ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভরসা সাদিক আব্দুল্লাহ

বরিশালে তরুণ প্রার্থীদের জয়জয়কার

প্রকাশিত: ০৪:৫৯, ১২ মে ২০১৮

বরিশালে তরুণ প্রার্থীদের জয়জয়কার

খোকন আহম্মেদ হীরা, বরিশাল ॥ আসছে বরিশাল সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে সব দলের তরুণ প্রার্থীদের জয়জয়কার শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ, প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি ও সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের পক্ষ থেকে একক মেয়র প্রার্থী হিসেবে স্থানীয়ভাবে তরুণ প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হলেও বিএনপির মনোনয়ন লাভের আশায় তরুণ এক নেত্রী জোরলবিং করে যাচ্ছেন। সবমিলিয়ে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের চতুর্থ নির্বাচনের এখনও তফসিল ঘোষণা না হলেও তরুণ প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা বিভিন্ন কৌশলে ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ছুটে চলেছেন। এখানে ভোটযুদ্ধের চেয়ে এখন প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়টি মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ডের প্রতি পাড়া ও মহল্লার ভোটার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের কাছে অধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। ইতোমধ্যে মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সর্বস্তরের ভোটারদের পছন্দের মেয়র প্রার্থী হিসেবে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নাম ঘোষণার পর অনেকটাই বিপাকে পরেছেন বিএনপির নীতিনির্ধারকরা। একসময়ে বিএনপির শক্ত ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকার রাজনৈতিক অঙ্গনে কৌশলী ভূমিকা পালনের মাধ্যমে বেশ স্বল্পসময়ে নিজের আয়ত্ত করে নেয়া মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর পক্ষে দীর্ঘদিন থেকে সর্বত্র জয়জয়কার শুরু হয়েছে। এ কারণে ভোটের মাধ্যমেই এবার বিএনপির দুর্গ ভাঙ্গতে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের একমাত্র ভরসা সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। সূত্রমতে, বরিশালে সর্বশেষ সিটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ২০১৩ সালের ১৫ জুন। তখন এখানে ভোটার ছিল দুই লাখ ১১ হাজার ২৫৭। প্রায় চার বছরের ব্যবধানে এ সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই লাখ ৩৭ হাজার ৬০৭। সর্বশেষ নির্বাচনে সাবেক মেয়র আওয়ামী লীগ নেতা শওকত হোসেন হিরণকে হারিয়ে নগরপিতা নির্বাচিত হয়েছে বিএনপি নেতা আহসান হাবিব কামাল। দলীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, টিকেট হাতে মাঠে নামতে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক নেতা আধাজল খেয়ে কেন্দ্র থেকে শুরু করে বরিশালের তৃণমূলকে ম্যানেজে দৌড়ের ওপর থাকলেও মাঠের বাস্তবিক বিষয়ের ওপর নির্ভর করছে প্রার্থীর জয়-পরাজয়। সেক্ষেত্রে টানা দুইবার ক্ষমতাসীনের আসনে থাকা আওয়ামী লীগের প্রার্থী মনোনয়নে ভুল হলে এবারও বিভাগীয় শহর বরিশাল সিটি কর্পোরেশনটি হাতছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এনিয়ে চুলছেড়া বিশ্লেষণের অন্তনেই রাজনীতিক মহলে। আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে সম্ভ্রাব্য প্রার্থী হিসেবে বেশ কয়েকজন নেতার নাম শোনা গেলেও এখন সেই তালিকা ক্ষীণ হয়ে ঠেকেছে মাত্র একজনে। বহু আগেই সিটি মেয়র পদে নির্বাচন করার আগ্রহ প্রকাশ করে সেই টার্গেট পূরণে অগ্রসর হতে ইতোমধ্যে দলে এবং সাধারণ মানুষের হৃদয়ে ভরসারস্থান দখল করে নিয়েছেন মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক যুবরতœখ্যাত সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। এর বাইরে অন্য কেউ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেতে চাইলেও তারা প্রকাশ্যে ও রাজনৈতিক মাঠে পুরোটাই নীরব। মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক তৃণমূল রাজনৈতিক মাঠে সবার প্রিয় ব্যক্তিত্ব নিরব হোসেন টুটুল বলেন, বরিশাল নগরী ছাড়িয়ে গোটা বিভাগজুড়ে চলছে সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর জয়জয়কার। শুধু সিটি নির্বাচনই নয়, সাদিকের জনসমর্থন পরীক্ষা করতে তাকে যেই নির্বাচনে দল সমর্থন করবে সেখানেই বিজয় ছিনিয়ে আনা সক্ষম। টুটুল আরও বলেন, যেহেতু নগরীর আওতাধীন দলের সব সংগঠনের সবকটি ইউনিটসহ সর্বস্তরের জনসাধারণ সাদিক আব্দুল্লাহকে ভরসার শেষ ঠিকানা হিসেবে আপন করে নিয়েছে। সেখানে বিএনপির আতঙ্ক সাদিক ব্যতীত অন্য কাউকে কেন্দ্র থেকে মনোনয়ন দেয়া হলে বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিজয় অসম্ভব হয়ে পরবে। মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি এ্যাডভোকেট গোলাম ৃআব্বাস চৌধুরী দুলাল বলেন, গত ৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত মহানগর আওয়ামী লীগের সভায় সিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে কেন্দ্রের কাছে মনোনয়ন চাওয়ার জন্য মহানগর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহর নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক ব্যক্তি বলেন, বরিশাল বিএনপির দুর্গ। এখানে সাদিক আব্দুল্লাহ ব্যতীত অন্যকেউ মনোনয়ন পেলে কোন টেনশন থাকবে না। তবে সাদিক টিকেট পেলে কি হয় বলা যায় না। জাতীয় পার্টির সম্ভ্রাব্য মেয়র প্রার্থী ইকবাল হোসেন তাপস ॥ জাতীয় পার্টির সম্ভ্রাব্য মেয়র প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন তরুণ নেতা ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন তাপস। মাঠে সক্রিয় কার্যক্রমের মাধ্যমে জনগণের পাশে থেকে বরিশালের রূপকার সাবেক প্রয়াত মেয়র ও সাংসদ শওকত হোসেন হিরণের উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে হিরণের অসম্পূর্ণ কাজ সম্পন্ন করে বাংলার ভেনিস নামে পরিচিত বরিশালকে দেশের সব সিটি থেকে উন্নত সিটিতে রূপান্তরিত করতে চান ইকবাল হোসেন তাপস। বাসদের প্রার্থী ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী ॥ বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) জেলা সদস্য সচিব ডাঃ মনীষা চক্রবর্তীকে মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করেছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দরা। দীর্ঘদিন থেকে নগরীর রাজপথে সক্রিয় থাকা ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী সম্প্রতি ব্যাটারি চালিত রিক্সা উচ্ছেদের প্রতিবাদে শ্রমিকদের নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করতে গিয়ে পুলিশের হাতে আটক হয়ে বেশ কয়েকদিন কারাভোগ করেছেন। ডাঃ মনীষা চক্রবর্তী বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। তিনি সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট্রের মাধ্যমে বাম রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ৩৫তম বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েও শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার জন্য ডাঃ মনীষা সরকারী চাকরিতে যোগদান করেননি। আওয়ামী লীগ, জাতীয়পার্টি ও বাসদের তরুণ প্রার্থীদের পাশাপাশি বিএনপির বর্তমান মেয়র আহসান হাবিব কামালসহ সম্ভ্রাব্য প্রার্থী হিসেবে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেনÑ বিএনপির বরিশাল বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিস আক্তার জাহান শিরিণ, বরিশাল দক্ষিণ জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়দুল হক চাঁন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক আফরোজা খানম নাসরিন।
×