ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্প প্রতিষ্ঠানে ২০ ভাগ শ্রমিকের সিদ্ধান্তে ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে

প্রকাশিত: ০৬:০৩, ১১ মে ২০১৮

শিল্প প্রতিষ্ঠানে ২০ ভাগ শ্রমিকের সিদ্ধান্তে ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানে ২০ ভাগ শ্রমিকের সিদ্ধান্তে গ্রহণ করা যাবে ট্রেড ইউনিয়ন। এর আগে শ্রমিকদের এই সংখ্যা ছিল ৩০ ভাগ। তবে বিদেশী কূটনীতিকরা এই সংখ্যা কমিয়ে ১০ ভাগ করার সুপারিশ করেছে। বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে শ্রম আইন সংশোধন নিয়ে বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে এক বৈঠকে এই সুপারিশ করা হয়। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত এই বৈঠকে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক, আইন বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হক, শ্রম মন্ত্রণালয়ের সচিব আফরোজা খান উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জার্মান, জাপান, প্রভৃতি দেশের কূটনীতিকরা অংশগ্রহণ করেন। এতে ইউরোপীয় ইউনিয়ন, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা ও শ্রমিক নেতারাও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে লেজিসলেটিভ ও সংসদবিষয়ক সচিব মোহাম্মদ শহীদুল হক সাংবাদিকদের জানান, বর্তমান শ্রম আইন সংশোধনের বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়েছে। বর্তমান শ্রম আইনে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করতে হলে মোট শ্রমিকের ৩০ শতাংশের প্রয়োজন হয়ে থাকে। এই আইন সংশোধন করে ২০ শতাংশ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিদেশী কূটনীতিকরা শ্রম আইনের ট্রেড ইউনিয়ন করার জন্য এই সংশোধনীর ক্ষেত্রে মোট শ্রমিকের ১০ শতাংশের মতামত দিয়েছিল। তবে আমরা মধ্যম পর্যায়ের একটি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। সেটা হলো ২০ শতাংশ। মোহাম্মদ শহীদুল হক বলেন, বৈঠকে শিল্প কারখানা পরিদর্শনের বিষয়েও বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। শ্রম এখন থেকে ইপিজেড এলাকার শিল্প প্রতিষ্ঠানেও সরকারের কল কারখানা পরিদর্শকরা পরিদর্শন করতে পারবেন। ইপিজেড শ্রমিক ইউনিয়ন গঠন নিয়ে বৈঠকে আলোচনার বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদ শহীদুল হক বলেন, ইপিজেড এলাকায় ট্রেড ইউনিয়ন নেই। তবে শ্রমিক কল্যাণ সংস্থা রয়েছে। এই শ্রমিক কল্যাণ সংস্থাই শ্রমিকদের সুবিধা-অসুবিধা দেখে থাকে। সূত্র জানায়, পোশাক শিল্প শ্রমিকদের অধিকার নিশ্চিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা সোচ্চার ভূমিকা পালন করছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থাও শ্রম আইন সংশোধনের দাবি জানিয়ে আসছিল। সে লক্ষ্যে ২০১৩ সালে শ্রম আইনের সংশোধনী আনে সরকার। সেই শ্রম আইনের ভিত্তিতে ২০১৫ সালে শ্রম বিধিমালা প্রণয়ন করা হয়। ২০১৩ সালে সংশোধিত শ্রম আইনে শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা হয়। তবে সেই সংশোধনী আইনে শিল্প প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের বিধিতে আপত্তি ছিল বিদেশী কূটনীতিকদের। তারা দাবি করে আসছিলেন ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের ক্ষেত্রে কোন শিল্প প্রতিষ্ঠানে ১০ শতাংশ শ্রমিক একত্রিত হলেই যেন সেটা গঠন করতে পারে। এ নিয়ে সর্বশেষ গত ৭ মে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠকও হয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বিদেশী কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশের পোশাকশিল্প পণ্যের বৃহত্তর ক্রেতা ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। এছাড়া পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্ম পরিবেশ নিয়েও তারা দীর্ঘদিন ধরে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছে। সে কারণে শিল্প প্রতিষ্ঠানের কর্ম পরিবেশ ও শ্রমিক অধিকার সুরক্ষায় বিদেশী কূটনীতিক ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিদের মতামতকে প্রাধান্য দিয়ে আসছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত বৈঠকে শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক ও শ্রমিক প্রতিনিধিরাও যোগ দেন। বৈঠকে তাদের মতামতকেও প্রাধান্য দেয়া হয়। সব পক্ষ মিলেই এই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
×