পত্তি দেখিয়ে এভাবে ঋণ গ্রহণ ও ঋণ মওকুফের নজির পৃথিবীর আর কোথাও নেই। জনগণের এই টাকা তারা এখনও ফেরত দেয়নি। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ ২০০৯ সালে সিমেন্সের কাছ থেকে খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকো কর্তৃক ৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঘুষ গ্রহণের অভিযোগের তদন্ত শুরু হয়। এই টাকা সিঙ্গাপুরের একটি ব্যাংকে পাচার করা হয়। পরবর্তীতে ২০১৩ সালে বর্তমান সরকার সিঙ্গাপুরের ব্যাংক থেকে পাচারকৃত অর্থ থেকে ২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বাংলাদেশে ফেরত এনেছে। এ ছাড়া তারেক রহমান ‘নির্মাণ কনস্ট্রাকশন’-এর কাছ থেকে ৭৫০ হাজার মার্কিন ডলার ঘুষ গ্রহণের মামলায় সাক্ষ্য দিতে এসে যুক্তরাষ্ট্রের এফবিআই কর্মকর্তা ডেবরা লাপ্রিবোট্টি বলেছিলেন- থাইল্যান্ড ও আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশে তারেক রহমানের অবৈধ সম্পদের খবর তাদের কাছে রয়েছে এবং তারা তদন্ত করছে। রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে তারেক রহমানের অবৈধ সম্পদের বিবরণী বাংলাদেশের গণমাধ্যম ছাড়িয়ে বিশ্ব গণমাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, ২০০৬ সালে ব্যাংকিং সেক্টরে মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা এবং এ সময় খেলাপী ঋণের বা শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল ১৩ দশমিক ১৫ শতাংশ। কিন্তু ২০১৭ সালে ঋণের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ৭ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা এবং এর বিপরীতে খেলাপী বা শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ হ্রাস পেয়ে হয়েছে ৯ দশমিক ৩১ শতাংশ। যেখানে ঋণের পরিমাণ প্রায় ৪২২ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে, সেখানে শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ বাড়ার কথা থাকলেও এর পরিমাণ ৩ দশমিক ৮৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে- যা এই সেক্টরের উন্নয়নকেই নির্দেশ করে। আওয়ামী লীগের এই নেতার দেয়া তথ্য মতে, ২০০৬-০৭ সালে জিডিপির পরিমাণ ছিল ৪ লাখ ৭২ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা এবং এ সময় মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা যা জিডিপির ৩২ শতাংশ এবং শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপির ৪ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অপরদিকে ২০১৭-১৮ সালে জিডিপির পরিমাণ ছিল ২ লাখ ৩৮ হাজার ৪৯৮ কোটি টাকা এবং এ সময় মোট ঋণের পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৯৮ হাজার ১৯৬ কোটি টাকা যা জিডিপির ৩৫ দশমিক ৬৬ শতাংশ এবং খেলাপী বা শ্রেণীকৃত ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপির ৩ দশমিক ৩২ শতাংশ। তিনি বলেন, ২০১৪-২০১৫ সালের বিএনপি-জামায়াত জোটের জ্বালাও-পোড়াও রাজনৈতিক কর্মকা- না হলে এর পরিমাণ আরও অনেক কম হতো। এ ছাড়া দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার আরও বৃদ্ধি পেত। এসব ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের ফলে যে বিরূপ প্রভাব পড়েছিল তার রেশ শিল্প-কারখানা ও ব্যবসা-সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেনি। বিএনপির মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে দেশবাসীকে সজাগ ও সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, সফল রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এক অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জন করেছে। যারা সারা বিশ্বে আজ নন্দিত ও প্রশংসিত হচ্ছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির এই ধারা অব্যাহত থাকলে বাংলাদেশ ২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের রাষ্ট্র এবং ২০৪১ সালের মধ্যেই বাংলাদেশ সমৃদ্ধ রাষ্ট্রে উন্নীত হবে। তাই বাংলাদেশের জনগণকে সকল ধরনের অপপ্রচার ও মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকার আহ্বান জানাব। তিনি একটি উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে অতীতের ন্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার যোগ্য ও সুদৃঢ় নেতৃত্বের প্রতি পূর্ণ আস্থা রাখার মাধ্যমে এগিয়ে চলার সংগ্রামে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্যও তিনি দেশবাসীর প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানান। সংবাদ সম্মেলনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবউল আলম হানিফ, আবদুর রহমান, আহমদ হোসেন, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, ড. আবদুস সোবহান গোলাপ, ফরিদুন্নাহার লাইলী, মৃণাল কান্তি দাস, অসীম কুমার উকিল, আফজাল হোসেন, দেলোয়ার হোসেন, আমিনুল ইসলাম আমিন, ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, মারুফা আক্তার পপি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
×