ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ক্ষুধার তাড়নায় বাড়ি বাড়ি দল বেঁধে হানা দিচ্ছে বানর

প্রকাশিত: ০৬:৫৬, ১০ মে ২০১৮

ক্ষুধার তাড়নায় বাড়ি বাড়ি দল বেঁধে হানা দিচ্ছে বানর

নিজস্ব সংবাদদাতা, মাদারীপুর, ৯ মে ॥ বানরের জন্য জেলা পরিষদ ও বন বিভাগের খাদ্য কর্মসূচী বন্ধ হয়ে গেছে। ফলে চরম খাদ্য সঙ্কটে দুই সহস্রাধিক বানর এখন বেপরোয়া হয়ে মূল পৌর শহরে ঢুকে পড়েছে। ক্ষুধার তাড়নায় এ সব বানর দলে দলে মহল্লার বাড়ি বাড়ি হানা দিচ্ছে। কেড়ে নিচ্ছে মানুষের ঘরের খাদ্যসামগ্রী, ধ্বংস করছে গাছের ফল, কেড়ে নিচ্ছে স্কুলগামী শিশুদের টিফিনবক্স। হাটবাজার করে বাড়ি ফেরার পথে মানুষের হাত থেকে ব্যাগ ছিনিয়ে নিচ্ছে। বাধা দিলে বা তাড়া করলে দলবেঁধে হামলা করে কামড়ে আহত করছে অনেককে। সূত্রে জানা গেছে, এক সময় মাদারীপুরে ১০ সহস্রাধিক বানরের বসবাস ছিল। পঞ্চাশের দশকেও জেলা সদরের সর্বত্র দলবেঁধে বানরগুলো বিচরণ করত। তখন কুলপদ্মীর হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন বানরকে দেবতা মনে করে কলা, মোয়া, মুড়ি, চিড়া, খৈ, মুড়কি, বিস্কুট ও নানা প্রকার ফলমূল খেতে দিত। ধীরে ধীরে হিন্দু বসতি হ্রাস পাওয়ায় এবং বনজঙ্গল উজাড় হতে থাকায় আস্তে আস্তে বানর পৌর এলাকার চরমুগরিয়া বন্দরে থাকতে শুরু করে। স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে চরমুগরিয়া বন্দরে বানর ছিল প্রায় সাড়ে সাত হাজার। তখন চরমুগরিয়া জেটিসির মাঠে বানরের জন্য একটি অভয়ারণ্য গড়ে তোলা হয়। কিন্তু ঐ সব এলাকা ক্রমাগতভাবে দখল হয়ে যাওয়ায় আশ্রয়হীন বানরকুল খাদ্য সঙ্কটে পড়ে। আশ্রয়হীন ও রোগাক্রান্ত বানরগুলো ক্ষীণকায় হয়ে মারা যেতে থাকে। এভাবে কমতে কমতে ‘৮০ ও ‘৯০ দশকে বানরের সংখ্যা অর্ধেকে নেমে আসে। এরা তখন মারোয়াড়িদের জেটিসি, আদমজী, ইস্পাহানী, লতিফ বাওয়ানীসহ বিভিন্ন পাট কোম্পানরি পরিত্যক্ত গুদাম, স্কুল-কলেজ, মানুষের বাড়িঘরে সানশেড, টিনের চালার নিচে অস্তিত্ব সঙ্কটের মধ্যে কোনরকম থাকতে শুরু করে। ক্ষুধার তাড়নায় বানরগুলো এখন ছোট ছোট দলে বিভক্ত মূল শহরে তা-ব চালাচ্ছে। সামাজিক বন বিভাগ ফরিদপুরের তত্ত্বাবধানে এক সময় এ সব বানরের জন্য খাদ্য সরবরাহ কর্মসূচী চালু ছিল। কিন্তু এ কর্মসূচী বেশিদিন চালু রাখা হয়নি। মাদারীপুর জেলা বন কর্মকর্তা দীপক রঞ্জন সাহা বলেন, ‘২০০৬-০৭ অর্থবছরে ১২ লাখ ১৯ হাজার, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১১ লাখ ৭৮ হাজার, ২০০৮-০৯ অর্থবছরে ৫ লাখ ৬১ হাজার, এর পর দুই বছর বন বিভাগের বরাদ্দ বন্ধ থাকে। আবার ২০১১-১২ অর্থবছরে ২ লাখ, ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৩ লাখ, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ২ লাখ ৪০ হাজার, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ২ লাখ ৩০ হাজার এবং ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ১ লাখ ৯৫ হাজার টাকা দুই সহস্রাধিক বানরের জন্য খাদ্য বরাদ্দ ছিল। বর্তমানে বন বিভাগের বরাদ্দ বন্ধ রয়েছে। ফলে চরম খাদ্যাভাবে এ সব বানর বেপরোয়া হয়ে মানুষের বাড়িঘরে হানা দিচ্ছে।’ মাদারীপুর জেলা পরিষদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা আবুবকর সিদ্দিকী বলেন, ‘জেলা পরিষদের পক্ষ থেকে একটানা ৭ বছর বানরের খাদ্য কর্মসূচী চালু ছিল। প্রথমে অর্থাৎ ২০১০-১১ অর্থবছরে বরাদ্দ দেয়া হয় ১ লাখ ৪ হাজার ৪০৬ টাকা। ২০১১-১২ অর্থবছরে ২ লাখ ৩৭ হাজার ৪৫১ টাকা। ২০১২-১৩ অর্থবছরে ৪ লাখ ৪৭ হাজার ৫৯৩ টাকা। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে ৪ লাখ ৪৫ হাজার ৬০ টাকা ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৩৮০ টাকা। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে ২ লাখ ৯৭ হাজার ৩৩০ টাকা এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৫৭ হাজার ৯৭০ টাকা। এরপর আর কোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা এ ব্যাপারে এগিয়ে আসেনি। বর্তমানে বানরের জন্য সকল প্রকার খাদ্য কর্মসূচী বন্ধ রয়েছে।
×