ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

৪৪ ঘণ্টা যানজটে অচল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১২ মে ২০১৮

৪৪ ঘণ্টা যানজটে অচল ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

রাজিব মজুমদার, নিজস্ব সংবাদদাতা, মীরসরাই, চট্টগ্রাম, ১১ মে ॥ চারলেন উদ্বোধনের পরও রেকর্ড ভেঙ্গেছে এবার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের যানজট। ফেনীর ফতেপুর রেলগেট থেকে সৃষ্ট যানজটে একদিকে মীরসরাই উপজেলা পেরিয়ে সীতাকুন্ড পর্যন্ত পৌঁছেছে। অপরদিকে বুধবার রাত বারোটা থেকে শুক্রবার বিকেলে কুমিল্লা পর্যন্ত এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত ৪৪ ঘণ্টা লাগাতার যানজট লেগেই ছিল। দুই দিকে ১২০ কিলোমিটার জুড়ে এই যানজট নিরসন আজ রাতের মধ্যে নিরসন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের দায়িত্বরত সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার রেজাউল মজিদ। জানা গেছে, এ সময় দূর-দূরান্তের যাত্রীদের অবর্ণনীয় দুর্ভোগের আর সীমা নেই। অনেক মহিলা ও শিশু পথিমধ্যে খাবার ও স্যানিটেশন সঙ্কটে অসুস্থ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। পশুবহনকারীরা পশু নামিয়ে হেঁটে যাত্রা শুরু করেছে। অনেকে বিকল্প উপায়ে রেলস্টেশন খুঁজে ট্রেনে চড়ে এই দুর্ভোগের অবসান করেছেন। কেউ কেউ উল্টোপথে কেউ কেউ হেঁটে গন্তব্যে পৌঁছার রেকর্ড করেছে এমন অনেক ভুক্তভোগীরও দেখা পাওয়া যায়। একদল গরু নিয়ে মীরসরাই সদর এলাকা পার হওয়া জনৈক সাইদুল হক (৪৮) বলেন, নোয়াখালী থেকে গরু নিয়ে দুদিন আগে রওনা হয়ে অবশেষে সেই গরু ট্রাক থেকে নামিয়ে ফেনী থেকে হেঁটে যাত্রা করে ২০ ঘণ্টা পর আজ মীরসরাই পার হচ্ছেন। চট্টগ্রাম পৌঁছাতে রাত হোক বা আরও ১ দিন লাগুক কি আর করা বলেন তিনি। নিজে পথে চা নাস্তা খাচ্ছেন কখনও গরুগুলোকেও রাস্তার পাশে খাওয়াচ্ছেন এমনটাই জানালেন অনেকে। কুমিল্লা থেকে রওনা হওয়া মীরসরাইয়ের সায়েফউল্লাহ ১৫ মিনিটের পথ ৮ ঘণ্টা নাগাদ পার হয়ে অবশেষে উল্টোপথে নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। হাইওয়ে পুলিশের জোরারগঞ্জ ফাঁড়ির ইনচার্জ সোহেল সরকার জানান, ফেনীর ফতেহপুর রেল ওভারপাস নির্মাণের স্থলে বিকল হয়ে যাওয়া ট্রাক অপসারণে বিলম্ব হওয়ায় এই যানজট সৃষ্টি হয়েছে। তবে হাইওয়ে ও থানা পুলিশ সকলে আপ্রাণ চেষ্টা করে মহাসড়ক সচল রাখার চেষ্টা করেছে। কিন্তু এতো বেশি যানবাহন ও মালবাহী গাড়ী যে যানজট আর ছোট করা সম্ভব হয়নি। মহাসড়কে দুর্ভোগে নাকাল হয়ে পড়েছে দূরপাল্লার ট্রাক, লরিসহ বাসের যাত্রীরা। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, মাঝে মাঝে থেমে বৃষ্টি ও ফেনীর ফতেহপুর রেল ওভারপাস নির্মাণ কাজের স্থলে বিকল্প সংকীর্ণ সড়কের কারণে এ যানজট লাগে মূলত। চট্টগ্রাম থেকে ঢাকার যাত্রী নাছির উদ্দিন জানান, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ছয়টায় চট্টগ্রাম শহর থেকে বাসে উঠে সকাল সাড়ে সাতটায় বড়দারোগারহাটে আসার পর যানজটে পড়ি এবং মীরসরাইয়ে আসার পর যানজট আরও তীব্র আকার ধারণ করে। দিনভর এই যানজটেই পড়ে আছেন এমন অসংখ্য যাত্রী। ঢাকা থেকে চট্টগ্রামমুখী যাত্রীরা তো ফেনীই পারও হতে পারেনি। চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা পণ্যবাহী ট্রাক চট্টমেট্রোর (ট-০৪-০৪৯৭) চালক বাবুল হোসেন জানান, বৃহস্পতিবার রাত এগারোটায় নোয়াখালীর উদ্দেশ্য চট্টগ্রাম থেকে বের হয়ে বড়দারোগারহাট এলে রাত বারোটায় যানজটে পড়ি। শুক্রবার বিকেল নাগাদ বড়তাকিয়া এলাকায় পৌঁছি। এ বিষয়ে মীরসরাই থানার ওসি সাইরুল ইসলাম বলেন, অপ্রত্যাশিত এই যানজট নিরসনে হাইওয়ে পুলিশের সঙ্গে জোরারগঞ্জ ও মীরসরাই থানার পুলিশ প্রতিটি ইউটার্নে অবস্থান নিয়ে যানজট নিরসনে কাজ করছে। বিক্ষিপ্ত সকল গাড়িকে শৃঙ্খলায় আনার আপ্রাণ চেষ্টা করা হচ্ছে। আশা করছি আজ রাতের মধ্যেই পুরো মহাসড়ক সচল হয়ে যাবে। তিনি বলেন, বৃষ্টির কারণেও কিছুটা বেগ পেতে হচ্ছে। সৃষ্ট এই যানজটে ঢাকামুখী দূরপাল্লার অনেক বাসই দিনের বেলা যাত্রা বাতিল করায় অধিকাংশ মানুষ রেলে ঢাকা যাত্রা করেছে। আবার অনেকে বিমানে গন্তব্যে পৌঁছেছে। কিন্তু যারা সাধারণ মানুষ ও যারা যাত্রা পথে বেরিয়ে গেছেন তাদের পড়তে হয়েছে বেগতিক দুরবস্থায়। এই বিষয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম ফোরলেনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক এবং সওজ চট্টগ্রামের নির্বাহী প্রকৌশলী জুলফিকার আলী বলেন, আমি খোঁজ নিয়েছি কয়েকটি ট্রাক ঘটনাস্থলে বিকল হওয়ায় এবং বুধ ও বৃহস্পতিবার চট্টগ্রাম থেকে অতিরিক্ত ট্রাক ঢাকামুখী থাকায় এমন যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। তবে শীঘ্রই সচল হয়ে যাবে। এই বিষয়ে যানজটের কেন্দ্রস্থল ফেনী ফতেপুর রেলক্রসিং-এ নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারের দায়িত্বরত সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং কোরের ব্রিগেডিয়ার রেজাউল মজিদ জানান, এখানে নির্মাণাধীন ফ্লাইওভারটির কাজ দ্রুত চলছে, বিকল্প সড়কটি টুলেনের বলে অনেক গাড়ি ইতিমধ্যে ফেনী শহরের বিকল্প সড়ক হয়ে পারাপার হতো। কিন্তু সেদিক দিয়ে ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা দুর্বল বলে গাড়িগুলো এখান দিয়েই পারাপার হতে হয়। আবার আসন্ন রমজানে মালবাহী গাড়ি সড়কে বেড়ে যাওয়ায় এমনটি হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই এই সঙ্কট কেটে যাবে।
×