ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে বীজ ধানের কেজি ৪শ’ টাকা

প্রকাশিত: ০৪:৩৩, ১২ মে ২০১৮

বাগেরহাটে বীজ ধানের  কেজি ৪শ’ টাকা

বাবুল সরদার, বাগেরহাট ॥ শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি যে, ফকিরহাটে প্রতি কেজি ধান বিক্রি হচ্ছে ৪শ’ টাকা। অবশ্য সব ধান নয়, এ হচ্ছে ফাতেমা জাতের ধান। ফলন খুব বেশি এবং শীষ মোটা হওয়ায় ঝড়-বৃষ্টিতে ক্ষতির সম্ভাবনা কম। তাছাড়া চিটা নেই বল্লেই চলে। এ ধানের মাহাত্ম্যই আলাদা, তাইতো এ ধানের এত দাম। অনেকটা গল্পের মতেই সে কাহিনী। ফকিরহাট উপজেলার মাশকাটা গ্রামের ফাতেমা বেগম এ ধান আবিষ্কার করেছেন, তাই এর নাম হয়েছে ‘ফাতেমা ধান’। বাগেরহাটে কৃষকের মুখে মুখে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ছে এ ধানের নাম। ফাতেমা বলেন, ‘আমার ছেলে লেবুয়াত ২০১৫ সালে বাড়ির পাশের ধানখেতে হাইব্রিড আফতাব ৫ ধানের চাষ করে। সেখানে ওই ধানের মধ্যে আমি ব্যতিক্রম ৩টি ধানের ছড়া (শীষ) দেখতে পাই। ওই ছড়াগুলো সংগ্রহ করে আমার ছেলেকে বলি এ ধানগুলো বীজ হিসেবে ব্যবহার কর। সে প্রথমে অস্বীকৃতি জানালেও মায়ের কথা রেখে পরের বছর জমিতে বীজ হিসেবে রোপণ করে। ওই বছর তিন ছড়া ধানের বীজে প্রায় আড়াই কেজি ধান উৎপাদন হয়।’ তিনি বলেন, ‘পরে কৃষি বিভাগের লোকেরা খবর পেয়ে আমাদের ধান দেখতে আসেন। আকারে বড় ও ছড়ায় ধানের সংখ্যা বেশি দেখে তারা আমাকে এ ধান সংরক্ষণ করার পরামর্শ দেন। আমি এ আড়াই কেজি ধানও বীজ হিসেবে ব্যবহার করি। এরপর এ বছর ৭৫ শতাংশ জমিতে ওই ধান রোপণ করি। এতে প্রায় ১শ’ ১০ মণ ধান হয়েছে। এ খবর স্থানীয় কৃষকরা জানার পরে ধান সংগ্রহের জন্য সবাই আমার বাড়িতে আসতে থাকে। আমার ছেলে এ ধান বর্তমানে প্রতি কেজি ৪শ’ টাকা দরে বিক্রি করছে। তারপরও আমরা চাহিদামতো ধান দিতে পারছি না।’ এ ধানের চাষী ফাতেমার ছেলে লেবুয়াত বলেন, ‘মায়ের কথা শুনে ধান লাগাই। পরে ধানগুলো বড় হলে একটু আলাদা রকম দেখতে পাই। ধানের পাতাগুলো বেশি চ্যাপটা এবং ধানের মোচাগুলো বের হচ্ছিল কলার মোচার মতো। পরে খুশি লাগলে ধানগুলোর একটু বেশি যত্ন শুরু করি। এরপর থেকেই আমাদের এ সফলতা। আমি চাই এ ধানের জাত সমগ্র বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ুক। আশপাশের কৃষকরা আমাদের কাছ থেকে বীজ হিসেবে এ ধান সংগ্রহ করছে।’উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা সোলায়মান আলী বলেন, ‘যখন ব্যতিক্রম এ ধানগুলো দেখতে পাই তখন আমার সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করি। তারা এ ধান সংগ্রহ করে ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটে পাঠান। এ ধান নিয়ে এখন গবেষণা চলছে। আমি মনে করি এ ধানই হবে বাংলাদেশের অন্যতম জাতের ধান। যা দেশের খাদ্য ঘাটতি পূরণ করে বিদেশেও রফতানি করা যাবে।’
×