ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রোহিঙ্গা সঙ্কট

৫০ সবুজ পাহাড় এখন মরুভূমি

প্রকাশিত: ০৪:২৩, ১২ মে ২০১৮

৫০ সবুজ পাহাড় এখন মরুভূমি

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্য থেকে অনুপ্রবেশকারী ১২ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাকে মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়েছে সরকার। ওসব রোহিঙ্গা ক্যাম্পে সেবার নামে প্রকাশ্যে দিবালোকে পরিবেশ বিধ্বংসী পাহাড় কাটার মহোৎসব চালাচ্ছে ৯ এনজিও। হাজার হাজার রোহিঙ্গা শ্রমিক দিয়ে তান্ডব চালানো হচ্ছে শত ফুট উচ্চতার প্রায় অর্ধশতাধিক পাহাড়ে। পাহাড় কর্তন কাজে অসংখ্য বুলডোজারও ব্যবহার করা হচ্ছে। এনজিও কর্মীরা বিধিনিষেধ মানছে না। ইচ্ছেমত বনভূমি দখল ও নির্বিচারে পাহাড় কর্তন করে চলছে তারা। উখিয়ার সবুজ পাহাড় এখন ধূ ধূ মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। জানা যায়, এক সময়ের গহীন অরণ্য বালুখালী পশ্চিমপাড়া, জুমেরছড়া, থাইংখালীর লন্ডাখালী, ময়নারঘোনা, তাজনিরমারখোলা, কুতুপালংয়ের মধুরছড়া, লম্বাশিয়ায় নির্বিচারে এসব পাহাড় কাটার প্রতিযোগিতা চলছে। এতে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিবেশবিদগণ। প্রায় দুই কিলোমিটার বনাঞ্চল জুড়ে হাজার হাজার রোহিঙ্গা শ্রমিক প্রতিদিন ছোট-বড় প্রায় অর্ধশত পাহাড় কেটে শ্রেণী পরিবর্তন করেছে। আইওএম, রেডক্রিসেন্ট, কারিতাস, অক্সফার্ম, ওয়াল্ড ভিশন, এমএসএফ, এসিএফ, ডাব্লিউএফপি, ইউএনএইচসিআরসহ কিছু প্রভাবশালী এনজিও তাদের বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য এসব পাহাড় কেটে ন্যাড়া করে ফেলছে। পাহাড় কাটা কাজে নিয়োজিত রোহিঙ্গা শ্রমিকরা জানায়, ‘হেতারা রাজার হকুম লইয়ে কয় আঁরারে ৪শ’ টাকা দরে পা’র কাইটত দিয়েদে।’ অর্থাৎ সরকারের অনুমতি নিয়েছে বলে দাবি করে তারা (এনজিও) আমাদের ৪শ’ টাকা মজুরি দিয়ে পাহাড় কাটাচ্ছে। মাটি কাটা রোহিঙ্গা শ্রমিকদের হেড মাঝি মোঃ শরিফ জানান, গত ১ মাস আগে থেকে পাহাড় কাটা কাজ শুরু করেছে। এ পর্যন্ত প্রায় ৩০-৩৫টি পাহাড় কাটার কাজ শেষ হয়েছে। এদিকে পাহাড় কেটে বনভূমি ধ্বংস ও বন্যপ্রাণীসহ জীববৈচিত্র নিধনের জন্য সংশ্লিষ্ট এনজিও কর্মকর্তাদের তালিকা করার দাবি জানিয়েছেন সচেতন মহল। রোহিঙ্গাদের নিরাপদে আশ্রয়ের নামে যে ভয়াবহ পাহাড় কাটা হচ্ছে, তা বন্ধের দাবিতে কক্সবাজার জেলা প্রশাসক কার্যালয় চত্বরে ইতোপূর্বে মানববন্ধনও করেছে সচেতন মহল। কক্সবাজার বন ও পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের উপদেষ্টা অধ্যাপক এমএ আনোয়ারুল হক বলেন, রোহিঙ্গাদের পাহাড় কেটে আশ্রয় দেয়া এটা বড় ভুল সিদ্ধান্ত। এতে তাদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। বনবিভাগ, পরিবেশ অধিদফতর, পরিবেশবাদী সংস্থা ও পরিবেশবিদদের সম্পৃক্ত করে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় স্থল নির্ধারণ করা প্রয়োজন ছিল। সমন্বয় না করে ইচ্ছে মতো পাহাড় কেটে রোহিঙ্গাদের বসতি আগামীতে মারাত্মক প্রাকৃতিক বিপর্যয় ডেকে আনবে। নঈমুল হক চৌধুরী টুটুল বলেন, এমনিতেই রোহিঙ্গাদের কারণে স্থানীয়রা নানাভাবে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এবার পাহাড় কেটে উখিয়া-টেকনাফকে প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়া হচ্ছে। হাজার হাজার একর বনভূমি বিলীন তারাই করতে পারে, যারা বাংলাদেশের মঙ্গল চাই না। কক্সবাজার বন পরিবেশ সংরক্ষণ পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক দীপক শর্মা দিপু জানান, এনজিওরা যেভাবে পাহাড় কেটে মরুতে পরিণত করছে, তাতে মনে হয় বনভূমি সংরক্ষণের কেউ এখানে নেই। তিনি জানান, যেভাবে পাহাড় কেটে সাবাড় করা হচ্ছে, এতে এনজিওদের স্বার্থ সিদ্ধি হলেও এলাকার মানুষের জন্য ভয়াবহ পরিণতির দিন ঘনিয়ে আসছে। এসময় কেউ পার পাবে না। তাই এসব এনজিদের অপকর্ম ঠেকাতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। কক্সবাজার শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোঃ আবুল কালাম জানান, ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে রোহিঙ্গাদের সরিয়ে নিতে সরকার আরও ৫৪০ একর বনভূমি-পাহাড় বরাদ্দ দিয়েছে। তাই ওসব এলাকায় বর্ষার আগেই ঝুঁকিপূর্ণ রোহিঙ্গাদের নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করতে এনজিওরা কাজ করছে। তবে ঢালাও ভাবে পাহাড় কাটা বিষয়টি খতিয়ে দেখবেন বলে জানান তিনি।
×