ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

দু বছর পর আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের পরিকল্পনা

মাহাথির একটি নাম, একটি ইমেজ

প্রকাশিত: ০৬:৩৮, ১১ মে ২০১৮

মাহাথির একটি নাম, একটি ইমেজ

সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে শেষ পর্যন্ত মালয়েশিয়ায় আবারও প্রধানমন্ত্রী হলেন মাহাথির বিন মোহাম্মদ। বুধবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তার নেতৃত্বাধীন বিরোধী পাকাতান হারাপান (এ্যালায়েন্স অব হোপ) জোট পার্লামেন্টে ২২২টি আসনের মধ্যে ১১৩টি জেতে। ক্ষমতাসীন ন্যাশনাল ফ্রন্ট (বারিসান ন্যাশনাল) পায় ৭৯টি আসন। বিরোধী জোটের জয়ের মধ্য দিয়ে ন্যাশনাল ফ্রন্টের ছয় দশকের শাসনের অবসান ঘটে।- এএফপি ও বিবিসি। মাহাথির ১৯৮১ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত ২২ বছর প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। এর ১৫ বছর পর তিনি আবার ওই পদে ফিরে গেলেন। তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার ৭০ বছরের বেশি। তার মতে, জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সংশোধনের জন্য আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হয়েছেন। তিনি কেবল তার একসময়ের শিষ্য নাজিব রাজাককেই পরাজিত করেননি, ‘ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন’কে হারিয়ে এক সময়ের প্রতিপক্ষ পাকাতান হারাপান কোয়ালিশনের নেতৃত্বের দায়িত্বও বুঝে নিয়েছেন। মাহাথির বলেছেন তিনি দুইবছর ক্ষমতায় থাকতে চান। এরপর তিনি কারাবন্দী নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। ২১ বছর বয়সে ইউএমএনওতে যোগ দেয়ার মাধ্যমে রাজনীতিতে নামেন মাহাথির। পরবর্তী সাত বছর একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি প্রাকটিস অব্যাহত রাখেন। ১৯৬৪ সালে তিনি কেদাহ প্রদেশ থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হন। তখনকার প্রধানমন্ত্রী টেঙ্কু আবদুর রহমানের সমালোচনা করে তিনি একটি খোলা চিঠি লেখায় ১৯৬৯ সালে তিনি সেই আসনটি হারান ও দল থেকেও বহিষ্কৃত হন। এরপর তিনি ‘মালয় ডিলেমা’ নামের একটি বিতর্কিত বই লেখেন। সেখানে তিনি মালয় জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করা এবং দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বিবেচনা করার কথা বলেন। তাকে পুনরায় দলে ফেরত নেয়া হয় এবং ১৯৭৪ সালে তিনি এমপি হয়ে শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান। ১৯৮১ সালের ১৬ জুলাই তিনি প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন। তার শাসনামলে মালয়েশিয়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। যদিও তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কিছু অভিযোগ আছে, কিন্তু অর্থনৈতিক সাফল্য তাকে জনপ্রিয় নেতায় পরিণত করে। ২০০৩ সালের ৩১ অক্টোবরে অবসরের দিন তিনি বলেন, ‘আমি অসন্তুষ্ট...কারণ সফল হওয়ার জন্য আমি যেসব অর্জন করতে চেয়েছিলাম, তার সামান্যই অর্জন করতে পেরেছি।’ মাহাথির ২০০৮ সালের নির্বাচনের দলের খারাপ ফলের জন্য উত্তরসূরি আবদুল্লাহ আহমদ বাদাবির প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। বাদাবির পদত্যাগের পর নাজিব রাজাক ক্ষমতায় আসেন। প্রথমদিকে নাজিবকে সমর্থন করলেও দেশটির একটি বিনিয়োগ তহবিলে নাজিব রাজাকের দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ মাহাথির নাজিবের কট্টর সমালোচকে পরিণত হন। ২০১৬ সালে তিনি এবং আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা দল থেকে পদত্যাগ করেন এবং বিরোধী পক্ষে যোগ দেন। নাজিব বুধবারের নির্বাচনের ফল মেনে নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার তিনি জনগণের ইচ্ছার প্রতি সম্মান দেখাবেন বলে জানান। ‘আমি ও আমার সহকর্মীরা জনগণের রায় মেনে নিয়েছি। ন্যাশনাল ফ্রন্ট পার্লামেন্টের নীতির প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে’ বৃহস্পতিবার টেলিভিশনে প্রচারিত সংবাদ সম্মেলনে নাজিব এ কথা বলেন। মাহাথিরের নেতৃত্বে থাকা বিরোধীদলগুলো নাজিবের বড় ধরনের দুর্নীতি ও ৬০ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা ন্যাশনাল ফ্রন্টের নতুনভাবে কর আরোপের বিষয়ে ত্যক্তবিরক্ত হয়ে উঠেছিল। কোন একক দলই নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পাওয়ায় নাজিব জানান, পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, এটি রাজা ঠিক করবেন। তিনি আরও বলেন, ‘মালয়েশিয়ার সকল নাগরিককে শান্ত থাকার এবং রাজার বিজ্ঞতার প্রতি আস্থা রাখার জন্য অনুরোধ করছি।’ এর আগে মাহাথির জানান, বিরোধীপক্ষ প্রতিনিধি পাঠিয়ে তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছে। তিনি বলেন, নতুন প্রধানমন্ত্রীর শপথ খুব শীঘ্রই হতে পারে। এ দিকে, নতুন সরকারের বিপুল সংখ্যক সমর্থক রাজধানী কুয়ালালামপুরের সড়কে নেমে তাদের অপ্রত্যাশিত বিজয়ে আনন্দ মিছিল করছেন। নাজরিনি নাজিবুদ্দিন নামে একজন বলেন, ‘আমি খুব খুশি। আমি আশা করি, আমরা এবার একটি ভাল মালয়েশিয়া পেলাম। মাহাথিরের এ অপ্রত্যাশিত জয়ে উৎসবে মেতেছে মালয়েশীয়বাসী। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও কয়েক বিলিয়ন ডলারের দুর্নীতির অভিযোগে নাজিবের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছিল। ‘আমরা প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছি না। আমরা আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে চাচ্ছি,’ বলেছেন মাহাথির। রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে নিজ জোট পাকাতান হারাপানের জয় দাবি করার সময় মাহাথিরকে বেশ উৎফুল্ল লাগে। বৃহস্পতিবার দিনের পরবর্তী কোন এক সময় মালয়েশিয়ার রাজার সঙ্গে দেখা করবেন তিনি। কুয়ালালামপুরের রাজপ্রাসাদে রাজা মালয়েশিয়ার সাংবিধানিক রাজতন্ত্রের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নিয়োগপত্রে স্বাক্ষর করবেন।
×