ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ভাল ফল করেও তুহিনের ভবিষ্যত অনিশ্চিত

প্রকাশিত: ০৬:৫৮, ১০ মে ২০১৮

ভাল ফল করেও তুহিনের ভবিষ্যত অনিশ্চিত

স্টাফ রিপোর্টার, যশোর অফিস ॥ মনিরামপুরের পাড়দিয়া গ্রামের হতদরিদ্র আনিছুর রহমানের ছেলে তুহিন হোসেন। সে যশোর বোর্ডের অধীনে এবারের এসএসসি পরীক্ষায় বিজ্ঞান বিভাগ থেকে গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। গরিব পরিবারে জন্ম নেয়া তুহিন নিজের লেখাপড়ার খরচ জোগাতে লেখাপড়ার ফাঁকে ফাঁকে কাজ করেছে বাবা ও বড় ভাইয়ের সঙ্গে। ভেঙ্গেছে ইট, করেছে রাজমিস্ত্রির সহকারীর কাজ। ছোটবেলা থেকে বন্ধুর পথচলা তুহিন শত কষ্টের মাঝেও ছাড়েনি লেখাপড়া। অবশেষে সফলতার মুখও দেখেছে সে। বাবা দিনমজুর আনিছুর রহমান ও মা মর্জিনা খাতুনের তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে তুহিন দ্বিতীয়। ছোটবেলা থেকেই সে ক্লাসে প্রথম হতো। তুহিনের ছোট বোন তৃষা খাতুন এখন ষষ্ঠ শ্রেণীর ছাত্রী। কয়েক বছর আগে তৃষার হৃৎপি-ের দুটো বাল্ব ছিদ্র হয়ে যাওয়ায় দিনমজুর পরিবারে যে সহায়-সম্বল ছিল তার সবটুকু বিক্রি করতে হয়েছে আনিছুরকে। তবুও পুরোপুরি চিকিৎসা হয়নি তৃষার। তৃষা অসুস্থ হওয়ার সময় ২০১২ সালে তুহিন প্রাথমিক সমাপনী পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে ট্যালেল্টপুলে বৃত্তি পায়। বোনের অসুস্থতার কারণে হঠাৎ আর্থিক সঙ্কটে তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়। তুহিন নেমে পড়ে রাস্তার কাজে। তখন উপজেলার জি এইচ পাড়দিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আবুবকর সিদ্দিকীর নজরে আসে তুহিন। পড়ালেখার প্রতি অসীম আগ্রহ ও মেধা দেখে তাকে স্কুলে ভর্তি করে দেখভালের দায়িত্ব নেন আবুবকর। ২০১৫ সালে ওই বিদ্যালয় থেকে জেএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫সহ আবারও ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পায় তুহিন। সংসারে অভাব থাকলেও এরপর থেকে লেখাপড়া শিখে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখে তুহিন। ভর্তি হয় বিজ্ঞান বিভাগে নবম শ্রেণীতে। ক্লাসে ফার্স্ট হওয়া তুহিন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এবারও গোল্ডেন জিপিএ-৫ পেয়েছে। তুহিনের বাবা সব হারিয়ে এখন ভাড়ায় ইজিবাইক চালান। ফলে ভাল ফলাফল করেও পড়ালেখা চালিয়ে নিতে পারবে কি-না সন্দিহান তুহিন। তুহিন বলে, ‘ভাল ফলাফলের জন্য আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞ। উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে চিকিৎসক হতে চাই। তুহিনের শিক্ষক ও অনুপ্রেরণাদাতা আবুবকর সিদ্দিক বলেন, ‘তুহিনের মেধা ও পড়ালেখার প্রতি আগ্রহ দেখে তাকে আমার স্কুলে ভর্তি করি। নিজের নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও তাকে সাহায্য-সহযোগিতা করার চেষ্টা করছি।
×