ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

লুকনো লোভের থাবা;###;শামীম শিকদার

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ পরশ্রীকাতরতা

প্রকাশিত: ০৭:১৪, ১০ মে ২০১৮

সমাজ ভাবনা ॥ বিষয় ॥ পরশ্রীকাতরতা

মানুষের চরিত্রে ভাল ও মন্দ দুটি দিক রয়েছে। মন্দ দিকের মধ্যে হিংসা-বিদ্বেষ হচ্ছে সবচেয়ে জঘন্য। এটি একটি মানসিক ব্যাধি। অন্যের কোন ভাল বা কল্যাণ দেখে মনে কষ্ট অনুভব করা এবং তা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কামনা করাকেই হিংসা বা পরশ্রীকাতরতা বলে। পরশ্রীকাতরতা ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সর্বত্রই রয়েছে। এক এক জনের হিংসা প্রকাশ করার ধরন হচ্ছে একেক রকম। কেউ প্রকাশ করে খুব সুন্দরভাবে সাজিয়ে-গুছিয়ে। আবার কেউ প্রকাশ করে খুবই সাদা-সিদেভাবে। যিনি খুব সুন্দরভাবে আয়োজন করে নিজের মনের ভেতরে লুকানো হিংসাকে জানান দেয়, সে হচ্ছে সবচেয়ে বড় অকৃতকার্য শত্রু। কারণ সে বিভিন্ন কায়দায় কাছে এসে অন্যের লাভজনক অংশটুকো গ্রহণ করে নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য অন্যকে সুন্দরভাবে পরিত্যক্ত স্থানে ফেলে দেয়। যা বোঝা বরাবরই খুব মুশকিল হয়ে উঠে। তাদের মাধ্যমে উপকার হওয়ার প্রত্যাশা ব্যর্থ হয়ে গ্রহণ করতে হয় নানা ধরনের অপ্রত্যাশিত ক্ষতির। তাদের মনোভাব বোঝা খুবই মুশকিল। অন্যদিকে তাদের বিপরীতে রয়েছে সাদা-সিদে কিছু মানুষ; যারা খুব সহজে নিজের মনের ভেতরে লুকানো সব কথাগুলো জনসমক্ষে প্রকাশ করে নিজের মনের প্রশান্তি নিয়ে থাকে। যারা নিজের মনের ভেতরে লুকানো হিংসার কথা পূর্ব থেকে বলে তাদের কাছ থেকে অবস্থান বুঝে সাবধান হওয়া যায়। কিন্তু যারা বলে না তাদের কাছ থেকে সাবধান হওয়া খুব দুরূহ একটি ব্যাপার। পৃথিবীর প্রত্যেকটি মানুষ নিজের ভাল একটি অবস্থান তৈরি করার জন্য প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে যায়। সে চেষ্টার মাঝে অনেক ধরনের প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হতে হয়। এই প্রতিযোগিতার মধ্যে যে জিনিসটি সবচাইতে বেশি ভূমিকা রাখে তা হচ্ছে লোভ। কে কার আগে নিজেকে উপস্থাপন করতে পারবে তাই হচ্ছে চলমান সমজের একটি ব্যাধি। আমরা যে কাজটি করে থাকি তা হচ্ছে, নিজে যখন উপরে উঠতে পারি না; তবে অন্য কেউ উঠতে দেই না। যার ফলে সমাজের পুরো অংশটাই অন্ধকারে পরিণত হয়। যদি কোন সমাজ থেকে যোগ্যতা বা দক্ষতার বলে একজন উপরে উঠতে পারে, তবে তার হাত ধরে অনেকেই উঠার সম্ভাবনা রয়েছে। কিন্তু আমাদের মানসিকতা কাউকেই উঠতে দেয় না। এতে করে অন্যের পাশাপাশি আমরা নিজেরাও পিছিয়ে পড়ি। একটি সমাজের বা দেশের শতভাগ লোক ভাল থাকবে এমন কোন কথা নয়। কিন্তু যারা ভাল আছে তারা মন্দ লোকের সঙ্গে কুলিয়ে উঠতে পারে না। এখানে কাজ করে ব্যক্তি বা বংশ কোন্দল। আমি শিকদার হয়ে ভূঁইয়া পরিবারের কাউকে উপরে দেখতি রাজি না; আবার ভূঁইয়া পরিবারের কেউ শিকদার পরিবারের কাউকে উপরে দেখতে রাজি নয়। এমন পরশ্রীকাতরতার কারণে সমাজ ও দেশ ধ্বংসের পথে পা বাড়ায়। আমরা যদি বংশ বা ধর্ম নয়, মানবিকতার দৃষ্টিতে সকলকে দেখতে পারব তখন আমাদের মাঝে অন্যরকম একটি শক্তি কাজ করবে। আমরা যদি গ্রামের দিকে তাকাই তবে পরশ্রীকাতরতার দিকটি বেশি পরিমাণে দেখতে পাই। কারণ শহরের তুলনায় গ্রামের মানুষকে আশপাশের মানুষ অনেক বেশি চিনে। খুব সহজেই একে অপরের খোঁজখবর নিতে পারে। প্রত্যেকের পরিবার ও পরিবারের অবস্থা সম্পর্কে জানে। এমন চিনা-জানা থাকার কারণে পরিচিত ব্যক্তিদের মধ্যে কেউ যদি নিজের ভাল অবস্থান তৈরি করে নিতে সক্ষম হয় তবে আমাদের মনের ভেতরে একটি হিংসা কাজ করে। যদিও আমরা অনেক সময় ইচ্ছা করে এমনটি করতে চাই না। তাই অনেকে হিংসাকে একটি মানসিক রোগ হিসাবে বিবেচনা করেছেন। আমাদের ইচ্ছার বাইরে হিংসার উৎপত্তি হলেও তা একজন মানুষের জীবন পর্যন্ত ধ্বংস করে দিতে পারে। ক্ষোভের বা হিংসার বসে একজন মানুষ অপর একজন মানুষের প্রাণ পর্যন্ত কেড়ে নিতে পারে। কাপাসিয়া, গাজীপুর থেকে
×