ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ফের প্রধানমন্ত্রী হলেন মাহাথির মোহাম্মদ

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১১ মে ২০১৮

ফের প্রধানমন্ত্রী হলেন মাহাথির মোহাম্মদ

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ মালয়েশিয়ার সপ্তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন মাহাথির মোহাম্মদ। বৃহস্পতিবার ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি বয়সী নির্বাচিত নেতা হিসেবে শপথ নেন তিনি। মালয়েশিয়ার রাজা পঞ্চম সুলতান মুহাম্মাদ কুয়ালালামপুরের ইস্তানা নেগারা প্রসাদে মাহাথিরকে শপথ পড়ান। শপথের সময় ৯২ বছর বয়সী এ নেতার শরীরে ছিল ঐতিহ্যবাহী মুসলিম পোশাক। এ সময় মাহাথিরের সঙ্গে তার স্ত্রী হাশমাহ মোহাম¥দ আলী উপস্থিত ছিলেন। দেশটিতে সদ্য অনুষ্ঠিত ১৪তম সাধারণ নির্বাচনে অভূতপূর্ব জয় পায় মাহাথিরের নেতৃত্বাধীন পাকাতান হারপান জোট। জয়ের পর দ্রুত শপথ গ্রহণের কথা বলেন মাহাথির। বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বিকেল সাড়ে পাঁচটায় শপথ অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও তা পিছিয়ে একই দিন রাতে করা হয়। কুয়ালালামপুরে মালয়েশিয়ার রাজার বাসভবনে অনুষ্ঠিত ওই শপথ অনুষ্ঠানে বিপুল সংখ্যক রাজনৈতিক নেতা উপস্থিত ছিলেন। শপথের সময় মাহাথিরের লাখ লাখ সমর্থক রাস্তায় নেমে সেøাগান দেয়। বৃহস্পতিবার সকালে রাজার সঙ্গে সাক্ষাত করেন মাহাথির। এরপর এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে শপথ অনুষ্ঠান পেছাতে পারে। তবে আমরা আজই সরকার গঠন করতে চাই। কারণ নাজিব রাজাকের অন্তবর্তীকালীন সরকারের মেয়াদ ইতোমধ্যে শেষ হয়ে গেছে। অপর এক সংবাদ সম্মেলনে একই দিন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাক বলেন, আমি জনতার রায় মেনে নিয়েছি। এ সময় মালয়েশিয়ার সাধারণ জনতাকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়ে টানা ১০ বছর প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী এই নেতা বলেন, রাজার অনুমোদন পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কারণ সংবিধান মোতাবেক আমাদের রাজা নির্ধারণ করবেন কে হচ্ছেন মালয়েশিয়ার পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী। তাই আমি রাজার সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত সকলকে শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। নাজিব আরও বলেন, বারিসান ন্যাশনাল জোট বিএন রাজার সিদ্ধান্তকে সম্মান জানাবে। কারণ রাজার সিদ্ধান্তের প্রতি মালয়েশীয় জনগণের আস্থা রয়েছে। মালয়েশিয়ার ২২২ আসন বিশিষ্ট পার্লামেন্টের ১১৩টিতে জয় পেয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে পাকাতান হারপান। অপরদিকে নাজিব রাজাকের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন বারিসান ন্যাশনাল জোট পায় ৭৯টি আসন। এই জয়ের মাধ্যমে মালয়েশিয়ায় ইতিহাস সৃষ্টি হলো। ক্ষমতা হারাল দীর্ঘ ৬০ বছর ক্ষমতায় থাকা বারিসান ন্যাশনাল। এক সময় এই বারিসান ন্যাশনালের নেতা হিসেবেই দীর্ঘদিন ক্ষমতায় ছিলেন মাহাথির। আর দ্বিতীয় মেয়াদে রাজনীতিতে ফিরেই দাঁড়িয়ে গেলেন এক সময় তার হাতে গড়া দলের বিপক্ষে। ৯২ বছর বয়সেও দেখান জয়ের ভেলকি। খবর এএফপি ও বিবিসির। মালয়েশিয়ায় ব্যাপক রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রেক্ষাপটে মাহাথিরের বিরোধী জোট বারিসান ন্যাশনাল (বিএন) জোটের ক্ষমতার অবসান ঘটাল। ১৯৫৭ সালে মালয়েশিয়া স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই বিএন জোট অপ্রতিরোধ্যভাবে দেশ শাসন করে আসছিল। আগে দীর্ঘ ২২ বছর ধরে সুনামের সঙ্গে দেশ শাসনের পর প্রধানমন্ত্রী নাজিব রাজাকের ওপর আস্থা রেখে রাজনীতি থেকে অবসর নেন মাহাথির। নাজিবের বিরুদ্ধে ব্যাপক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠায় তিনি আবারও রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুল জয় পান। জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি ও কয়েক বিলিয়ন ডলারের দুর্নীতির অভিযোগে নাজিবের জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছিল। নির্বাচনে জয়ের খবরে উৎফুল্ল সমর্থকদের উদ্দেশে মাহাথির বলেন, আমরা প্রতিশোধ নিতে চাচ্ছি না। আমরা আইনের শাসন ফিরিয়ে আনতে চাই। বুধবার রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে মাহাথির বলেন, আমি এখনও জীবিত আছি। এ সময় মালয়েশিয়ায় আগামী দুই দিন সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে তিনি বলেন, আগামী দুই দিন সাধারণ ছুটি থাকবে। তবে আমার সমর্থকরা এই দুই দিন ঘরে বসে থাকবে না। তারা আনন্দ করবে। সুভা সিলবান নামে ৪৮ বছর বয়সী এক চিকিৎসক বলেন, মালয়েশিয়ায় এই পরিবর্তন আগামী দিনগুলো আরও সুন্দর হবে। আমরা আগামীতে একটি নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ সরকার এবং ঐক্যবদ্ধ দেশ চাই। ২০১৩ সালে মালয়েশিয়ার সাধারণ নির্বাচনে বিপুলসংখ্যক ভোট পায় বিরোধী জোট। তবে সরকার গঠনে প্রয়োজনীয় আসনে জয়ী না হওয়ায় ক্ষমতায় আসতে পারেনি তারা। তখনই আঁচ করা হচ্ছিল মালয়েশিয়ার মানুষ পরিবর্তন চায়। ১৯৮১ সালের ১৬ জুলাই মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হন মাহাথির। তার শাসনামলে মালয়েশিয়া দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক শক্তিতে পরিণত হয়। যদিও তার বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের কিছু অভিযোগ আছে, কিন্তু অর্থনৈতিক সাফল্য তাকে জনপ্রিয় নেতায় পরিণত করে। ২০০৩ সালের ৩১ অক্টোবরে অবসরের দিন তিনি বলেন, ‘আমি অসন্তুষ্ট। কারণ সফল হওয়ার জন্য আমি যেসব অর্জন করতে চেয়েছিলাম, তার সামান্যই অর্জন করতে পেরেছি।’ মাহাথির ২০০৮ সালে দেশটির নির্বাচনের দলের খারাপ ফলের জন্য উত্তরসূরি আবদুল্লাহ আহমদ বাদাবির প্রকাশ্যে সমালোচনা করেন মাহাথির। বাদাবির পদত্যাগের পর নাজিব রাজাক ক্ষমতায় আসেন। প্রথমদিকে নাজিবকে সমর্থন করলেও দেশটির একটি বিনিয়োগ তহবিলে নাজিবের দুর্নীতির অভিযোগ প্রকাশ পেলে মাহাথির নাজিবের কট্টর সমালোচকে পরিণত হন। ২০১৬ সালে তিনি এবং আরও কয়েকজন সিনিয়র নেতা দল থেকে পদত্যাগ করেন এবং বিরোধী পক্ষে যোগ দেন। নাজিব বুধবারের নির্বাচনের ফল মেনে নিয়েছেন। খবরে বলা হয়েছে, পাকাতান হারাপান জোট শহুরে ভোট, সংখ্যালঘু চীনা ও ভারতীয় সম্প্রদায়ের ভোটারদের সমর্থন নিয়ে ও মাহাথিরের পূর্ব জনপ্রিয়তা ব্যবহার করে বিএন জোটকে ধরাশায়ী করার পরিকল্পনা করে। তবে তাদেরও কৌশল সফল হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন । নির্বাচনে এ জয়ের পর মাহাথিরকে এখন তার নতুন জোটের চার দলের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখার জন্য কাজ করতে হবে এবং কারাগারে থাকা বিরোধী দলীয় নেতা আনোয়ার ইব্রাহিমকে পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী করতে পথ বের করতে হবে।
×