ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

মাহাথির মোহাম্মদ চিকিৎসক থেকে প্রধানমন্ত্রী

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ১১ মে ২০১৮

মাহাথির মোহাম্মদ চিকিৎসক থেকে প্রধানমন্ত্রী

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ ৯২ বছর বয়সী মাহাথির মোহাম্মদ আবার মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ২২ বছর ক্ষমতায় থাকার পরে ২০০৩ সালে তিনি অবসরে গিয়েছিলেন। কিন্তু তার ভাষায়, জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল সংশোধন করার জন্য তিনি আবার রাজনীতিতে সক্রিয় হলেন। শুধুমাত্র তার এক সময়ের শিষ্য নাজিব রাজাককেই তিনি পরাজিত করেননি, তার দল ‘ইউনাইটেড মালয়িস ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন’কে হারিয়ে এক সময়ের প্রতিপক্ষ পাকাতান হারাপান কোয়ালিশনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। খবর বিবিসির। মাহাথির মোহাম্মদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি দুইবছর ক্ষমতায় থাকতে চান। এরপর তিনি কারাবন্দী নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করবেন। একুশ বছর বয়সে রাজনীতি শুরু করেন মাহাথির মোহাম্মদ। তখন তিনি তার সাবেক দল ইউএমএসওতে যোগ দেন। যদিও পরবর্তী সাত বছর একজন চিকিৎসক হিসেবে তিনি প্র্যাকটিস অব্যাহত রাখেন। ১৯৬৪ সালে তিনি কেদাহ প্রদেশ থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। কিন্তু ১৯৬৯ সালে তিনি সেই আসনটি হারান আর দল থেকেও বহিষ্কৃত হন, কারণ তখনকার প্রধানমন্ত্রী টাঙ্কু আবদুল রহমানের সমালোচনা করে তিনি একটি প্রকাশ্যে চিঠি লিখেছিলেন। এরপর তিনি ‘মালয় ডিলেমা’ নামের একটি বিতর্কিত বই লেখেন। সেখানে তিনি মন্তব্য করেন, দেশটির মালয় জনগোষ্ঠীকে বঞ্চিত করা হচ্ছে এবং দ্বিতীয় শ্র্রেণীর নাগরিক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। ব্যক্তিজীবনে চিকিৎসক মাহাথির মোহাম্মদ এখন মালয়েশিয়ার রোগ সারাতে চান। এটি দলের তরুণদের তার পক্ষে টেনে নিয়ে আসে এবং তাকে পুনরায় দলে ফেরত নেয়া হয়। ১৯৭৪ সালে তিনি পুনরায় নির্বাচিত হন এবং শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পান। পরের চার বছরের মধ্যে তিনি ইউএমএমও দলের উপ নেতা নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে তিনি প্রথম মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। তার শাসনামলে মালয়েশিয়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। যদিও তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কিছু অভিযোগ আছে, কিন্তু অর্থনৈতিক সাফল্য তাকে মালয়েশিয়ায় অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তোলে। বহু বিতর্কিত ইন্টারনাল সিকিউরিটি এ্যাক্টের আওতায় অনেক বিরোধী রাজনীতিবিদকে কারাগারে পাঠানো হয়। ১৯৯৮ সালে তার উপপ্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমকে বরখাস্তের পর দুর্নীতি আর সমকামিতার অভিযোগে কারাগারে পাঠানো হয়। পশ্চিমা দেশগুলো নিয়ে তার সমালোচনা বহির্বিশ্বেও তাকে আলোচিত করে তোলে। প্রধানমন্ত্রী থেকে ২০০৩ সালের অক্টোবরে অবসরের সময় তিনি বলেন, ‘আমি অসন্তুষ্ট, কারণ সফল হওয়ার জন্য আমি যেসব অর্জন করতে চেয়েছিলাম, তার সামান্যই অর্জন করতে পেরেছি।’ তবে অবসরের পরেও তিনি রাজনীতি থেকে দূরে সরে যাননি। ২০০৮ সালের নির্বাচনের দলের খারাপ ফলাফলের জন্য তিনি তার উত্তরসূরি আবদুল্লাহ বাদাউয়ির প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন। আবদুল্লাহর পদত্যাগের পর নাজিব রাজাক ক্ষমতায় আসেন। প্রথমদিকে নাজিব রাজাককে সমর্থন করলেও, দেশটির একটি বিনিয়োগ তহবিলে নাজিব রাজাকের দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ পাওয়ার পর তা পাল্টে যায়। এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকার ও পার্টির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য দলের নেতাকর্মীদের সমর্থন দাবি করেন মাহাথির মোহাম্মদ। কিন্তু সেখানে সাড়া না পাওয়ার পর ২০১৬ সালে তিনি এবং আরও কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতা দল থেকে পদত্যাগ করেন এবং বিরোধী পক্ষে যোগ দেন। এ বছরের জানুয়ারি মাসে তিনি নির্বাচনে অংশ নেয়ার ঘোষণা দেন। অনেককে অবাক করে মাহাথির মোহাম্মদ স্বীকার করেছেন, তিনি জীবনে অনেক ভুল করেছেন, যার মধ্যে রয়েছে আনোয়ার ইব্রাহিমকে বরখাস্ত করা। তবে আনোয়ার ইব্রাহিমের সঙ্গে জোট বাধার পর তাকে এক নম্বর অভিনেতা বলে বিদ্রুপ করেছেন নাজিব রাজাক। ক্ষমতায় থাকাকালীন সময় নিয়ে লেখা একটি বইয়ে সাবেক প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ বাদাইয়ি বলেছেন, ‘মাহাথির তার নিজের পথেই চলেন এবং তিনি বিশ্বাস করেন, তার পথই একমাত্র পথ।’
×