ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শরীফ শেখ

ঈর্ষার বিষবাষ্প

প্রকাশিত: ০৭:১৫, ১০ মে ২০১৮

ঈর্ষার বিষবাষ্প

পরশ্রীকাতরতা। পরের উন্নতিতে, পরের সৌন্দর্যে কাতর হওয়া। বাঙালী জীবনে রয়েছে শব্দটির প্রচুর প্রয়োগ। ইউরোপ আমেরিকায় নাকি এর অস্তিত্ব নেই। কাজেই এর কোন ইংরেজী প্রতিশব্দ নেই। একেবারে আমাদের নিজস্ব একটি বিষয়। এটি যে কত মানসিক রোগতুল্য তা সর্বজনবিদিত। অপরের শ্রীবৃদ্ধি দেখে ঈর্ষাণি¦ত হতে আমাদের জুড়ি নেই। কি নারী কি পুরুষ এ ব্যাধিতে সকলেই আক্রান্ত আর পারিবারিক বা পুরুষানুক্রমে এটি শিশুদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। কেননা শিশুরা আমাদের চারপাশেই থাকে আর তারা চেতনে বা অবচেতনে বড়দের অনুকরণ করেই শেখে। ফলে এটার ভয়ঙ্কর প্রভাব সুদূরপ্রসারী। ‘তোমার অমুক বন্ধুর গাড়ি আছে, তমুক বন্ধুর বাড়ি আছে, তোমার নেই কেন?’-একটি সরাসরি প্রশ্ন। বিপরীত দিকে পুরুষদের ক্ষেত্রে পরশ্রীকাতরতাকে অনেকেই পরস্ত্রীকাতরতার সমার্থক মনে করে থাকেন। অপরের স্ত্রীর প্রতি আসক্তি। এই অসাধু মানসিকতা শুধু যে ব্যক্তি পর্যায়ে ক্ষতিকর তা নয় বরং পরিবার বা সমাজে এর মারাত্মক ঋণাত্মক প্রভাব পড়ে। পরশ্রীকাতর ব্যক্তি যখন নিজে যেনতেনভাবে পরের শ্রীর সমানে পৌঁছুতে চায় বা তাকে অতিক্রম করতে চায়, তখন তা ব্যক্তি, পরিবার বা সমাজ নয় শুধু জাতীয় বা রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাকেও কলুষিত করে। ঘুষ, দুর্নীতি, প্রতিদ্বন্দ্বীকে ল্যাং মারা, খুন, গুম, ব্যাভিচার ইত্যাদির দিকেও নিয়ে যেতে প্রণোদনা দেয়। এভাবে, পরশ্রীকাতরতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়তে পারে ব্যাপকভাবে। পরশ্রীকাতরতা থেকে কুৎসিৎ ঈর্ষা, হিংসার উৎপত্তি হয়। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় নেমে ওপরের স্তরের কাউকে খুশি করার তেলবাজি আর নিচের স্তরের কাউকে অস্বীকার করার কুৎসিৎ অহমিকায় লিপ্ত হয়ে পড়ে পরশ্রীকাতর ব্যক্তি। কবিগুরু যেমন বলেছিলেন- কেরোসিন শিখা বলে মাটির প্রদীপে ভাই বলে ডাকো যদি দেব গলা টিপে হেনকালে গগনেতে উঠিলেন চাদা কেরোসিন বলে ওঠে এসো মোর দাদা। কবিগুরু“রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আঁকা এ ছবি আমাদেরই সমাজের বাস্তব চিত্র। আমাদের নির্মোহভাবে অহিংস প্রত্যয়ে এগিয়ে যেতে হলে তাই পরশ্রীকাতরতার মতো জঘন্য মানসিকতার উর্ধে ওঠা জরুরী। এজন্য আমাদের শিক্ষার প্রাথমিক স্তর থেকেই পদক্ষেপ নিতে হবে। উচ্চ মানের নৈতিকতাসম্পন্ন আদর্শ ও ত্যাগী মানসিকতাসম্পন্ন মানুষকে যথসম্ভব বেছে বেছে শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় নিয়োগ দিতে হবে। আর পরিবারে ও পিতা-মাতা বা অভিভাবককে পরশ্রীকাতরতাহীন ধ্বজা উর্ধে তুলে ধরতে হবে। সিভিল সোসাইটিকে এগিয়ে আসতে হবে। লেখা, সেমিনার, সভা, সিম্পোজিয়াম করা যেতে পারে দেশের প্রতিটি শিক্ষালয়ে। একটা সময় ছিল আমাদের স্বভূমি এদেশেই, যখন মানুষের আর্থিক দৈন্য ছিল কিন্তু ছিল না পরশ্রীকাতর মন। ছিল না আধুনিক টেলিভিশন, ইন্টারনেট গুগল তো ছিল স্বপ্নাতীত কিন্তু পাড়ায় পাড়ায় ছিল পাঠাগার। এক সময় স্কুলঘরে বেড়া ছিল না, কিন্তু ছিল আত্মত্যাগী শিক্ষক, ছিল শিক্ষার আলো। এখন বিদ্যালয় ভবনের আধুনিকতার অভাব নেই, কিন্তু নেই আদর্শ শিক্ষক, নেই প্রকৃত শিক্ষা। সুতরাং পরশ্রীকাতরতার হিং¯্র পাখি বাসা বাঁধবেই শান্তির নীড়কে তাড়িয়ে। কাকরাইল, ঢাকা থেকে
×