ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর মাদকের বিরুদ্ধে র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযান

প্রকাশিত: ০৫:১৮, ১২ মে ২০১৮

প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর মাদকের বিরুদ্ধে  র‌্যাবের সাঁড়াশি অভিযান

শংকর কুমার দে ॥ প্রধানমন্ত্রীর এক সপ্তাহ আগে দেয়া নির্দেশনা অনুযায়ী দেশব্যাপী মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানে মাঠে নেমেছে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গত এক সপ্তাহে র‌্যাবের এ অভিযানে গ্রেফতার হয়েছে এক হাজারের মতো মাদকসেবী ও ব্যবসায়ী। তাদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে অর্ধ লক্ষাধিক পিস ইয়াবা। সারাদেশে র‌্যাবের মাদকবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে চলছে শতাধিক। র‌্যাবের শতাধিক সংখ্যক ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে গ্রেফতার হওয়া মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- ও অর্থদ- দেয়া হয়েছে। র‌্যাব সূত্রে এ খবর জানা গেছে। র‌্যাব সূত্র জানায়, গত ৩ মে র‌্যাবের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে কুর্মিটোলায় র‌্যাব সদর দফতরে জঙ্গীবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে র‌্যাব যেভাবে অভিযান চালিয়ে সাফল্য অর্জন করেছে, এখন মাদকের বিরুদ্ধেও সেভাবে অভিযান অব্যাহত রাখতে হবে। আমাদের ছেলেমেয়েরা যাতে মাদকের ছোবল থেকে দূরে থাকতে পারে, ব্যাপকভাবে সে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। র‌্যাব সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পর র‌্যাবের উর্ধতন কর্মকর্তারা দেশজুড়ে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযানের সিদ্ধান্ত নেন। এ অভিযান শুরু করে এলিট ফোর্স র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। গত সাত দিনে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ৯৫০ জনের মতো মাদকসেবী ও ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছে তারা। এর মধ্যে কয়েকজনকে নিয়মিত মামলা ও বাকিদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়েছে। এ সময়ের মধ্যে দুটি পৃথক অভিযানের মাধ্যমে ৬০ হাজার ইয়াবা উদ্ধার করেছে র‌্যাব। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী সাত দিনে প্রায় একশ’ মাদকবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেছে। এ অভিযানে দেড় শতাধিক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। আর ৮শ’র মতো মাদকসেবীকে আটকের পর ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়। কারো কারো কারাদ-ের পাশাপাশি অর্থ দ-ও দেয়া হয়। র‌্যাব সূত্র জানায়, গত ৩ মে টেকনাফ এলাকা থেকে ৪৯ হাজার ৯০০ ইয়াবা উদ্ধার ও এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে র‌্যাব-৭। ৪ মে রংপুর ও দিনাজপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৪৯ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়। ৫ মে টঙ্গী থেকে ১১ হাজার ২৫০ পিস ইয়াবাসহ ২ মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতারের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন এলাকায় ৫২ জনকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে কারাদ- দেয়া হয়। গত ৬ মে রাজশাহীতে র‌্যাব-৫ এর ভ্রাম্যমাণ আদালত গুরিপাড়ায় অভিযান চালিয়ে ৪৮ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে এবং র‌্যাব-১৩ রংপুর, দিনাজপুর ও নীলফামারীতে ৪৩ জনকে কারাদ- দেয়। ৭ মে গাজীপুরে ৪৮ জনকে দুই মাস করে কারাদ- দেয়া হয়। সারাদেশে ১৫৭ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদ- দেয়া হয়। ৮ মে বিভিন্ন এলাকায় কারাদ- দেয়া হয় ৬৪ জনকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সূত্র বলছে, সারাদেশে এখন ২০ থেকে ২৫ লাখ মানুষ ইয়াবা সেবন করে। অন্যান্য মাদকের চাইতে দেশে ইয়াবার চাহিদা সবচেয়ে বেশি। মাদক হিসেবে ইয়াবার পরের অবস্থান ফেনসিডিলের। মাঝখানে ফেনসিডিলের চাহিদা কমে গেলেও নতুন করে আবারও এর ব্যবহার বেড়েছে। ইয়াবা এবং ফেনসিডিল, এই দুটি মাদকই দেশে আসে পার্শ্ববর্তী দুই দেশ- মিয়ানমার ও ভারত থেকে। মিয়ানমার থেকে ইয়াবা আসার একমাত্র রুট হলো চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার। আর ভারত থেকে ফেনসিডিল প্রবেশ করে দিনাজপুরের হিলি, যশোর, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, ফেনী, কুমিল্লা ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সীমান্ত দিয়ে। এসব এলাকায় বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে মাদকবিরোধী অভিযান জোরদার করতে পারলে দেশে মাদক ঢোকা অনেকটা কমে যাবে। মাদকের সরবরাহ কমে গেলেও মাদক সেবনও কমে যাবে অনেকাংশে। অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলেন, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ী যারা, তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়। সমাজের প্রভাবশালীরা মাদক ব্যবসা করছে। তাদের সঙ্গে খোদ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদেরও লিঙ্ক আছে দেখা যায়। এদের ধরতে হবে। যদিও সারা পৃথিবীতে ড্রাগ ডিলাররা শক্তিশালী। এজন্য তাদের ধরতে হলে কঠোর আইন করে, সেই আইনের যথাযথ প্রয়োগ করতে হবে। সার্বিকভাবে দীর্ঘমেয়াদী বা স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনা হাতে নিয়ে মাঠে নামতে হবে। শুধু কিছু সময়ের জন্য এ সাঁড়াশি অভিযান পরিচালনা করে মাদকসেবীদের ধরলে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হবে না। দেশের সব মাদকসেবীকে যদি আমরা ধরে ধরে জেলে ঢোকাই তাহলে তো জেলেও জায়গা হবে না। তাদের কাছে মাদকের সরবরাহটা বন্ধ করতে হবে।
×