ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রাজীব রাহুল

গল্প ॥ আলো আঁধারের গল্প

প্রকাশিত: ০৭:৪২, ১১ মে ২০১৮

গল্প ॥ আলো আঁধারের গল্প

॥ এক ॥ ঘন কুয়াশায় জমির আলপথ ধরে দৌড়াচ্ছে রেশমি। ধানগাছের সবুজ পাতায় জমে থাকা শিশির তার উরু পর্যন্ত ভিজিয়ে দিচ্ছে। এখনও আকাশে সূর্যের দেখা নেই। হাড় কাঁপানো শীতে কুয়াশার চাদর মুড়িয়ে অন্ধকারে ঘুমিয়ে আছে পুরো গ্রাম। রেশমির পা পিছলে যায়। তাকে তাড়া করছে আলো। বিশাল থাবা ছড়িয়ে ধরতে চায় রেশমিকে। অথচ সে অন্ধকারে এই আধা কিলো চোরা বিলটা পেছনে রেখে বড় রাস্তায় উঠতে চায়। কিন্তু ক্রমশ অন্ধকার কেটে যাচ্ছে। সে বাঁচতে চায়। তারেক মুন্সির সংসারে আর একদিনও থাকবে না। তারেক মুন্সি তার বউদের তালাক দেয় না আবার বউরা পালাতেও পারে না। সমাজ ও রীতির পরোয়া করে না সে। এ পর্যন্ত তিনটি বিয়ে করেছে তারেক। রেশমি তার তিন নম্বর স্ত্রী। মাস দুয়েক আগে বিয়ে হয়েছে রেশমির। এই অল্প সময়ে দুইবার পালাতে চেয়েছে রেশমি। কিন্তু পাড়ার লোকের কাছে ধরা পড়েছে। পরিণাম মোটা কেরেত বেতের বারি। সারা অঙ্গে কালছে সিটা পড়ছে রেশমির। ফর্সা শরীরে বেতের দাগের চেয়েও বেশি দগদগে ক্ষত হিসেবে উঁকি দিচ্ছে রাশেদার নির্মম মৃত্যু। আজ ঠিকঠাক সে বাড়ির সীমানা ছেড়ে আসতে পেরেছে। এ কাজে সহযোগিতা করেছে তারেক মুন্সির ছেলে রসু। যৌবনের শুরুতে প্রথম স্ত্রী জেসমিনকে অনেকটা জোর করেই বিয়ে করেছিল। বিয়ের চার বছর পর কোন সন্তান না হওয়ায় তারেকের অত্যাচারে গলায় ফাঁস নিয়েছিল জেসমিন। পর মেজ বউ রাশেদাকে বিয়ে করেছে ডাকাতি করতে গিয়ে। ॥ দুই ॥ একদিন পাশের ডেঙ্গা গ্রামে গভীর রাতে হানা দেয় তারেক মুন্সির দল। ততদিনে দলের প্রধান বনে গেছে তারেক। ঘরের মালামাল লুট করার সময় গেরস্থের যুবতী মেয়ে রাশেদার উপর চোখ পড়ে তারেকের। সবাইকে আটকে রেখে এক টানে রাশেদাকে বিছানায় নিয়ে যায় তারেক। পালোয়ানের সঙ্গে পেরে উঠতে পারেনি যুবতীর শরীর। ধান ভাঙ্গার ঢেকির বল্ল এসে আঘাত হানে তার শরীরে। সকালে গ্রামময় রটে গেল রাশেদার অপমানের আখ্যান। সে মরতে চায়। তারেক রাশেদার কথা ভুলতে পারে না। সেই রাতের সুখ তাকে তাড়া করে ফিরে। সপ্তাহ পরে সে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায় রাশেদার বাড়িতে। রাশেদা চোখের জল মুছে নেয়। ধর্ষিত নারীকে বিয়ে করার জন্য তারেকের প্রতি দুর্বল হয়। পরে রাতের বিছানায় রাশেদা আবিষ্কার করে তারেকই সেদিনের মুখোশ পড়া ডাকাত সর্দার। তারপর থেকে ঘুম আসে না রাশেদার। সে চোখ কান সজাগ রাখে। এক সময় পেটে সন্তান আসে। ছেলের বাপ হবে শুনে তারেক মুন্সি খুশিতে আটখানা হয়। সে মসজিদের ইমামকে মুরগি জবেহ করে দাওয়াত দেয়। এতিমখানার ছেলেরা এসে খেয়ে যায়। এতসব আয়োজন রাশেদার মনে খুশির রেখাপাত করতে পারে না। রাশেদার সন্তান ভুমিষ্ট হয়। তারেক মুন্সি নাম রাখে রাশেদ বিন তারেক। রাশেদা ডাকে রসু। সময় গড়িয়ে যায়। সে কৌশলে স্বামীকে ডাকাতি ছাড়তে বলে। তারেকের যৌবনে ভাটাপড়ে। ডাকাতি ছেড়ে সমাজ উন্নয়নের কথা ভাবে। জড়িয়ে পড়ে রাজনীতিতে। সময় বদলাচ্ছে সেই সঙ্গে দেশও। অজপাড়া গাঁয়ে শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বাড়তে থাকে। বিদ্যুত এসেছে। সরকার গ্রামে প্রাথমিক ও উচ্চ বিদ্যালয় স্থাপন করে। তারেকের দৃষ্টিতে এসব নষ্ট প্রজন্ম গড়তে চায় সরকার। যারা ইমামের ফাঁসির দাবিতে গণজাগরণ মঞ্চে স্লোগান দেয়। এসব নষ্টতা দূর করতে ক্ষমতার দরকার। তাকে এলাকার চেয়ারম্যান হতে হবে। এজন্য তার চেয়ে যোগ্য কেউ আছে?। ফালছলি হাটে তারেকের ছবি দিয়ে বিশাল বিলবোর্ড উঠে। ‘গরিব দুঃখি মেহনতি মানুষের বন্ধু, অন্যায়ের প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর। ছলিমপুর ইউনিয়নের কৃতী সন্তান তারেক মুন্সিকে আগামী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান হিসেবে দেখতে চাই- প্রচারে এলাকাবাসী। যদিও বিলবোর্ড পড়ে মুখ চেপে হাসে এলাকার লোকজন। তারেকের পেশিশক্তির ভয়ে ইলেকশন করার সাহস পায়নি কেউ। চেয়ারম্যান হওয়ার চার মাস পর রাশেদার মৃত্যু হয়। অতপর রেশমিকে বউ করে ঘরে আনা। সেদিন সকাল বেলা রসুকে ধরে পিটাতে শুরু করে তারেক। -ছোদানির পুত, এ্যাজিয়া মাডিত গাড়ি পেলাইয়ুম। ক্যান হতা এ্যায়ার হাই এ্যায়ার পরি, এ্যায়র নামে বদনাই। শেষমেষ রেশমিই ছেলেটাকে কেড়ে নিয়ে ঘরে আনে। তারপর আঘাতপ্রাপ্ত পিটে টাইগার বাম মালিশ করতে করতে বলে -কি এমন বলিছো বাপ, তোমাকে এমন মার খেতে হলো। : কিছু না মা। সে অনেক কষ্টের। তুমি সহ্য করতে পারবে না। -যতই কঠিন বিষয় হোক আমি শুনতে চাই। : তুমি পালাও ছোটমা। না মায়ের মতো তোমাকেও মরতে হবে। -এসব কি বলিস। মেজ আপা তো হার্ট এ্যাটাক করে মরিছে। : সে আমি দেখেছি। আমার মায়ের মৃত্যু কিভাবে হয়েছে। -তাক সেসব কথা। এখন তুমি স্কুলে চলি যাও। ৩. রেশমির মন আনচান করে। কি দেখি এমন লোকের সঙ্গে বিয়ে দিল বাপে। কি এমন বোঝা ছিলাম সংসারে। এমন সময় তারেক মুন্সি দাওয়ায় বসে ডাক দেয়- কিরে চুলার সামনে বসি কার চিন্তায় মরস। নাস্তা দে পরিষদে আবার কত লোকের বিচার-আচার জমা আছে কে জানে। তারেক এদিক-ওদিক করিমকে খোঁজে। মাদারি বাদামইয়া পুত গেল হডে। এমন সময় পুকুরপাড় মাড়িয়ে করিম উঠানে এসে দাঁড়ায়। কডে ঘুরস বেয়ানে ফজরত। দুই কদম হাঁটি ইমাম সাবরে সালাম দিই বলি হ। করিম মাথা নিচু করে বেরিয়ে যায়। ছোটবেলায় মা-বাবা হারা এতিম করিমকে রাস্তা থেকে এনে বাড়িতে তুলেছিল তারেক মুন্সির বাপ মোতালেব মুন্সি। মসজিদের ইমাম কসিমউদ্দি পড়ি কি মরি করে হাজির হয়। চেয়ারম্যান ডেকেছে বলে কথা। তারেক মুন্সিকে সালাম দিয়ে দাওয়ার সামনে চেয়ারে বসে পড়ে। তারেক কোন ভূমিকা ছাড়াই বলে,- ইমাম সাব আপনাকে অসময়ে স্মরণ করে কষ্ট দিলাম। না না কিযে বলেন। ডেকেছি বিশেষ কারণে। আজ একটা সুরাহ করতে হবে। শুনেছি গতরাতে সেলিমের নতুন বউটাকে রাগের মাথায় তিন তালাক দিয়েছে। সে বলল, সে আবার সেই তালাকপ্রাপ্ত বউটাকে ঘরে তুলতে চায়। তাহলে তো তাকে অন্য একজনের সঙ্গে হিল্লা বিয়ে দিতে হয়। এসব আপনি কি বলছেন চেয়ারম্যান সাব। এখন এ আইন পরিবর্তন করা হয়েছে, এখন তালাকও আদালতে গিয়ে লিখিতভাবে দিতে হয়। এ তালাক আইনের দৃষ্টিতে অবৈধ। সে চাইলে তার বউকে নিয়ে এখনও সংসার করতে পারবে। এসব কাট মোল্লাদের মনগড়া কথা। তালাক দেয়ারও একটা নিয়ম আছে। তারেক মুন্সি রেগে যায়। কিছু নিয়ম এই গ্রামে পূর্বপুরুষ ধরে চলছে আপনি তার বিরোধিতা করছেন। আপনি হাদিসের বিরোধিতা করছেন। আপনার তো জুব্বা গায়ে দিয়ে ইমামতি না করে কালো পোশাক পরে কোর্টে যাওয়া উচিত। শুনেন এসব কথা আর বলবেন না। তাহলে আপনাকে নাস্তিক মুরদাত ঘোষণা করবে গাঁয়ের মানুষ। এই ফাঁকে রেশমি এসে চা দিয়ে যায়। ইমাম সাহেব অনিচ্ছা সত্ত্বেও কাপ তুলে তাতে চুমুক দেয়। কিন্তু তার গলা দিয়ে চা নয় বিষ নামছে। ইমাম কসিমউদ্দি বুঝে যায় তাকে কি করতে হবে। তারেক ইমামকে নিয়ে পরিষদে যায়। বৈঠকে ঠিক করা হলো এই মেয়ের হিল্লা বিয়ে দেয়ার পর তালাকপ্রাপ্ত হলে তবেই সেলিম পুনরায় তাকে বিয়ে করে সংসার করতে পারবে। উপস্থিত কাজী ও ইমাম চেয়ারম্যানের সঙ্গে সায় দিল। ইমাম প্রস্তাব দিল চেয়ারম্যানের সঙ্গে এই মেয়েকে হিল্লা বিয়ে দেয়া হোক। উপস্থিত কেউ হ্যাঁ না ভোট না দিলেও। তারেক দাঁড়িয়ে বলে আমি ইমামের কথা ফেলতে পারি না। সেলিম না চাইলেও তার যুবতী বউকে বিয়ে করে বাড়ি নিয়ে যায় চেয়ারম্যান। ৪. রাতে রসু আবার বলল তুমি পালাও। কেন পালাব বাপ। সংসার করার জন্যই তো আমাকে বিয়ে দেয়া হয়েছে। যদি আমার মার মতো মরতে চাও থাক। কি বলিস। হ্যাঁ। রসু ফিরে যায় সেদিন দুপুরে যেদিন সে স্কুল থেকে ফিরে মাঠে খেলতে চলে যায়। যাওয়ার সময় দেখে মা চুলার সামনে বসে খই ভাঙ্গছে। মা বলল তাড়াতাড়ি ফিরিস বাপ। আধঘণ্টা পর রসু নাটাই আর ঘুড়ি নেয়ার জন্য ফিরে আসে ঘরের পেছনে দিয়ে আসতেই রান্না ঘরে গোঙ্গানির শব্দ আসে তার কানে। বাঁশের বেড়ার ফাঁক দিয়ে চোখ রাখে সে। দেখতে পায় তার মাকে চুলোর সামনে বাঁশ দিয়ে বারি মেরে তারপর সেই বাঁশ দিয়েই মাটিতে চেপে ধরেছে তারেক মুন্সি। রাশেদা বার বার হাত পা ছুড়ছে। রসু দৌড়ে করিম চাচাকে ডাকতে যায় মাঠে। এসে দেখে ডাক্তার এসেছে। তিনি বলেছে মা নাকি হার্ট এ্যাটাক করে মারা গেছে। রসু জেনে যায় তার মা পুকুরে গোসল করতে গিয়ে সাবান পানিতে পড়ে গেলে তা খুঁজতে গিয়ে ঘাটের নিচ থেকে একটা সিলভারের ডেকসি তুলে আনে। ডেকসির মধ্যে অনেকগুলো স্বর্ণের বার। যেটা নিয়ে রাশেদার সঙ্গে তারেকের সকালে ঝগড়াবাধে। পুনরায় ডাকাতির জিনিস বাড়িতে আনায় রাশেদা ক্ষেপে গিয়েছিল। সে পুলিশকে সব জানানোর ভয় দেখায়। এজন্যই তাকে মরতে হয়েছে। রসুকে করিম মুখ বন্ধ রাখতে বলেছে। কিন্তু মায়ের এমন মৃত্যু মানতে পারছে না রসু। তারপর রসুকে জড়িয়ে ধরে চোখের জল ছাড়লো রেশমি। ওদিকে পাশের রুমে নতুন বউ নিয়ে তারেক মুন্সির নিশি যাপন চলছে। রেশমির ঘুম আসে না। সে ভোর রাতে রসুকে দিয়ে চারদিক দেখে নিয়ে বাড়ির পেছনের দিকের সীমানা টপকে পালিয়েছে। তারপর থেকে প্রাণপণ দৌড়াচ্ছে। এইমাত্র সে বড় রাস্তা ধরে বাজারে এসে পৌঁছায়। পায়ে হেঁটে বাজারটা পেরিয়ে আসে। তেমন মানুষজন নেই রাস্তায়। কিছু লোক চায়ের দোকানে বসে আড্ডারত। শেষপ্রান্তে বয়স্ক এক লোক রিক্সার সিটে বসে বিড়ি টানছিল। রেশমি দরদাম ছাড়াই সেই রিক্সায় চেপে বসে। তার কাছে কোন টাকা নেই, এক কাপড়ে পালিয়েছে সে। ৫. রিক্সা এগিয়ে যায়। রেশমি মুখ খুলে। বুড়ো রিক্সা চালকের কাছে জানতে চায় গ্রামের চেয়ারম্যানের ভাল-মন্দ। তারেকের নাম নিলেই গোপাল দাশের বুকটা জ্বলতে থাকে। এই চেয়ারম্যান তারেকের কারণেই সে একাত্তরে ছেলেমেয়ে সংসার হারিয়ে নিঃস্ব আজ। মেয়েটা জন্ম দিতে গিয়ে গোপাল দাশের স্ত্রীর মৃত্যু হয়। তারপর অনেক কষ্ট করেই মেয়েটা বড় করে গোপাল। ছেলেটাও মায়ের আদর পেয়ে একরোখা হিসেবে বড় হয়েছে। মা মরার পর কেমন জানি একা হয়ে গিয়েছিল। গোপাল ছেলের কষ্ট বুঝত। কিন্তু সে মেয়েটাকে আগলে রাখতে গিয়ে ছেলের সঙ্গ দিতে পারেনি। এই তারেকের সঙ্গে ছেলে সুধীরের ছিল গলায় গলায় ভাব। একাত্তরের উত্তাল মার্চে গোপালের ছেলেটা ভারতে ট্রেনিং নিতে চলে গেলে। তারেক এলাকার দুই-তিনজন অস্ত্র নিয়ে গ্রামময় ঘুরে বেড়াত। বলত আমরা এই গ্রাম পাহারা দিচ্ছি কিন্তু গ্রামে মিলিটারি এলেই তারা সটকে পড়ত। সেই উত্তাল সময়ে একদিন গোপাল বাজারে গেছে সেই সুযোগে তারেক ঘরে ঢুকে তার কিশোরী মেয়েটাকে ধর্ষণ করল। গোপাল ঘরে ফেরার আগেই মেয়েটা ফাঁসি নিয়েছিল। তারপর ছেলের জন্য পথ চেয়ে বসে থাকা। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার পনেরো দিন পর চোরা বিলে তার ছেলেটার লাশ খুঁজে পায় গ্রামবাসী। কেউ কেউ বলেছে সুধীর যখন ফিরছিল তখনই তারেকের সঙ্গে নদীর পাড়ে দেখা হয়। তার সঙ্গে বাড়ি নিয়ে যায়। গোপাল পরে বুঝছে ছেলেটা বোনের অপমানের প্রতিশোধ নেবে সেই ভয়ে তারেক মুন্সি সুধীরকে কৌশলে মেরে ফেলেছে। তারপর থেকে গোপাল দাশের ঘর আছে, ঘরে মানুষ নেই। রিক্সা চালিয়ে যা পায়, খেয়ে না খেয়ে দিন যায়। বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধীর বিচার করছে। সেই ভয়ে তারেক মুক্তিযোদ্ধার সনদ নিয়ে বসে আছে। তারপর সরকারী দলে যোগদান। মুখে জয় বাংলা আর গোপাল দাশকে দেখলে দাঁত খেলিয়ে বলে কিরে মালাউনের বাচ্চা, এখনও মরস নাই? গোপাল চুপ থাকে তার বুকটা চৌচির হয়ে যায়। সে মাটির দিকে তাকায়। মাটিকে বলে আমাকে গ্রহণ কর। কিন্তু মাটি ফাঁক হয় না। অথচ এই মাটিকেই মা মনে করে সে। তার কারণেই এলাকার পুছকে পাতি নেতা জসিমের চা দোকানের ছেলেটা যখন বলে গোপাল দাদার এক পা রেন্ডিয়া তখন দাঁতে দাঁত চেপে রাখে। সীতাকে মাটি গ্রহণ করেছিল। সীতার অপমানে মাটিরও অপমান লেগেছিল কিন্তু গোপাল দাশের অপমানে এই বদ্বীপের মাটির অপমান হয় না। গোপাল মনকে বুঝ দেয় হয়ত বঙ্গবন্ধুর রক্তের চরম অপমানের পর মাটির অনুভূতি ভোঁথা হয়ে গেছে। গোপালের কথাগুলো রেশমির বুকে দলা পাকিয়ে দেয়। রিক্সাটা এগিয়ে যায়। এদিকে তারেক মুন্সির বাড়িতে হৈচৈ পড়ে যায়। অনেক খোঁজা হলো কিন্তু রেশমির কোন সাড়া শব্দ নেই। তারপর বাপের বাড়িতে লোক পাঠানো হলো। সেখান থেকে খবর এলো মেয়েটি আর তারেকের সংসার করবে না। তারেক চিন্তায় পড়ে সে কয়টা বা বিয়ে করবে। তার সংসার আগলে রাখবে কে? এদিকে সেলিম এসে বসে আছে তারেক মুন্সির দাওয়ায়। তার বউকে তালাক দিলে সে নিয়ে যাবে আবার বিয়ে করে সংসার করবে। তারেক ভাবছে এই হিল্লা বিয়েটা করতে গিয়েই তো তারেকের বউটা পালিয়েছে। তাহলে সে কেন তালাক দেবে... ?
×