ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিরুপায় হয়ে গ্রেফতার বাণিজ্যে বাধ্য হয় পুলিশ

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১২ মে ২০১৮

নিরুপায় হয়ে  গ্রেফতার বাণিজ্যে বাধ্য হয় পুলিশ

শংকর কুমার দে ॥ দেশের থানাগুলোতে পুলিশের ডিউটির জন্য প্রায়শ জনসাধারণের কাছ থেকে গাড়ি রিকুইজিশন কিংবা অনেক সময়ে বিভিন্ন স্ট্যান্ড থেকে গাড়ি সংগ্রহ করছে থানা পুলিশ। এই ধরনের ডিউটির আওতায় সরকারের কোন টিএডিএ নেই। আনুষঙ্গিক খরচাদি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকেই বহন করতে হয়। নিরুপায় হয়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা রাতে যেখানে যাকে পান ধরে থানায় নিয়ে গ্রেফতার বাণিজ্য করতে বাধ্য হন। দেশের থানা পুলিশকে গতিশীল করতে ৫৯২টি থানাতেই আরও যানবাহন চেয়েছে পুলিশ সদর দফতর। পুলিশ সদর দফতরের তৈরি করা প্রস্তাব থেকে পুলিশের এই করুন চিত্রের তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এই ধরনের তথ্য জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতরের তৈরি করা প্রস্তাব থেকে জানা গেছে, দেশের থানাগুলোতে জনবলের তুলনায় যে যানবাহন রয়েছে তা অপ্রতুল। এতে পুলিশের কাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হচ্ছে, যা উন্নত জনসেবার জন্য অন্তরায়। ফলে থানা পুলিশকে প্রয়োজনীয় রশদ সরবরাহ না করা পর্যন্ত কোন অবস্থাতেই থানা পুলিশের অনৈতিক কর্মকা- বন্ধ করা যাবে না। মাঠ পর্যায়ের যানবাহন, আবাসন, যাতায়াতসহ আনুষঙ্গিক সব বিষয়ে পুলিশকে স্বয়ং সম্পন্ন না করা পর্যন্ত তাদের কাছ থেকে শতভাগ সততা ও নিষ্ঠা আশা করা যায় না। এ জন্য এসব সমস্যার সমাধানকল্পে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা অপরিহার্য। পুলিশ সদর দফতরের তৈরি করা প্রস্তাবে বলা হয়েছে, থানাগুলোতে যেতে অনেকের অনীহার কারণ হচ্ছে থানাগুলোর পরিবেশ অনুন্নত ও ভয়ভীতি। থানাগুলোতে যত্রতত্র ময়লা, আবাসনের ব্যবস্থা নেই, পুলিশকে জনগণের বন্ধু হওয়ার সহায়ক পরিবেশের অভাব। বেশিরভাগ থানাতেই মহিলাদের জন্য আলাদা টয়লেট বা হাজতখানার ব্যবস্থা নেই। উপযুক্ত পরিবেশ ও লজিস্টিক সাপোর্ট সরবরাহ করার পর থানাগুলোতে জবাব দিহিতা ও স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা যাবে বলেও প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়। পুলিশ সদর দফতরের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, পুলিশের স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যানের আওতায় ৪৯১টি থানাকে অত্যাধুনিক ভবন গড়ারও প্রস্তাব দেয়া হয়। ইতোমধ্যে দেশের ১০১টি থানাকে অত্যাধনিক ভবণে উন্নীত করা হয়েছে। প্রতিটি থানায় ওপেন হাউস ডে নিয়মিত ব্যবস্থা করার তাগিদ দেয়া হয়েছে প্রস্তাবে। এই প্রস্তাবের আওতায় প্রতি মাসে একটি থানা ভিজিট করবেন জেলার পুলিশ সুপার। সেখানে স্থানীয় বাসিন্দাদের উপস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ওপেন হাউস ডে তে পুলিশ সুপার ও জনসাধারণ থানায় দায়েরকৃত বিভিন্ন মামলার বাদীর বক্তব্য শুনবেন। এতে তারা অকপটে সমস্যার কথা পুলিশ সুপারকে জানাতে পারবে। মামলার বাদীর কাছ থেকে শোনার পর পুলিশ সুপার সংশ্লিষ্ট মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে নিয়ে বসবেন। মামলার অগ্রগতির অবস্থা কোন গাফিলতি থাকলে তার জন্য জবাবদিহিতা নিয়ে প্রয়োজনীয় দিক নির্দেশনা দিবেন পুলিশ সুপার। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, প্রস্তাবে বলা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, থানার অফিসার ইনচার্জ মামলা নিতে গড়িমসি করেন। এ ধরণের সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ওই ওসিকে সাসপেন্ড করা হবে বলে প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়েছে। পুলিশকে আরও গণমুখী করার উদ্যোগ নিতে বেশ কিছু প্রস্তাব তৈরি করা হয়। পুলিশের ভাবমূর্তি উন্নয়নের জন্য পুলিশ প্রশাসনের সমস্যাগুলোর কথা তুলে ধরে তা সমাধানের দিক নির্দেশনা পেতেই এই ধরনের প্রস্তাব তৈরি করা হয়েছে। পুলিশ সদর দফতরের তৈরি প্রস্তাবের ভিত্তিতে দেশের জেলার পুলিশ সুপারের (এসপি) প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে, থানাগুলোতে গিয়ে কাউকে কখনও যাতে হয়রানির শিকার হতে না হয় সেই লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
×