ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

দৃষ্টিনন্দন অপেরা হাউস হবে হাতিরঝিলে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ১২ মে ২০১৮

দৃষ্টিনন্দন অপেরা হাউস হবে হাতিরঝিলে

মনোয়ার হোসেন ॥ সমৃদ্ধির সোপানে ধাবমান বাংলাদেশের সংস্কৃতি ভুবনে উন্মোচিত হবে এক নতুন দিগন্ত। রাজধানীতে দৃশ্যমান হবে আন্তর্জাতিকমানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ঢাকা অপেরা হাউস। হাতিরঝিলের কুড়ি একর জমিতে ছয় হাজার কোটি টাকায় নির্মিত হবে দৃষ্টিনন্দন এই স্থাপনা। দেশের সংস্কৃতি খাতের সবচেয়ে বড় এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করবে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। ইতোমধ্যে প্রকল্পের আওতাভুক্ত জমি নির্ধারিত হয়েছে। প্রস্তাবিত প্রকল্পের প্রাথমিক নক্সাও অবলোকন করেছেন প্রকল্পের স্বপ্নদ্রষ্টা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সুবিশাল নান্দনিক ভবনটির নক্সা প্রণয়নে সম্পৃক্ত হয়েছে বিশ্বখ্যাত সুইস স্থাপত্য প্রতিষ্ঠান হার্জগ এ্যান্ড মিউরন। ২০১৮ সালে সূচনা হওয়া প্রকল্পের বাস্তবায়নের সময় ধরা হয়েছে পাঁচ বছর। ২০২৩ সালে দৃশ্যমান হবে এই অপেরা হাউস। ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে প্রকল্পের ভূমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া। প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভা কক্ষে ঢাকা অপেরা হাউস বিষয়ে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় গত ২৮ মার্চ। ওই বৈঠক সূত্রে জানা যায়, পাঁচ বছর মেয়াদী এ প্রকল্পের সময়কাল নির্ধারিত হয়েছে ২০১৮ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২৩ সালের জুন মাস পর্যন্ত। সম্পূর্ণ সরকারী অর্থায়নে নির্মিতব্য প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৬ হাজার ১২৪ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। জাতীয় সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের বিকাশ, উন্নয়ন, প্রচার, সংরক্ষণ এবং বিদেশ থেকে আগত সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর অনুষ্ঠান সুষ্ঠুভাবে মঞ্চায়নের লক্ষ্যে নির্মিত হবে সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্সটি। তবে প্রকল্প চালু হলে এর নাম ঢাকা অপেরা হাউসের বদলে দেশের দীর্ঘ সংগ্রামী ঐতিহ্য ও স্বাধীনতার চেতনাকে ধারণ করে নামকরণ করা হবে। হাতিরঝিল কর্তৃপক্ষের আওতাভুক্ত প্রকল্পটির বাস্তবায়নের দায়িত্ব পালন করবে শিল্পকলা একাডেমি। সূত্র জানায়, হাতিরঝিলের পশ্চিম উলন ও সিদ্ধেশ্বরী মৌজার ২০ একর জমি অধিগ্রহণের মাধ্যমে মহানগর প্রকল্প পার্শ্ববর্তী উন্মুক্ত স্থানে নির্মিত হবে ঢাকা অপেরা হাউস। কমপ্লেক্সের চারপাশে সুপরিসর জায়গা রেখে ১০ একর ভূমির ওপর নির্মিত হবে বিশাল আকৃতির নান্দনিক শৈলীর ভবনটি। এতে ঠাঁই পাবে আড়াই হাজার আসনের কনসার্ট হল, ১২০০ থেকে দেড় হাজার আসনবিশিষ্ট মঞ্চ, ৫০০ থেকে ৬০০ আসন বিশিষ্ট থিয়েটার হল, ৪০০ আসন বিশিষ্ট স্টুডিও থিয়েটার হল, গ্যালারি, প্রয়োজনীয় সংখ্যক মেকআপ ও রিহার্সেল রুম। সেই সঙ্গে থাকবে একটি বিশাল মুক্তমঞ্চ। চোখ ধাঁধানো ভবনটিতে যুক্ত হবে রেকর্ডিং স্টুডিও, শিশু কর্নার, আর্কাইভ, জাদুঘর, আউটডোর ভেন্যু ও ফুড কোর্ট। স্যুভিনিয়র শপে দেখা মিলবে বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের কথা বলা নানা সামগ্রী। সিনেমা প্রেমীদের জন্য থাকবে চলচ্চিত্র কেন্দ্র। এখানে প্রদর্শিত হবে ধ্রুপদী ও সমকালীন চলচ্চিত্র। দেশের সংষ্কৃতি বিকাশের লক্ষ্যে গড়া ভবনটিতে নবীন শিল্পীদের জন্য থাকবে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। দর্শনার্থীসহ শিল্পীদের সুবিধার্থে থাকবে বহু স্তরবিশিষ্ট পার্কিং জোন। সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, সুইজারল্যান্ডের স্থাপত্য সংস্থা হার্জগ এ্যান্ড মিউরন এর স্থাপত্য নক্সা করবে। ইতোমধ্যেই এর প্রধান তিন স্থপতি পিয়েরে ডি মিউরন, আদ্রিয়ান কেলার ও ডমিনিক ডি মিউরেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিশ্বখ্যাত এ স্থাপত্য প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বড় বড় স্থাপনার নক্সার কাজ করেছে। জার্মানির বুন্দেস লিগার চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিকের স্টেডিয়াম এ্যালিনাজ এরিনা, যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিকোর এম এইচ ইয়ং জাদুঘর, চীনের বেইজিং জাতীয় স্টেডিয়ামসহ সব মিলিয়ে শতাধিক স্থাপনার নক্সা করেছে প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে তারা ইসরাইলের জাতীয় গ্রন্থাগার, সুইজারল্যান্ডের সর্বোচ্চ ভবন রোচে টাওয়ার, কানাডার ভ্যাঙ্কুবারের আর্ট গ্যালারিসহ গোটা বিশেক স্থাপনার নক্সার কাজ করছে। গত বছরের ১৬ নবেম্বর গণভবনে হাতিরঝিলে প্রস্তাবিত অপেরা হাউসের নক্সা দেখানো হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপার ভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসপি)-এর প্রধান সমন্বয়ক মেজর জেনারেল আবু সাইয়িদ মো. মাসুদ এবং স্থপতি প্যাট্রিক ডি রোজারিও প্রধানমন্ত্রীর সামনে এই নক্সা উপস্থাপন করেন। প্রকল্পটির বিষয়ে সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর জনকণ্ঠকে বলেন, হাতিরঝিলে ইতোমধ্যেই জমি নির্ধারণ করা হয়েছে। ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়াও শুরু হয়ে গেছে। এটি প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের একটি প্রকল্প। এটা সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হবে। আমাদের সংসদ ভবন যেমন বিশ্ববাসীর কাছে আকর্ষণীয়, ঠিক তেমনই বিশ্বমানের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র তৈরি করা হবে। স্থাপত্যশৈলী হবে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যপূর্ণ। নান্দনিক গড়নের কমপ্লেক্সটি দেশের জনগণের পাশাপাশি বিদেশীদের নজর কাড়বে। এ প্রসঙ্গে শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই অপেরা হাউস নিয়ে ভাবছিলেন। লন্ডন, সিডনিসহ বিশ্বের বিভিন্ন বিখ্যাত অপেরা হাউস দর্শনের পর বাংলাদেশেও তিনি এটি নির্মাণের বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এই অপেরা হাউস নির্মাণের মাধ্যমে তাঁর সেই আগ্রহের বাস্তবায়ন ঘটবে। শিল্পকলা একাডেমির এই প্রকল্পে এগিয়ে এসেছে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। এটি নির্মিত হলে জাতির জন্য একটি গর্বের বিষয় যুক্ত হবে। সারা বিশ্বে বাংলাদেশকে মহিমান্বিত করবে এই অপেরা হাউস। ইতোমধ্যেই প্রাথমিক কাজ শুরু হয়েছে। শীঘ্রই প্রকল্প নির্মাণ পরিকল্পনা তৈরিসহ আনুষ্ঠানিক কাজ শুরু হবে। প্রকল্পটি নির্মাণ হলে ঢাকার সাংস্কৃতিক চর্চায় উন্মোচিত হবে নতুন দিগন্ত।
×