ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

মাহাথিরের জয়ের রহস্য

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১১ মে ২০১৮

মাহাথিরের জয়ের রহস্য

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মালয়েশিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে বিস্ময়কর নির্বাচনী বিজয় পেয়েছেন ৯২ বছর বয়সী মাহাথির মোহাম্মদ। ১৯৫৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন অবসানের পর থেকে বরাবরই বারিসান ন্যাশনাল জোট মালয়েশিয়ার শাসন ক্ষমতায় থেকেছে। খবর বিবিসির। এই শাসক জোটের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়তে শুরু করলেও, বেশির ভাগ মানুষই কিন্তু ধারণা করেছিল প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক আরেক মেয়াদের জন্য আবার জয়ী হবেন। কিন্তু সরকারী গণনায় দেখা যায় এই জোট আসলে জয়ের জন্য প্রয়োজনীয় যথেষ্ট আসন সংসদে পায়নি, যা পর্যবেক্ষকদের রীতিমতো বিস্মিত করেছে। এই জোট হেরে যাওয়ার কারণ যেমনটা সচরাচর হয়ে থাকে, এক্ষেত্রেও কারণ মূলত অর্থনীতি। জীবনধারণের ব্যয় মালয়েশিয়ায় অত্যধিক বেড়ে গেছে এবং জিনিসপত্র ও বিভিন্ন সেবার ওপর সরকার নতুন নতুন কর আরোপ করেছে, যা কখনই জনপ্রিয় নয়। নাজিব রাজাক দুর্নীতির সঙ্গে তার কোন রকম সংশ্লিষ্টতা বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন। তবে সাম্প্রতিক কয়েক বছরে মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হলো দুর্নীতি। নাজিব রাজাক বিদেশী বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে একটি বিশেষ তহবিল গঠন করেছেন। কিন্তু এই তহবিলের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অভিযোগ তারা এই তহবিল ব্যবহার করে ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধি করছে। নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে ৭০ কোটি ডলার পকেটস্থ করার অভিযোগও উঠেছে। তবে সবচেয়ে বড় কথা নাজিব রাজাক এ অভিযোগ বরাবর অস্বীকার করে এসেছেন এবং নিজের দেশে কোন রকম অনিয়মের অভিযোগ থেকে তাকে অব্যাহতিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে তার ও এই তহবিলের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত চলছে, যা বাইরে মালয়েশিয়ার ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। মাহাথির মোহাম্মদ অতীতেও প্রধানমন্ত্রীর এবং বারিসান ন্যাশানালের প্রধানের দায়িত্ব পালন করেছেন। ২২ বছর তিনি ক্ষমতায় ছিলেন ১৯৮১ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত। ২০০৩-এ তিনি ক্ষমতা থেকে সরে দাঁড়ান। কিন্তু দু’বছর আগে সবাইকে তিনি হতবাক করে দিয়ে বলেন, দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে তিনি এতটাই বিব্রত যে তার পুরনো দল তিনি ছেড়ে দিচ্ছেন এবং বিরোধী জোট পাকাতান হারাপানে তিনি যোগ দিচ্ছেন । পাকাতান হারাপানের অর্থ ‘আশার জোট’। এরপর জানুয়ারি মাসে তিনি জানান তিনি নাজিব রাজাকের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। তিনি আরও বলেন, জয়ের বিষয়ে তিনি আস্থাবান যদি না নাজিব কারচুপি করে। নির্বাচনের সময় বেশ কিছু কারচুপির অভিযোগও উঠেছে। লোকজন অভিযোগ করেছে তারা ভোট দেবার ব্যালট কাগজ বা পোস্টাল ব্যালটের কাগজ পায়নি এবং সমালোচকরা অভিযোগ করেছে কোন কোন নির্বাচনী কেন্দ্রে সরকার এমনভাবে ভোটে কারচুপি করেছে যাতে জয় নিশ্চিত হয়। বিশ্বজুড়ে ‘ভুয়া খবর’ নিয়ে যে হৈচৈ ও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে মালয়েশিয়ার সরকার সেই উদ্বেগে সামিল হয়ে দ্রুত নতুন একটি আইন প্রণয়ন করেছে যার আওতায় এ ধরনের খবর ‘ শেয়ার’ করলে কারাদ-ের বিধান রাখা হয়েছে। কেউ কেউ মনে করছে সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা বন্ধের এটা একটা পথ। মাহাথিরের বিরুদ্ধে এই আইনে অভিযোগও দায়ের করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার নাজিব বলেছেন তিনি ‘জনগণের রায়’ মেনে নিয়েছেন। কিন্তু একই সঙ্গে তিনি একথাও বলেছেন যে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী যিনি হবেন তাকে সংসদ সদস্যদের আস্থা অর্জন করতে হবে। মাহাথির অবশ্যই সেই আস্থা অর্জনে সফল হবেন। তবে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন দু’বছর পর তিনি ক্ষমতা অন্য কারও হাতে তুলে দেবেন। কারণ তার বয়স এখন ৯২ চলছে। আর সেটাও মালয়েশিয়ার রাজনীতির ক্ষেত্রে আরেকটা চমক সৃষ্টি করতে পারে, কারণ সেক্ষেত্রে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার বড় ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে আনোয়ার ইব্রাহিমের- যিনি মাহাথিরের সাবেক ঘনিষ্ঠ ছিলেন এবং যাকে ক্ষমতা থেকে সরিয়েছিলেন মাহাথির।
×