ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আজব হলেও গুজব নয়;###;প্রদীপ সাহা

কেটে গেলেও গজায় অঙ্গ!

প্রকাশিত: ০৭:৩৯, ১১ মে ২০১৮

কেটে গেলেও গজায় অঙ্গ!

মেক্সিকোয় গিরগিটির মতো দেখতে প্রায় ২০ সেন্টিমিটার দীর্ঘ এক ধরনের লেজযুক্ত অদ্ভুত উভচর সরীসৃপ প্রাণী আছে, যার নাম ‘আক্সোলোটল’ বা জলদৈত্য। সবচেয়ে অদ্ভুত ও বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এই প্রাণীটির কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা পড়লেও তা আবার সহজে গজিয়ে উঠতে পারে। শুধু তাই নয়, নিজ থেকে রক্তক্ষরণও বন্ধ হয়ে যায় কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। দেখলে মনেই হবে না, এই প্রাণীগুলোর এমন অসাধারণ গুণ রয়েছে। কঠিন দুর্ঘটনায় আহত রোগীদের চিকিৎসায় এই বিশেষ নৈপুণ্য কাজে লাগানো যায় কি-না, তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা চিন্তা-ভাবনা করেছেন। জার্মানির হানোফার মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের বায়োরিজেনারেশন সেন্টারে বিজ্ঞানীরা এই অদ্ভুত প্রাণীটির প্রকৃতিপ্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা নিয়ে গবেষণা করেছেন জোরালোভাবে। গবেষক ক্রিস্টিনা আলমেলিং বলেছেন, বায়োরিজেনারেশন সেন্টারে শুধু গবেষণাই নয়, জীবগুলোর সুরক্ষা ও প্রজননের দিকেও তারা লক্ষ্য রেখেছেন। বিশেষ করে মেক্সিকোর লেজযুক্ত উভচর প্রাণী বা আক্সোলোটল নিয়েই এখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়েছে। এদের বংশবিস্তারের বিষয়টিও ভালোভাবে পরীক্ষা করা হয়েছে এবং দেখা গেছে, এগুলোকে সহজেই লালন-পালন করা যায়। তবে সমস্যা হলো, পরিবেশ দূষণের কারণে উৎপত্তিস্থল মেক্সিকোয় এই সরীসৃপগুলোকে সচরাচর দেখা যায় না। হানোফারের গবেষণাগারটিতে মোট ১২০টি আক্সোলোটল রাখা ছিল। অলস ভঙ্গিতে এ্যাকুরিয়ামের এদিক-সেদিক অবস্থান করেছে উভচর এই প্রাণীগুলো। গবেষক ক্রিস্টিনা আলমেলিং বলেছেন, এ্যাম্ফিবিয়াস আক্সোলোটল পুনরুজ্জীবনের ক্ষেত্রে এক দারুণ বিস্ময়! কোনো দুর্ঘটনায় কিংবা অন্য কোনো জন্তুর কামড়ে কোনো অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা পড়লে আবার তা এদের শরীরে গজিয়ে ওঠে। অঙ্গচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর কী ঘটে তা দেখার জন্য বিজ্ঞানীরা প্রাণীটির পরীক্ষামূলক অপারেশনও করেছেন। বিজ্ঞানী বিয়র্ন মেনগার একটি আক্সোলোটলকে ন্যার্কোটিক দিয়ে অচেতন করে এর একটি পা অপারেশন করে ছেদ করেন। সাধারণ অপারেশনের মতোই এর অঙ্গটি অপারেশন বা ছেদ করা হয়। তারা বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ্য করেছেন, কাটার ক্ষতটাতে কোনো ওষুধ লাগানোর দরকার হয়নি। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই রক্তপাত বন্ধ হয়ে গেছে। আর অত্যন্ত দ্রুত ঘটে গেছে এসব অবিশ^াস্য এবং অলৌকিক ঘটনা। এত দ্রুত এসব ঘটনা ঘটায় তাদের কাছে বারবারই মনে হয়েছে, এই প্রাণীদের কাছে অঙ্গচ্ছেদ যেন একটি অতি সাধারণ ব্যাপার! বিয়র্ন মেনগার ডক্টরেটের থিসিসের জন্য আক্সোলোটলের ওপর তিনশ’ বারের মতো এ ধরনের অপারেশন করেছেন। প্রত্যেকবারই তিনি অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছেন, সেকেন্ডের মধ্যেই রক্তপাত বন্ধ হয়ে যায় এবং কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে মাংসের তন্তু দিয়ে এর ঘা’ও শুকিয়ে যায়। স্তন্যপায়ী প্রাণীদের তুলনায় এদের ব্যাপারটা ঘটে ভিন্নভাবে। ঘা’টা শুকানোর সঙ্গে সঙ্গে এর নিচের অংশও ভালো হয়ে যায়। কয়েক দিনের মধ্যে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয় এবং কেটে যাওয়া পা’টা আবার বেড়ে উঠতে থাকে। আর কয়েক সপ্তাহের মধ্যে নতুন পা সম্পূর্ণ আকার ধারণ করে। এই প্রক্রিয়াটা কীভাবে ঘটে তা জানতেই বিজ্ঞানীরা অনেক বেশি উৎসুক হয়ে পড়েছেন। কোনো কোনো মাছের মধ্যেও এ ধরনের পুনরুজ্জীবন প্রক্রিয়া দেখা যায়। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, চারপায়ী মেরুদ-যুক্ত প্রাণী হিসেবে আক্সোলোটল জিনের দিক দিয়ে মানুষের কাছাকাছি। তাই এই উভচর প্রাণীটির প্রকৃতিপ্রদত্ত বিশেষ দক্ষতা মানুষের ক্ষেত্রেও কাজে লাগানো যেতে পারে বলে বিজ্ঞানীরা আশাবাদী। মানুষের চামড়া বা হাড়ে বড় রকমের আঘাত বা খুঁত হলে নিজের শরীরের কোষ প্রতিস্থাপনেও অনেক সময় ভালো হয় না। তাই বিজ্ঞানীরা এমন এক পদ্ধতির খোঁজ করছেন, যার সাহায্যে পুনর্গঠন প্রক্রিয়াটি সহজ হয়। এক্ষেত্রে এই আক্সোলোটল নামের উভচর প্রাণীর প্রকৃতিপ্রদত্ত ক্ষমতাটা কাজে লাগাতে চান তারা। বিজ্ঞানীরা এমন এক ওষুধ আবিষ্কার করতে চান, যার মাধ্যমে দুর্ঘটনায় অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা গেলে আক্সোলোটলের মতোই দ্রুত আরোগ্যলাভ সম্ভব হয়।
×