ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি!

প্রকাশিত: ০৪:১৮, ১২ মে ২০১৮

বিরোধী দল জাতীয় পার্টির প্রধান প্রতিপক্ষ বিএনপি!

রাজন ভট্টাচার্য ॥ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে নানা পরিকল্পনা নিয়ে মাঠে নামছে বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। উদ্দেশ্য বিএনপির সঙ্গে পাল্লা দেয়া ও রাজনীতিতে নিজেদের অবস্থান শক্ত করা। আগামী মাস থেকেই লাঙ্গলে ভোট চেয়ে মানুষের কাছে যাবেন কেন্দ্রীয় নেতারা। ইতোমধ্যে ঢাকা ও চট্টগ্রামে মহাসমাবেশ হয়েছে। প্রতিটি বিভাগীয় শহরে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সমাবেশের তারিখ ঘোষণার কথা আছে। এছাড়াও নির্বাচনী গণসংযোগর অংশ হিসেবে লঞ্চমার্চ, ট্রেনমার্চের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। এভাবে সারাদেশে কর্মসূচীর মাধ্যমে নেতা-কর্মীদের সক্রিয় করার পাশাপাশি দলের শক্তি প্রদর্শনের কৌশল নিয়েছেন এরশাদ। একই সঙ্গে জোটগতভাবে জাতীয় পার্টির পক্ষে জনমত গঠন করবেন তিনি। দলটির নেতারা বলছেন, রাজনীতির মাঠে প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির কর্মসূচীর দিকে তাকিয়ে আছেন তারা। নির্বাচন সামনে রেখে বিএনপির পক্ষ থেকে জনমত আদায়ে যেসব কর্মসূচী নেয়া হবে এর সঙ্গে মিল রেখে আরও গণমুখী কর্মসূচী ঠিক করবে জাতীয় পার্টি। তবে বিএনপি কর্মসূচী গ্রহণে বিলম্ব করলেও তারা বসে থাকবে না। তাছাড়া আগামী নির্বাচনে সরকারে না আসতে পারলেও বিরোধী দলে থাকতে চায় এরশাদের দল। এজন্য সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে মাঠে নামছেন দলটির নেতারা। প্রয়োজনে জোটের আকার বাড়ানোরও পরিকল্পনা রয়েছে। নির্বাচনের আগে আগে বিভিন্ন দল থেকে বেশ কিছু হেভিওয়েট প্রার্থীও জাপায় যোগ দেয়ার কথা জানিয়েছেন নেতারা। ইতোমধ্যে দলের পক্ষ থেকে আসন প্রতি প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। প্রতি আসনে তিন জন প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। কোন কোন প্রার্থীকে নির্বাচনী প্রচার শুরুরও গ্রিন সিগন্যাল দিয়েছেন এরশাদ। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জনকণ্ঠকে বলেন, নির্বাচন করতে গেলে সাংগঠনিক শক্তি লাগবে। সারাদেশে দল লাগবে। এ ছাড়া নির্বাচনে জেতা সম্ভব নয়। একই সঙ্গে দেশ ও জাতির কল্যাণে কর্মসূচী দিতে হবে। এসব বিষয় মাথা রেখে জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে পার্টির চেয়ারম্যান টানা কর্মসূচী নিয়ে মাঠে নামছেন। তিনি বলেন, বিএনপির প্রধান নেতা দুর্নীতির মামলায় কারাগারে থাকায় দলটির সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ তাঁর মুক্তির আন্দোলন। এই বাস্তবতায় বিএনপির নির্বাচনী কার্যক্রম চালানোর সুযোগ নেই। আমরা এই সুযোগে মানুষের কাছে যেতে চাই। আমরা স্বচ্ছ, দুর্নীতিমুক্ত মানুষকে বোঝাতে চাই। তিনি বলেন, আমরা প্রথম পর্যায়ে তিন মাসের কর্মসূচী দেব। খুলনা, বরিশাল ও ময়মনসিংহে বড় ধরনের সমাবেশ করা হবে। তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে মানুষ ভালবাসে। কিন্তু আমাদের সাংগঠনিক শক্তি বেশ দুর্বল থাকায় সারাদেশের মানুষের কাছে যেতে পারি না। এজন্য দলকে সংগঠিত করতে হবে। মানুষের কাছে যাব। সবাইকে জানাব আমরা এখন আছি। আপনারা আমাদের ভোট দেন। শান্তি দেব। নিরাপত্তা দেব। আগের মতোই উন্নয়ন করব। যেমন এরশাদের ক্ষমতায় সময় সারাদেশে উন্নয়ন হয়েছিল। তিনি বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আমরা আরও বেশকিছু পরিকল্পনা হাতে নিয়েছি। এগুলোর মধ্যে রয়েছে সাংগঠনিক সফর, কল্যাণমুখী ইশতেহার ঘোষণা, যোগ্য প্রার্থী বাছাই, বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের কাছে জাপার শাসনামলের সোনালি দিনের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া, অঞ্চলভিত্তিক সভা-সমাবেশ, সেমিনার করা প্রভৃতি। তিনি জানান, দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় স্যার (এরশাদ) যাবেন। নৌ-পথে যাত্রায় আমাদের সঙ্গে জেলা উপজেলা নেতারাও যোগ দিতে পারবেন। ঢাকা থেকে যাত্রা শুরু হবে। এছাড়া ট্রেন ও সড়কপথেও বিভিন্ন জেলায় সফর করব। দলটির অন্তত ৫ প্রেসিডিয়ামের সদস্য, সাংগঠনিক সম্পাদকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নির্বাচন সামনে রেখে জাপার ৭৬ সাংগঠনিক জেলায় জোটের পক্ষ থেকে বর্ধিত সভার আয়োজন করা হবে। দেশের বিভাগীয় শহরগুলোতে মহাসমাবেশের আয়োজনে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তারা জানান, মেয়াদোত্তীর্ণ ২৯ জেলায় সম্মেলন শেষ করতে কেন্দ্র থেকে নির্দেশনা পাঠানো হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরেই এসব জেলায় সম্মেলন করা সম্ভব হচ্ছেনা। সম্মেলনের বড় বাধা হলো নেতৃত্বের সঙ্কট ও দলীয় কোন্দল। ৩০০ নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন সফল করতে জেলা, মহানগর, উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন থেকে শুরু করে ওয়ার্ড পর্যায়ে পৃথক কমিটি গঠন করবেন। এসব কাজ পরিচালনার জন্য প্রত্যেক এলাকায় দলের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডিয়ামের সদস্য, সংসদ সদস্য, কেন্দ্রীয়সহ জেলা, উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে বিশেষ কমিটি গঠন করা হবে। কর্মসূচী সফল করতে কেন্দ্রীয় সেল ও মনিটরিং সেল গঠনের প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। জানতে চাইলে জাপার প্রেসিডিয়াম সদস্য মীর আব্দুস সবুর আসুদ বলেন, দলের পক্ষ থেকে দায়িত্ব দেয়ার পর আমার মতো অনেক প্রার্থী ইতোমধ্যে মাঠে কাজ শুরু করেছেন। মানুষ জাতীয় পার্টিকে ক্ষমতায় দেখতে চায়। আশা করি সুষ্ঠু-শান্তিপূর্ণ ভোটের পরিবেশ নিশ্চিত হলে ও জাতীয় পার্টি রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের শিকার না হলে আমরা ভাল ফল পাব। জানা গেছে, সময়োপযোগী ইশতেহার তৈরি করতে একটি বিশেষজ্ঞ প্যানেলও চূড়ান্ত করা হয়েছে। নেতারা বলছেন, জনকল্যাণমুখী ইশহেতার উপহার দিতে চান তারা। যার প্রত্যেকটি ক্ষমতায় গেলে বাস্তবায়ন করা হবে। বিশেষ করে বেকারত্বসহ যুব সমাজের নানামুখী সমস্যা সমাধান, তথ্য প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, শিল্প স্থাপনসহ দেশের উন্নয়নে বিভিন্ন বিষয় ইশতেহারে প্রাধান্য পাবে। সম্প্রতি দলের যৌথ সভায় দ্রুত তৈরি ইশতেহার ও প্রকাশের তাগিদ দিয়েছেন বিরোধীদলের নেতা রওশন এরশাদ নিজেই। তিনি বলেছেন, ক্ষমতায় গেলে আমরা মানুষের জন্য কি করব তা এখনই চূড়ান্ত করে দেশবাসীকে জানাতে হবে। দলের নেতারা জানান, ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ-চাঁদপুর-শরীয়তপুর-ভোলা-বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় লঞ্চমার্চ করবেন এরশাদ। তিন হাজারের বেশি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন সবচেয়ে বড় লঞ্চ পারাবত-১২ নিয়ে হবে এ লঞ্চ যাত্রা। এছাড়াও আরও একাধিক লঞ্চ থাকবে বহরে। জানতে চাইলে দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুল ইসলাম মিলন বলেন, দলকে সংগঠিত করতে দলের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। সব মিলিয়ে জাতীয় পার্টি এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী অবস্থানে। নির্বাচনমুখী পরিকল্পনাও হাতে নেয়া হয়েছে। আশা করি জাপা আগামীতে ক্ষমতায় আসবে। কারণ মানুষ এখন জাতীয় পার্টিকে চায়। দলীয় সূত্রগুলো বলছে, আগামী নির্বাচনের মধ্য দিয়ে জাতীয় পার্টি যেন ভাল অবস্থানে থাকতে পারে সেজন্য প্রায় সব প্রস্তুতিই সম্পন্ন করেছেন এরশাদ। বিএনপি নির্বাচনে না এলে প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ হিসেবে মাঠে লড়বে জাপা। এজন্য আসন প্রতি নিজ দলের তিন জন করে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকা ঠিক করা হয়েছে। বিএনপি নির্বাচনে এলে আওয়ামী লীগের সঙ্গে ফের মহাজোট করবেন এরশাদ। এজন্য আওয়ামী লীগের কাছে ১০০ আসন চেয়ে প্রার্থী তালিকাও দিয়েছেন তিনি। তালিকায় নিজ দলের ৭০ জনসহ ৫৮ দলের সমন্বয়ে গঠিত সম্মিলিত জাতীয় জোট নেতাদের মধ্যে ৩০ জনের নাম থাকার কথা জানা গেছে। নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে সর্বশেষ ভারত সফর করেছেন তিনি। ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন এরশাদসহ জাপার কয়েক শীর্ষ নেতা। বৈঠক শেষে ঢাকায় ফেরার পর বিমানবন্দরে এরশাদকে গণসংবর্ধনা দিয়েছেন দলের নেতাকর্মীরা। তারা বলছেন, নির্বাচনী রূপরেখা চূড়ান্ত করে ভারত সফর শেষে দেশে ফিরেছেন এরশাদ।
×