ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অনলাইনেই সব জানা যাবে

কবর সংরক্ষণে ডিএসসিসির বিশেষ সেবা চালু হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৪:৫৭, ১২ মে ২০১৮

কবর সংরক্ষণে ডিএসসিসির বিশেষ সেবা চালু হচ্ছে

মশিউর রহমান খান ॥ রাজধানীতে বসবাসকারী নাগরিকদের স্বজনদের মৃত্যুর পর লাশ দাফন ও কবর সংরক্ষণে বিশেষ সেবা পদ্ধতি চালু করছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) কর্তৃপক্ষ। মৃত্যুর পর লাশ দাফন ও পরবর্তীতে স্বজনের কবরের রক্ষণাবেক্ষণ তথা কবরস্থান সংশ্লিষ্ট সার্বিক তথ্য সংগ্রহ করবে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। লাশ দাফনের সময় দেয়া হবে নির্দিষ্ট সিরিয়াল নাম্বার। যাতে মৃত ব্যক্তির সকল তথ্য দেয়া থাকবে। এছাড়া কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ কোরানখানি, মিলাদ ও দোয়া মাহফিল করাতে পারবেন অনলাইনে নির্দিষ্ট চার্জ পরিশোধের মাধ্যমে। এর মাধ্যমে স্বজনের কবর সংশ্লিষ্ট সকল তথ্য যে কোন নাগরিক অনলাইনে বিশ্বের যে কোন স্থান থেকে দেখতে পারবেন। এছাড়া লাশ দাফনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যয়, পরবর্তীতে নির্দিষ্ট কবর সংরক্ষণের ব্যয় ও দাফনের ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি সম্পর্কে অনলাইনেই সব জানা যাবে। এ সেবা প্রদান করতে রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে একটি পাইলট প্রকল্প চালু করছে সেবাদানকারী সংস্থাটি। পরবর্তীতে সফল হলে অন্য সকল কবরস্থানেও এই প্রকল্পটি চালু করা হবে। মূলত মৃত ব্যক্তির পরিবারের সদস্যদের বিড়ম্বনা দূর করতে ডিএসসিসি এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর মাধ্যমে মৃতব্যক্তির পরিবারের সদস্যরা কবরস্থান সংশ্লিষ্ট বিভিন সেবা অনলাইনের মাধ্যমেই নিতে পারবেন। প্রকল্প সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে আজিমপুর কবরস্থানে কয়েক বছরে দাফন করা ব্যক্তিদের তথ্য নিয়ে একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ সম্পন্ন হয়েছে। সেবাটি চালু হলে মৃত ব্যক্তির স্বজনদের কবরস্থান কেন্দ্রিক নানা ভোগান্তি লাঘব হবে। ওই ডাটাবেজে মৃত ব্যক্তির বিস্তারিত তথ্য-উপাত্ত সন্নিবেশিত করা হচ্ছে। মারা যাওয়ার তারিখ, দাফনের সময়, মৃত্যুর কারণ এবং ওয়ারিশদের তথ্য সেখানে থাকবে। এমনকি তার ডেথ সার্টিফিকেটও এই তথ্য দেখেই প্রদান করা হবে। ডিএসসিসি সূত্র জানায়, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হলে পৃথিবীর যে কোন স্থান থেকে স্বজনের কবরের নামফলকসহ কবরের অবস্থান দেখা যাবে। এমনকি সেক্ষেত্রে মৃত্যুবার্ষিকীর সাত দিন আগে মৃতব্যক্তির পরিবারের কাছে বার্তা পাঠানো হবে। দাফনের সময় দেয়া সিরিয়াল নম্বর দিয়ে সার্চ করলে সহজেই কাক্সিক্ষত ব্যক্তির সব তথ্য অনলাইনে চলে আসবে। ফলে নাগরিকগণ তার স্বজনদের কবরের অবস্থান, নামফলক আছে কি না বা সর্বশেষ অবস্থা দেখতে কষ্ট করে কবরস্থানে গিয়ে কারও কাছে খোঁজ করতে হবে না। বর্তমানে রাজধানীর প্রায় সকল কবরস্থানেই মৃতব্যক্তির লাশ দাফনের জন্য কবর খোঁড়া, দাফন-কাফন, কবরের বেড়া দেয়া, পরবর্তীতে কবরের দেখভাল নিয়ে নানা অব্যবস্থাপনার শিকার হতে হয়। পদে পদে আর্থিক ভোগান্তিতে পড়তে হয়। অতিরিক্ত অর্থ পরিশোধ করতে হয়। এমনকি কবর রক্ষণাবেক্ষণের নামেও মাসে মাসে বাড়তি টাকাও গুণতে হয়। কোন লাশ দাফনে ন্যূনতম আড়াই হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে। এই পদ্ধতি চালু হলে অনলাইনে চার্জ পরিশোধ করা যাবে বলে মৃতব্যক্তির স্বজনদের ভোগান্তিও অনেকাংশে কমে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে ডিএসসিসির আইসিটি সেলের সিস্টেম এনালিস্ট আবু তৈয়ব রোকন জনকণ্ঠকে জানান, প্রাথমিকভাবে আজিমপুর কবরস্থানে একটা পাইলট প্রকল্প চালু করা হচ্ছে। এটা ফলপ্রসূ হলে অন্য কবরস্থানেও এ সেবা চালু হবে। তিনি বলেন, অনলাইনে অর্থাৎ মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ডেথ সার্টিফিকেটের নির্ধারিত ফি পরিশোধ করা যাবে। এমনকি স্বজনরা কবরস্থান কেন্দ্রিক নির্দিষ্ট বিভিন্ন চার্জ অনলাইনের মাধ্যেমে প্রদান করতে পারবেন। এছাড়া মৃতব্যক্তির ডেথ সার্টিফিকেট প্রস্তুত করে তা লাশ দাফনের সময় উপস্থিত রেজিস্ট্রেশনকারীর প্রোফাইলে পাঠানো হবে। রোকন বলেন, অনেক মৃতব্যক্তির স্বজন দেশের বাইরে থাকেন বা স্বজনদের মৃত্যুর পর বিদেশ চলে যান কিন্তু পিতামাতা ভাইবোন বা স্বজনদের জন্য মন কাদে। কিন্তু বিদেশে থাকায় অনেক ব্যস্ততার কারণে দেশে এসে সরাসরি কবরস্থানে যেতে পারেন না। মূলত তাদের কথা মাথায় রেখে এ সেবা চালু হতে যাচ্ছে। যখানে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে কবরের নামফলকসহ কাছের আত্মীয়-স্বজনের সর্বশেষ অবস্থান ও ছবি দেখা যাবে।
×