ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

স্বদেশী আন্দোলনের পাদপীঠ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম

প্রকাশিত: ০৪:৫৪, ১২ মে ২০১৮

স্বদেশী আন্দোলনের পাদপীঠ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম

স্বদেশী আন্দোলনের পাদপীঠ পাবনা রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম। স্বদেশী আন্দোলনে এ আশ্রমটির রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস। এখানে আজাদ হিন্দু ফৌজের ট্রেনিংক্যাম্প গড়ে তোলা হয়। ট্রেনিংক্যাম্প হিসেবে এটি খ্যাতিলাভ করে। নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু এ ট্রেনিং ক্যাম্পে প্রশিক্ষক করে পাঠান শরৎচন্দ্র বসুকে। এখানে নিয়মিত লাঠি ও রক্সিং প্রশিক্ষণ দেয়া হতো। লাঠি প্রশিক্ষক ছিলেন ভারতের কংগ্রেস নেতা পরবর্তীতে খাদ্যমন্ত্রী নরেণ সরকার। বক্সিং প্রশিক্ষণে ছিলেন ড. গোপালচন্দ্র মজুমদার। তিনি ছিলেন পাবনা পৌরসভার চেয়ারম্যান মনিন্দ্রনাথ মজুমদারের ভাই। ড. গোপালচন্দ্র মজুদার প্রায়ই এ আশ্রমে থাকতেন। এ সময় দু’জন স্বামীজী আশ্রম দেখাশোনা করতেন। ১৯৪৭ সালের পর তাঁরা কলকাতার বেলুড় মঠে চলে যান। ১৯৫০ সালের ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের সময় সেবাশ্রমটি প্রতিদিন কাঙ্গালীভোজের আয়োজন করে। ২ মাস ধরে প্রতিদিন হাজার হাজার নিরন্ন মানুষের মুখে অন্ন তুলে দেয় এ প্রতিষ্ঠানটি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমটি পাকিস্থানী সেনাবাহিনী পুড়িয়ে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে। স্বাধীনের পর হিন্দু সম্প্রদায় চাঁদা তুলে আশ্রমটি মেরামত করে কাজ চালায়। ’৯৫-এর ভয়াবহ খরায় শহরের বিভিন্ন স্থানে পানীয়জল সরবরাহসহ ’৯৮- এর বন্যায় জেলায় ব্যাপক ত্রাণ তৎপরতা চালায় আশ্রমটি। ১৯২৬ সালে শহরের পাথরতলায় রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমটি প্রতিষ্ঠা লাভ করে। ভাড়া বাসায় আশ্রমের কার্যক্রম চালানো হয়। বাসার মালিক নিজ প্রয়োজনে বাসা খালি করতে বললে সঙ্কটে পড়ে আশ্রমটি। এ সময় বিশিষ্ট ব্যবসায়ী জোতদার জ্ঞানেন্দ্রনাথ সাহা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন। তিনি সেবাশ্রমের নামে পাথরতলার এ বাড়িটি দানস্বত্বে রেজিস্ট্রি করে দেন। এ বাড়িটির অংশ ভাই সুরেশচন্দ্র সাহার থাকলেও তিনি আপোসমূলে মালিকানা স্বত্ব লাভ করেন। জ্ঞানেন্দ্রনাথ সাহা ছিলেন অত্যন্ত দানশীল ব্যক্তি। তিনি দানকৃত এ সম্পত্তি সুষ্ঠুভাবে রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচালনায় ট্রাস্টিবোর্ড গঠন করেন। ট্রাস্টি বোর্ডে ছিলেন ক্ষিতীশ ভূষণ বাহাদুর, ক্যাপ্টেন (অব) অমূল্য প্রসাদ মিত্র, ইদুজ্যোতি মজুমদার, মহেন্দ্রনারায়ণ চক্রবর্তী, ননীগোপাল রায়, কৃষ্ণনাথ সাহা, ক্ষিতীশ চাকী, জ্যোতিচন্দ্র সরকার। ট্রাস্টিবোর্ডের সেক্রেটারি ছিলেন জ্ঞানেন্দ্রনাথ সাহা। সেবাশ্রমে এ সময় দাতব্য চিকিৎসালয়, ব্যায়ামাগার ও গরিব ছাত্রদের বাসস্থানের ব্যবস্থা করা হয়। ১৯৯৬ সালে আশ্রমে কলকাতা বেলুরমঠের সহ-সভাপতি গহনা নন্দজী মহারাজ ২০জন স্বামীজী নিয়ে পরিদর্শনে আসেন। ১৯৯৭ সালে ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশন মঠের স্বামী অক্ষররানন্দজী মহারাজ আশ্রমের নতুন ভবনের ভিত্তি স্থাপন করেন। আশ্রমটি নিয়মিত ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি পালনসহ ৩০ গরিব ছাত্রের আবাসিক ব্যবস্থা করা হয়েছে। -কৃষ্ণ ভৌমিক, পাবনা থেকে
×