ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কালবৈশাখী ও বজ্রপাতে নিহত ১০, আহত পাঁচ শ’

প্রকাশিত: ০৫:১৯, ১২ মে ২০১৮

কালবৈশাখী ও বজ্রপাতে নিহত ১০, আহত পাঁচ শ’

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ দেশের বিভিন্নস্থানে কালবৈশাখী, বজ্রপাত ও শিলাবৃষ্টিতে ১০ জন নিহত এবং প্রায় পাঁচ শ’ আহত হয়েছে। এ সময় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। এদের মধ্যে নীলফামারীতে কালবৈশাখী চলাকালে গাছ ও ঘরচাপা পড়ে মা ও শিশুকন্যাসহ ৭ জন নিহত এবং দেড় শতাধিক আহত হয়েছে। নেত্রকোনায় কালবৈশাখীর সময় ঘরের নিচে চাপা পড়ে একজন নিহত এবং তিন শতাধিক আহত হয়। হবিগঞ্জে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে কমপক্ষে ২৫ জন আহত হয়েছে। এছাড়া কুড়িগ্রামে বজ্রপাতে দুই কৃষকের মৃত্যু হয়েছে। বিভিন্ন স্থান থেকে আমাদের নিজস্ব সংবাদদাতা ও স্টাফ রিপোর্টার এ খবর পাঠিয়েছেন। নীলফামারী ॥ প্রচ- বেগে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখীতে নীলফামারীর তিন উপজেলা ডোমার, ডিমলা ও জলঢাকার বিভিন্ন গ্রাম ল-ভ- হয়েছে। গাছ ও ঘর চাপা পড়ে মা ও শিশু কন্যাসহ ৭ জন নিহত এবং আহত হয় দেড় শতাধিক। বৃহস্পতিবার রাত সোয়া ৯টা থেকে আধা ঘণ্টাব্যাপী পর্যন্ত চলা এই ঝড়ে তিন উপজেলার ২২ ইউনিয়নের প্রায় ২০ হাজার হেক্টর জমির উঠতি বোরো ধান, ভুট্টা, বাদাম ও মরিচ ক্ষেতের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অসংখ্য ঘরবাড়ি ও গাছপালা উপড়ে পড়ে। এছাড়া মৌসুম ফল আম লিচু ঝরে পড়েছে। শুক্রবার নিহত ৭ জনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ খালেদ রহীম। নিহতরা হলোÑ ডোমার উপজেলার ভোগডাবুড়ি ইউনিয়নের চিলাহাটি স্টেশনপাড়ার টুকরা মাহমুদের স্ত্রী খোদেজা বেগম (৪০), কেতকীবাড়ি ইউনিয়নের বোতলগঞ্জ গ্রামের মৃত শাহেরউদ্দিন মুঙ্গুলুর ছেলে আবদার রহমান (৫০), গোমনাতী ইউনিয়নের মৌজা গোমনাতী গ্রামের ধৌলু মাহমুদের ছেলে আব্দুল গনি (৪০), ভোগড়াবুড়ি ইউনিয়নের খানপাড়া গ্রামের মোহাম্মদ পিপুলের ছেলে জমিরুল ইসলাম (১২), জলঢাকা উপজেলার পূর্ব শিমুলবাড়ি গ্রামের আমিনুর রহমানের ছেলে আশিকুর রহমান (২২), ধর্মপাল খুচিমাদা গ্রামের মোহাম্মদ আলম হোসেনের স্ত্রী সুমাইয়া আক্তার (২৮) ও তাদের তিন মাসের শিশুকন্যা পরীমনি। এছাড়া নিজের আবাদ করা ধান ক্ষেতের ক্ষতি সহ্য করতে না পেরে শুক্রবার সকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ডিমলা উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের সাতজান গ্রামের কৃষক জ্যোতিন্দ্রনাথ রায় (৬৫) মারা গেছেন। ঘর ও গাছ চাপা পড়ে আহতদের মধ্যে ডোমারে ১৩০, ডিমলায় ৩ ও জলঢাকায় ৪ জন বলে জানা গেছে। আহতদের স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। ডোমার উপজেলার কেতকীবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক জহুরুল ইসলাম মাথা চাপড়িয়ে বললেন আমার জমির চার শ’ মণ উঠতি বোরো ধান আর নেই। কালবৈশাখী আমাদের কৃষকদের পথে বসিয়ে দিল। ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাঁপানী ইউনিয়নের উত্তর ঝুনাগাছ গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বললেন তার ৭ বিঘা জমির উঠতি বোরো ধান বলতে কিছু নেই। জমিতে শুরু ধানের গাছ। এই ক্ষতি কি ভাবে পুষিয়ে নেব। জলঢাকা উপজেলার শিমুলবাড়ি গ্রামের কৃষক আবু মুছা বললেন আমার বিঘা জমির বোরো ধান হারিয়ে গেল। এখন চোখে মুখে অন্ধকার দেখছি। জেলা প্রশাসক জানান ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাসমূহসহ নিহতদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাদের খোঁজ খবর নেয়া হয়েছে। নিহত পরিবার প্রতি প্রাথমিকভাবে ১৫ হাজার করে টাকা ও ৩০ কেজি করে চাল প্রদান করা হয়। জেলা প্রশাসক বলেন ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর তালিকা ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় হলে সরকারীভাবে সাহায্য প্রদান করা হবে। নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আফতাব উদ্দিন সরকার বলেন, সরজমিনে আমি ক্ষতিগ্রস্ত এলাকাগুলো পরিদর্শন করেছি। কালবৈশাখীর সীমাহীন ক্ষতিসাধিত হয়েছে। ৮০ ভাগ কৃষি ফসল বিনষ্ট হয়ে গেছে। এ ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া এই মুহূর্তে সম্ভব নয়। তিনি বলেন যে মুহূর্তে জমি থেকে ধান ঘরে তোলার সময় সেই সময় এই কালবৈশাখী সবকিছু তছনছ করে দিয়েছে। এখন বোরো চাষীরা চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে। যা নীলফামারীর ফসলের এই ক্ষতি জাতীয় পর্যায়েও হানা দেবে। নীলফামারী ৩ আসনের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য অধ্যাপক গোলাম মোস্তফা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে জানান তার জলঢাকা উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বিশেষ করে উঠতি বোরো ধানের ক্ষতি এলাকার কৃষকদের কোমড় ভেঙ্গে দিয়েছে। কৃষকদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আমরা সরকারীভাবে চেষ্টা করব। এছাড়া বিভিন্ন সড়কে ভেঙ্গে পড়া বিশাল বিশাল গাছগুলো অপসারণে ফায়ার সার্ভিসের লোকজন রাত হতে কাজ শুরু করে যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করেছে। তবে ওই তিন উপজেলায় বিদ্যুত ব্যবস্থা অচল রয়েছে। নেত্রকোনা ॥ শুক্রবার সকালে প্রচন্ড কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টিতে নেত্রকোনার ছয় উপজেলা লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এ সময় ঘরের নিচে চাপা পড়ে একজন নিহত ও কমপক্ষে তিন শতাধিক মানুষ আহত হয়েছে। মারা গেছে বেশকিছু গবাদিপশুও। শিলাবৃষ্টিতে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে কয়েক হাজার হেক্টর জমির উঠতি বোরো ফসল। ক্ষতিগ্রস্ত উপজেলাগুলো হচ্ছে- নেত্রকোনা সদর, পূর্বধলা, খালিয়াজুরি, আটপাড়া, মদন ও বারহাট্টা। মোহনগঞ্জ, (নেত্রকোনা) ॥ শুক্রবার সকালে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কালবৈশাখী, শিলাবৃষ্টিতে ঘরবাড়িসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়েছে। সকাল আনুমানিক আটটার দিকে প্রচন্ড বেগে ঝড় বইতে থাকে সঙ্গে শিলাবৃষ্টি। এতে উপজেলার সমাজ সহিলদেও, সুয়াইর, গাগলাজুর ইউনিয়নের সহস্রাধিক ঘরবাড়িসহ ফসলের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। হবিগঞ্জ ॥ জেলা শহর হবিগঞ্জসহ বানিয়াচঙ্গ ও বেশ কয়েকটি উপজেলার ওপর দিয়ে শুক্রবার সকালে বয়ে যাওয়া প্রবল শিলা বৃষ্টি ও ঝড়ে অন্তত ২৫ শিশু-নারী-পুরুষ আহত এবং ফসল-ঘর-বাড়ি আর গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। কুড়িগ্রাম ॥ কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ও নাগেশ্বরী উপজেলায় বজ্রপাতে ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহতরা হলেন- নাগেশ্বরী উপজেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের আজিজুল হক (৪৯) ও ফুলবাড়ী উপজেলার ভাঙ্গামোড় ইউনিয়নের আব্দুল আউয়াল (২৫)। নাগেশ্বরী উপজেলার কালীগঞ্জ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান জানান, শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে জমিতে ধান কাটার সময় বজ্রপাতের ঘটনা ঘটলে আজিজুল হক মারা যায়। হৃদরোগে কৃষকের মৃত্যু ॥ স্টাফ রিপোর্টার নীলফামারী থেকেজ জানান, কালবৈশাখী ঝড়ে জমির উঠতি বোরো ধান সম্পূর্ণ বিনষ্ট হবার দৃশ্য সহ্য করতে না পেরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে কৃষক জ্যোতিন্দ্রনাথ রায় (৬৫)। মর্মান্তিক ও হৃদয়বিদারক ঘটনাটি ঘটেছে শুক্রবার সকালে নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার নাউতারা ইউনিয়নের আট নম্বর ওয়ার্ডের সাতজান গ্রামে। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই কৃষকের বাড়িতে শতশত মানুষ ভিড় করে। এ ছাড়া ব্যাপকভাবে উঠতি বোরো ধানের ক্ষতি হওয়ায় অন্যান্য কৃষকের মাঝে চলছে আহাজারি। জ্যোতিন্দ্রনাথ ওই গ্রামের মৃত দোমাসুনাথের ছেলে।
×