ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা বিষয় ॥ বাংলা

প্রকাশিত: ০৬:৩৪, ১২ মে ২০১৮

নবম-দশম শ্রেণির পড়াশোনা বিষয় ॥ বাংলা

প্রিয় শিক্ষার্থী, শিকড় একাডেমির পক্ষ থেকে তোমাদের জানাই অসংখ্য শুভেচ্ছা। কবিতার প্রশ্ন উত্তর করার জন্য কবিতাটি যত বেশি বিশ্লেষণ করে মূলভাব বা কবির মনোভাব ও বক্তব্য আয়ত্তে আনতে পারবে, মানম্মত উত্তর লিখা তত সহজ হবে। এক কথায়, মান সম্মত উত্তর লিখে সর্বোচ্চ নম্বর প্রাপ্তিতে কবিতার মূলভাব ও বক্তব্য বিশ্লেষণ করে আয়ত্তে আনার বিকল্প নেই। আজ তোমাদের জন্য ‘পল্লিজননী’ কবিতার সমাগ্রিক পর্যালোচনা করা হল, যা তোমাদের সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর প্রদানের ক্ষেত্রে বিরাট সহায়ক হবে। পল্লিজননী - জসীমউদ্দীন রবীন্দ্রনাথের সাহিত্যখ্যাতি যখন গগনচুম্বী, সে - সময় রবীন্দ্র- প্রভাব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত থেকে বাংলা কাব্যজগতের রঙ্গমঞ্চে যে দু’জন মুসলিম কবি স্বকীয় ধারায় আপন গতিপথে কাব্য স্রোতে প্রবাহিত করে শুকতারার মতো উজ্জ্বল হয়ে রয়েছেন, তাঁদের প্রথম জন ‘বিদ্রোহী কবি’ নজরুল ইসলাম এবং দ্বিতীয় জন ‘পল্লী কবি’ জসীম উদ্দীন। আমৃত্যু সাহিত্যেসাধনা ছিল কবি জসীম উদ্দীনের জীবনের ব্রত। তিনি ছিলেন পল্লী- দরদী কবি। হাজার নদীর স্রোতধারায় বিধৌত রূপসী বাংলার রূপ- রস- গন্ধ - স্পর্শে তিনি অভিভূত হয়েছেন। কবি পল্লী প্রকৃতির রূপ- রস- মাধুর্য আকন্ঠ পান করে হৃদয়ের প্রশান্তি লাভ করেছেন। ইটের পাঁজরে লোহার খাঁচায় বন্দী শহুরে জীবন থেকে তার বিগলিত চিত্ত ঘুরে ঘুরে বিচরণ করেছে নিভৃত পল্লীর মাঠ- ঘাট- প্রান্তরে। সেই পল্লীর অজ্ঞ অশিক্ষিত সাধারণ মানুষ, সেই গ্রামীণ জীবনের হাসি - কান্না, আনন্দ- বেদনা কবির অন্তরজীবনকে করেছে গভীরভাবে আলোড়িত। আলোচ্য ‘পল্লিজননী’ কবিতায় কবি একমাত্র সন্তানের কোনো আবদার মেটাতে না পারার মধ্য দিয়ে দারিদ্র্যের কশাঘাতে জর্জরিত এক অসহায় পল্লি মাতার মর্মবেদনাকে চিত্রায়িত করেছেন তাঁর সুনিপুণ তুলির আঁচড়ে। ‘পল্লিজননী’ কবিতাটি কবির ‘রাখালী’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে। এ কবিতায় কবি গ্রামবাংলার রুগ্ণ পরিবেশে অসুস্থ সন্তানের শিয়রে এক পল্লিমায়ের পুত্রহারানোর শঙ্কা তুলে ধরেছেন। কবিতায় পল্লি প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গে গ্রামবাংলার একটি দরিদ্র পরিবারের করুণ কাহিনি ফুটে উঠেছে। পুত্রের রোগশয্যার পাশে নিবু নিবু প্রদীপ, চারদিকে মশার অত্যাচার, ডোবার পচা পাতার গন্ধ, ঠান্ডা হাওয়া ইত্যাদি নানা কিছু পল্লিজননীর অসুস্থ পুত্রের ঘুম কেড়ে নেয়। মা চুমো খেয়ে, সারা গায়ে হাত বুলিয়ে, বুকের সমস্থ ঢেলে দিয়ে তার ছেলেকে ঘুম পাড়াতে চায়। ছেলের সুস্থতার জন্য মানত করে। আল্লাহ, রাসুল, পীরের কাছে প্রার্থনা করতে করতে অশ্রুসিক্ত হয়। বাঁশবনে কানাকুয়োর ডাক, বাদুড়ের পাখা ঝাপটানি, জোনাকির ক্ষীণ আলোয় শীতের শুভ্র কুয়াশা ইত্যাদি মায়ের কাছে অশুভের ইঙ্গিত বলে মনে হয়। মা তাই বালাই বালাই বলে সেগুলো দূর করতে চায়। দুরন্ত ছেলে রহিম চাচার ঝাড়-ফুঁকে সুস্থ হয়েই খেলতে গেলে, মা তখন তাকে একটুও বকবে না বলে অনুমতি নেয়। ছেলের এমন কথায় পল্লিমায়ের পুত্রের নানা আবদারের কথা স্মৃতিপটে ভেসে ওঠে। ছেলের ছোটখাটো বায়না না মিটানোর কথা, আড়ঙের সময় পুতুল, রোগের পথ্য-ওষুধ ইত্যাদি সে কিনে দিতে পারেনি। ঘরের চালে হুতুমের ডাক শুনে সে দূর দূর করে ছেলের অমঙ্গল তাড়াতে চায়। কিন্তু তার সামনের মহাকাল রাত শেষ হয় না। ‘পল্লিজননী’ কবিতায় কবি মাটির প্রদীপের তেল ফুরিয়ে আসার উপমায় অসুস্থ সন্তানের জীবনপ্রদীপ নিভে আসার প্রতি ইঙ্গিত করেছেন। পরিশেষে বলতে পারি - মাতৃ স্রেহের অনিবার্য আকর্ষণই ‘পল্লিজননী’ কবিতার প্রাণবস্তু। *পরবর্তী সংখ্যায় পল্লিজননী কবিতার সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নোত্তর থাকবে।*
×