ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অদ্ভুত

প্রকাশিত: ০৭:৪১, ১১ মে ২০১৮

অদ্ভুত

সত্যি বলতে কি এবারই প্রথম বারের মতো এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলাম আছিয়া সুলতানা অপুর নভেলা জাতীয় ছোটগল্প ‘অদ্ভুত’ পড়ে। ক্যানো এই ভুতুড়ে অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছি তার একটা ব্যাখ্যা দেয়া দরকার। কারণ এই বইটি ভাল হয়েছে কি মন্দ হয়েছে, সেটা নির্ধারণ করার আগে স্বীকার করতে হবে তার লেখার ক্ষমতা রয়েছে। এই ধরনের ঝরঝরে গদ্য লেখার বৈশিষ্ট্যতা প্রথমেই পাঠকদের আকৃষ্ট করবে। তবে আমাদের মতো নাক উঁচু স্বভাবের লেখকরা সরাসরি ধমকাবেন লেখককে- একটু রয়ে-সয়ে বই প্রকাশ করলে কি সমস্যা হতো। বইটা পড়তে গিয়ে বার বার ভেবেছি, এটাই হয়ত তারুণ্যের বৈশিষ্ট্য। লেখক আছিয়া সুলতানা অপু বইটির নাম রেখেছেন ‘অদ্ভুত’। এই নামকরণের প্রেক্ষাপটে এক ধরনের অতি লৌকিক ঘটনার সংমিশ্রণ ঘটিয়েছেন। সেটা জানতেই বইটার পাঠ প্রক্রিয়াকে অগ্রসর করে দেয়। আমার এই মন্তব্যের অর্থ এই যে, বইটিতে অশরীরী চিন্তা-ভাবনার চমৎকার ঢেউ জোয়ার ভাটার মতো ওঠা নামা করছে। বলা বাহুল্য নায়িকা পাপড়ির জীবনে যা ঘটেছে সেটাই হয়ত স্বাভাবিক, লেখকের বলার গুণে তা হয়ে গেছে অস্বাভাবিক। গল্পের নায়িকা পাপড়ির নায়ক এডওয়ার্ডের সঙ্গে হঠাৎ একটি ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আলাপ হয়। পরে পাপড়ি জানতে পারে ছেলেটি একজন ডাক্তার। সে চিকিৎসা বিষয়ে গবেষণা করছে। সেই সময় এডওয়ার্ড বুঝতে পারে পাপড়ির মধ্যে এক ধরনের অস্বাভাবিকতা রয়েছে। যেমন- এডওয়ার্ড এক জায়গায় পাপড়িকে জিজ্ঞাসা করছেÑ ‘এডওয়ার্ড বলে, বেশিক্ষণ বসে থাকলে তোমার প্রোবলেম। আবার হাঁটাহাঁটি করলেও প্রোবলেম তাই না।’ বলা বাহুল্য পাপড়ি ও এডওয়ার্ডের মধ্যে প্রেম বলতে সেটাও স্বাভাবিক নয়। এই ভাবে এক সময় শেষ হয়ে যায়। তখন আরও অদ্ভুত লাগে। আসলে এডওয়ার্ড বেশ কয়েক বছর আগে মারা গেছে। আসলে এই ধরনের গল্পের ঘটনামালা আমাদের চিরাচরিত ঘটনার সঙ্গে মেলে না। যদিও সমালোচক মাহফুজুর রহমান আখন্দ লেখকের গল্পের এই দিকটির ওপর লক্ষপাত করে বলেছেন, ‘এখনও বুঝে উঠতে পারেনি পাপড়ি কি হতে যাচ্ছে, অথবা কীইবা হয়ে গেল। সব কিছুই কেমন অদ্ভুত লাগে।’ বলা বাহুল্য এই মতামতকে আমরা কোন ভাবেই সমর্থন করতে পারি না। কারণ পাপড়ির এই না বোঝার ভেতর দেশে এক ধরনের দর্শন কাজ করেছে। সেটা হলো এই যে, আমরা কি সত্যিই বছরের পর বছর একসঙ্গে বসবাস করে একে অপরকে বুঝতে পারি? আসলে আমাদের বেঁচে থাকাটাই অদ্ভুত লাগে। মানুষ হলো অনন্ত রহস্যের জীব। এই নভেলার অন্যতম ত্রুটি হলো ঘটনার অস্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে গেছে। লেখকের জানা উচিত মাঝে মাঝে থামতে দেয়ার অভ্যাস করা দরকার। তবে ক্রমাগত চর্চার মাধ্যমে এই অভ্যাসটা উপার্জিত হয়ে থাকে। আছিয়া সুলতানা অপু প্রতিশ্রুতিশীল বলেই এত কথা বললাম। চর্চার মাধ্যমে তাকে আরও এগিয়ে যেতে হবে। পরিলেখ প্রকাশনী থেকে চমৎকার প্রচ্ছদে বলতে গেলে বিষয় বস্তুর সঙ্গে মানানসই হয়েছে। ভাল-মন্দ মিশেল বলেই এই গ্রন্থটির বহুল প্রচার কামনা করছি। খুরশীদ আলম বাবু
×