ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

অভিনব কায়দায় বিয়ে করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১১ মে ২০১৮

অভিনব কায়দায় বিয়ে করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাত

গাফফার খান চৌধুরী ॥ ইচ্ছেমত ধর্ম পরিবর্তন করে বিয়ের পর লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া জেমস পাউয়েল ওরফে নূরে আলম নামের এক অভিনব প্রতারক সর্ম্পকে চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। জেমস পাউয়েল ওরফে নূরে আলম নামের এই প্রতারকের হাতে সর্বশেষ প্রতারণার শিকার হয়েছেন সোমা বিশ্বাস নামের এক খ্রীস্টান নারী। মানবিক কারণে এতিম জেমস পাউয়েলের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে প্রতারণার শিকার হওয়ার ঘটনায় দুটি মামলা দায়ের করেছেন সোমা বিশ্বাস। মামলার তদন্ত করতে গিয়ে জেমস পাউয়েল সম্পর্কে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছে পিবিআই। প্রতারক কতিপয় অসাধু আইনজীবীর মাধ্যমে দুটি মামলায় জামিনে রয়েছে। দ্বারে দ্বারে ঘুরেও প্রতিকার পাচ্ছেন না দাবি করেছেন প্রতারিত সোমা বিশ্বাস। পিবিআইয়ের প্রধান পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) বনজ কুমার মজুমদার এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, গত বছর স্বামী কর্তৃক স্ত্রী প্রতারিত হওয়ার একটি মামলা তাদের কাছে তদন্তের জন্য পাঠায় ঢাকার সিএমএম আদালত। এ ধরনের মামলা হরহামেশাই তাদের কাছে তদন্তের জন্য আসে। কিন্তু সোমা বিশ্বাসের মামলাটি তদন্ত করতে গিয়ে বেরিয়ে আসে ধর্মকে পুঁজি করে সরলতার সুযোগ নিয়ে নারীদের ইমোসনালি ব্ল্যাকমেলের মাধ্যমে বিয়ের পর তাদের কাছ থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিনব কৌশলের বিষয়টি। মামলাটির তদারকের দায়িত্ব পালনকারী পিবিআইয়ের ঢাকা মেট্রোর বিশেষ পুলিশ সুপার আবুল কালাম আজাদ বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করে জনকণ্ঠকে জানান, সোমা বিশ্বাস (৩৩) নামের ওই নারী স্বামী জেমস পাউয়েলের বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলাটি দায়ের করেন। সোমা বিশ্বাসের ভাষ্যমতে, জেমস পাউয়েল এতিম। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকের মাধ্যমে তাদের মধ্যে যোগাযোগ হয়। যোগাযোগ থেকে ভাললাগা। শেষ পর্যন্ত সোমা বিশ্বাস মানবিক কারণে ২০১৬ সালের ৯ নবেম্বর জেমসকে খ্রীস্টান ধর্ম মোতাবেক বিয়ে করেন। বসবাস শুরু করেন মিরপুরের বড়বাগের পপুলার হাউজিংয়ের ৩/১ নম্বর বাড়ির ৬ তলায় ভাড়া বাসায়। কিছুদিন পর থেকেই জেমস স্ত্রীর কাছ থেকে সংসার চালানোসহ নানা অজুহাতে টাকা নিচ্ছিল। জেমস বেকার ছিল। সোমা চাকরিজীবী। স্বামীর কথায় বিশ্বাস করে গত বছরের ১২ ফেব্রুয়ারি একটি সমিতি থেকে ১ লাখ ৪ হাজার ধার নিয়ে জেমসকে দেন সোমা। টাকা নেয়ার পর থেকেই জেমস রাতে ঠিকমত বাসায় ফিরত না। বিষয়টি সোমার সন্দেহ হয়। গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর জেমস বাসা থেকে নগদ ৮৯ হাজার টাকা ও ৪ ভরি ওজনের স্বর্ণালঙ্কার নিয়ে পালিয়ে যায়। এ ব্যাপারে মিরপুর থানায় অভিযোগ করার পর থেকেই জেমস মোবাইল ফোনে সোমাকে হুমকি দিচ্ছিল। গত বছরের ১৫ মে বিষয়টি সুরাহা করার জন্য সোমাকে সোহরাওয়ার্দী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সামনে ডেকে নিয়ে বেধড়ক মারধর করে। জনতা সোমাকে রক্ষা করে। জেমস পালিয়ে যায়। তারই জেরে সোমা স্বামীর বিরুদ্ধে সিএমএম আদালতে দুটি মামলা করেন। মামলার বিষয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা পিবিআইয়ের উপ-পরিদর্শক জুয়েল মিঞার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জনকণ্ঠকে জানান, আসামি জেমস মূলত প্রতারক। ধর্মকে পুঁজি করে নারীদের ইমোসনালি ব্ল্যাকমেল করত। যে ধর্মের নারীর তার সঙ্গে সম্পর্ক হতো, নিজেকে সেই ধর্মের অনুসারী পরিচয়ে ওই নারীকে বিয়ে করত। বিয়ের পর ওই নারীর কাছ থেকে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। তদন্তে জানা যায়, জেমস পাউয়েল (৩৯) মূলত এতিম। পিতার নাম মৃত টনি পাউয়েল, মাতা-বি পাউয়েল। বাড়ি মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানাধীন নারাইনছড়ার মাজডিহি এলাকায় বলে পরিচয় দিতেন। ১৯৯৯ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি প্রতারণার উদ্দেশে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। নাম রাখে নূরে আলম। নূরে আলম নামে মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল থানা এলাকার মেরিনা আক্তার (৩৫) নামের এক নারীকে বিয়ে করেন। সেই সংসারে আরজু নামের অষ্টম শ্রেণী পড়ুয়া এক ছেলে আছে। মেরিনাদের এলাকায় নিজেকে নূরে আলম বলে পরিচয় দিত। পরিস্থিতি মোতাবেক তিনি কোন কোন সময় নিজেকে মুসলিম আবার কোন কোন সময় নিজেকে খ্রীস্টান বলে পরিচয় দিতেন। যখন নিজেকে খ্রীস্টান বলে পরিচয় দিতেন, তখন তার স্ত্রীর নাম মেরিনা পাউয়েল বলে পরিচয় দিতেন। আবার ২০১৬ সালে নিজেকে খ্রীস্টান ধর্মাবলম্বী পরিচয় দিয়ে সোমা বিশ্বাসের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে বিয়ে করে। পিবিআইয়ের অতিরিক্ত বিশেষ পুলিশ সুপার বশির আহমেদ এ বিষয়ে জনকণ্ঠকে বলেন, মামলাটি তদন্ত শেষে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়েছে। মামলাটি চলমান। এ ব্যাপারে প্রতারিত নারী সোমা বিশ্বাসের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি।
×