ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাংকের ২ লাখ কোটি টাকা লুট করেছে

প্রকাশিত: ০৬:০১, ১১ মে ২০১৮

আওয়ামী লীগ সরকার ব্যাংকের ২ লাখ কোটি টাকা লুট করেছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতার ৯ বছরে দেশের অধিকাংশ সরকারী-বেসরকারী ব্যাংক ও ব্যাংক বহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ধ্বংসের মুখে পতিত করেছে উল্লেখ করে এ সময়ে ২ লাখ কোটি টাকা লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ অভিযোগ করেন। ফখরুল বলেন, শুধু ব্যাংকিং খাতে লোপাট নয়, বড় বড় মেগা প্রজেক্ট দুর্নীতি, শেয়ার বাজার দুর্নীতি করে দেশের অর্থনীতিকে পঙ্গু করে দেয়া হয়েছে। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে আর্থিক খাতের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় আনা হবে। এদের বিচার জনতার আদালতে অবশ্যই হবে। বিএনপির মহাসচিব বলেন, সরকার নিজেদের লোকদের সরকারী ব্যাংকগুলোতে বড় পদে বসিয়ে লুটপাট করছে। এর মাধ্যমে দেশের হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাট করেছে। তারা রাজনৈতিক বিবেচনায় ঋণ দিয়ে দেশের ব্যাংক খাতকে দেউলিয়া করে দিয়েছে। তিনি বলেন, সুশাসনের অভাব, জবাবদিহিতার অভাব, দুর্নীতি, লুটপাট, নীতিহীনতা আর বিশৃঙ্খলা সব মিলিয়ে এক অস্থিতিকর অবস্থায় রয়েছে ব্যাংকিং খাত। ঋণের নামে বিভিন্ন কারসাজি করে গ্রাহকের প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা লুটে নিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা। এ কারণে, দেশের ব্যাংকিং সেক্টর মুখ থুবড়ে পড়েছে। দেশের একটি স্বনামধন্য গবেষণা সংস্থা তাই ২০১৭ সালে ব্যাংকিং সেক্টরের সার্বিক বিপর্যয়ের চিত্র তুলে ধরতে গিয়ে ২০১৭ সালকে ‘ব্যাংক কেলেঙ্কারির বছর’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। দেশের সব ব্যাংকের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের টাকা চুরি হয়েছে সরকারের মদদে। কারণ এফবিআই বলেছে, ব্যাংকের অর্থ চুরি করা লোকজন ব্যাংকের ভেতরেই অবস্থান করছে। ইসলামী ব্যাংকের বিষয়ে তিনি বলেন, দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংককে একটি বিশেষ গ্রুপের হাতে দিয়ে শেষ করে দেয়া হয়েছে। এখন শোনা যাচ্ছে ইসলামী ব্যাংকেও তারল্য সঙ্কট দেখা দিয়েছে। আমানতকারীরা তাদের টাকা পাচ্ছেন না ঠিকভাবে। এমনকি ব্যাংকের সরকার নিয়োগকৃত চেয়ারম্যান পদত্যাগ করেছেন। ফখরুল বলেন, ব্যাংকিং খাতকে ধ্বংস করতে সরকার এখন নতুন নিয়ম করেছে। আগে বেসরকারী ব্যাংকের পরিচালক পদে এক পরিবারের দুজন করে তিন মেয়াদে ছয় বছর থাকতে পারত। এখন সরকার সেটিকে পরিবর্তন করে এক পরিবারের চারজনকে তিন মেয়াদে ৯ বছর ক্ষমতায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে। যাতে তারা বড় বড় পুকুর চুরি করতে পারে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলো তীব্র তারল্য সঙ্কটে ভুগছে। আমানতকারীরা তাদের টাকা ফেরত নিতে চাইছে কিন্তু তাদের আমানত ফেরত পাচ্ছেন না। চেক দিলেও সময়মতো টাকা পাচ্ছে না। অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা করে ফখরুল বলেন, ব্যাংকের প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা লোপাট হলেও অর্থমন্ত্রী বলছেন এটি বড় কিছু নয়। আমাদের বুঝে আসে না আর কত টাকা লোপাট হলে আবুল মাল আবদুল মুহিতের কাছে বড় কিছু মনে হবে। তিনি বলেন, শেখ আবদুল হাই বাচ্চু রাজনৈতিক বিবেচনায় চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে বেসিক ব্যাংকের দুর্নীতি শুরু হয়। তিনি অনিয়মের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দিয়ে ব্যাংককে ধ্বংস করে দিয়েছেন। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর সোনালী ব্যাংকের হলমার্ক গ্রুপ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটে। এ ব্যাংক থেকে হলমার্ক গ্রুপের লোপাটকৃত অর্থের পরিমাণ সাড়ে চার হাজার কোটি টাকারও বেশি। এই অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তৎকালীন একজন উপদেষ্টাসহ রাজনৈতিক বিবেচনায় নিযুক্ত সোনালী ব্যাংকের পরিচালনা পরিষদের সদস্যদের নাম জড়িয়ে আছে। এছাড়াও বিসমিল্লাাহ গ্রুপের ১২শ’ কোটি টাকার বহুল আলোচিত ঋণ জালিয়াতির কথা সবাই জানেন। এর পরে হলো বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরি, শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি, বেসিক ব্যাংক, ডেসটিনির কেলেঙ্কারিসহ ছয়টি বড় অর্থ কেলেঙ্কারি। তাছাড়া রয়েছে রূপালী ব্যাংক থেকে তিনটি প্রতিষ্ঠানের নেয়া হাজার কোটি টাকা, যার ৮০১ কোটি টাকা আদায়ের সম্ভাবনা নেই বলেই মনে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া আছে অগ্রণী ব্যাংক থেকে বহুতল ভবন নির্মাণের ঘোষণা দিয়ে ৩০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়ার ঘটনা। জনতা ব্যাংক সব নিয়মনীতি ভঙ্গ করে একক মালিকানাধীন এননটেক্স গ্রুপের ২২ প্রতিষ্ঠানকে সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ দিয়েছেন যার মধ্যে ৫ হাজার কোটি টাকা খেলাপি ঋণে পরিণত হয়েছে। ফার্মার্স ব্যাংক অবৈধভাবে ঋণ দিয়েছে ৫ হাজার ১৩০ কোটি টাকা। এভাবে ব্যাংকিং খাত থেকে আরও অর্থ লোপাট হয়েছে।
×