ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রেজাউল হত্যা মামলার রায়

প্রকাশিত: ০৪:৩৫, ১১ মে ২০১৮

রেজাউল হত্যা মামলার রায়

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজী বিভাগের জনপ্রিয় সংস্কৃতিমনস্ক অধ্যাপক এএফএম রেজাউল করিম হত্যা মামলা দায়েরের দু’বছরের মধ্যে রায় ঘোষণা করেছেন রাজশাহী বিভাগীয় দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক। নিঃসন্দেহে এটি একটি প্রশংসনীয় উদ্যোগ এবং দ্রুত বিচারের উদাহরণ। অধ্যাপক রেজাউল হত্যাকা-ের রায়ে দু’জনের মৃত্যুদ- এবং তিনজনকে যাবজ্জীবন কারাদ- দিয়েছে আদালত। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের ২০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছে। রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে অধ্যাপকের পরিবারের সদস্যরা প্রতিক্রিয়ায় জানিয়েছেন, উচ্চ আদালতে যেন এই রায় বহাল থাকে এবং অন্যতম পলাতক আসামি শরীফুলের বিরুদ্ধে রাষ্ট্র যেন দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে। উল্লেখ্য, শরীফুল ছিল অধ্যাপক রেজাউলের সরাসরি ছাত্র এবং তার স্থানীয় অভিভাবক। আসামিরা সবাই নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশের নেতা ও সদস্য। উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ২৩ এপ্রিল সকালে রাজশাহীর শালবাগান এলাকায় নিজের বাড়ি থেকে প্রায় ৫০ গজ দূরে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করা হয় অধ্যাপক রেজাউলকে। তখনই এই ঘটনার সঙ্গে জঙ্গীদের সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ওঠে। মামলার রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করে আরও বলতে হয় যে, এই হত্যাকা-ের আগে-পরে দেশে আরও হত্যাকা- ও হামলার ঘটনা ঘটেছে, যেগুলোর সঙ্গে জঙ্গী সংশ্লিষ্টতার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ রয়েছে। যেমন, সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক জাফর ইকবাল, বিশিষ্ট লেখক অভিজিৎ রায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি ড. আখতারুজ্জামান প্রমুখ। এসব হামলা-মামলার তদন্ত ও বিচার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হওয়া বাঞ্ছনীয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ বিষয়ে উদ্যোগী ও তৎপর হতে হবে। পুলিশী ভাষ্যমতে জঙ্গীরা অসংগঠিত ও দুর্বল হয়ে এলেও নব্য জেএমবি নামে ছোট ছোট গ্রুপে বিভক্ত হয়ে তারা হামলা ও নাশকতার পাঁয়তারা করছে। উল্লেখ্য, নব্য জেএমবি নামকরণ হয়েছে পুলিশ কর্তৃক। এখন তারা আত্মঘাতী তথা ফিদায়ী স্কোয়াডের সদস্যভুক্ত হয়ে অপেক্ষাকৃত জনবহুল স্থানে স্থানীয়ভাবে ধ্বংসাত্মক তৎপরতা চালানোর অপপ্রয়াস পাচ্ছে। সন্ত্রাসী হামলা চালাচ্ছে ব্যক্তির ওপর। তার মানে দেশ থেকে জঙ্গীবাদ ও তৎপরতা একেবারে নির্মূল হয়নি। বর্তমান সরকার ধর্মীয় উগ্রপন্থাসহ সব রকম জঙ্গীবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রমের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশে ধর্মীয় উগ্র মতবাদের কোন স্থান নেই। প্রকৃতপক্ষে জামায়াতে ইসলামী ও শিবিরের হাত ধরে দেশে ধর্মীয় রাজনীতি এবং জঙ্গীবাদের উদ্ভব ঘটে। গুলশান, শোলাকিয়া ও অন্যান্য স্থানে ছোট-বড় কয়েকটি হামলার পর এদেশীয় জঙ্গীদের সঙ্গে কুখ্যাত আইএস, আল কায়েদা, আলশামস, জইশ-ই-মোহাম্মদ, তালেবান ইত্যাদির যোগাযোগ এবং মদদের কথা দেশে-বিদেশে উচ্চারিত হলেও সেসব কখনই প্রমাণ হয়নি। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বরাবরই তা অস্বীকার করে আসছে। তবু এতে আত্মপ্রসাদের কিছু নেই। দেশীয় জঙ্গীদের অস্ত্র ও অর্থের উৎস এবং উৎসাহদাতা, মদদদাতাসহ আন্তর্জাতিক যোগাযোগের বিষয়টি সর্বদাই নজরদারির দাবি রাখে। অর্থাৎ এটি একটি নিরন্তর ও অব্যাহত প্রক্রিয়া। জঙ্গী এবং সন্ত্রাসীরা শুধু অস্ত্র ও বোমাই নয়, বরং প্রযুক্তি ব্যবহারেও অত্যন্ত দক্ষ। সেক্ষেত্রে তাদের মোকাবেলা করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকেও সর্বদাই সতর্ক ও তৎপর হতে হবে। সর্বোপরি সর্বস্তরে সর্বপর্যায়ে তৈরি করতে হবে জনসচেতনতা। টঙ্গী, কুমিল্লা ও শাহজালাল ক্যাম্পাসে জনপ্রতিরোধের বিষয়টি লক্ষণীয়।
×