ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাজেট ঘাটতি মেটাতে ৮৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১০ মে ২০১৮

বাজেট ঘাটতি মেটাতে ৮৮ হাজার কোটি টাকা ঋণ

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ আগামী ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে ঘাটতি মেটাতে সরকার অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন আর্থিক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেবে ৮৮ হাজার ৬শ’ ৩০ কোটি টাকা। এর মধ্যে ব্যাংকিং খাত থেকে ঋণ নেবে ৫৯ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা। বাকি ২৮ হাজার এক শ’ কোটি টাকা আসবে সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য উৎস থেকে। আর বিদেশী ঋণের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৮ হাজার কোটি টাকা। এর আগে, চলতি ২০১৭-১৮ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ খাত থেকে ঋণ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছিল ৬০ হাজার ৩০৫ কোটি টাকা, পরে তা সংশোধন করে ৬৬ হাজার ১০৪ কোটি টাকা করা হয়েছে। তার আগের অর্থবছর, অর্থাৎ ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এই পরিমাণ ছিল ৫৪ হাজার ৯০৮ কোটি টাকা। ওই অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে নেয়া ঋণের পরিমাণ ছিল জিডিপির ২ দশমিক ৮ শতাংশ। পরের ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল জিডিপির ৩ দশমিক ৩ শতাংশ। আর আসন্ন নতুন অর্থবছরের ঋণের লক্ষ্যমাত্রা জিডিপির ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। অর্থাৎ, আগের দুই অর্থবছরের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটে ব্যাংক ঋণের ওপর নির্ভরতা বাড়ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগের অর্থবছরের বাজেটের তুলনায় আগামী অর্থবছরের বাজেটের আকার যেমন বেড়েছে, একইসঙ্গে বেড়েছে ঘাটতি অর্থায়নও। মন্ত্রণালয় বলছে, দেশে মেগাপ্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের জন্য উপকরণ আমদানি করতে গিয়ে খরচ বাড়ছে অনেক। এছাড়া, গত বছরের বন্যায় ফসলের ক্ষতি হওয়ায় বেড়েছে খাদ্যপণ্য আমদানির পরিমাণ। নিয়মিত খরচ হিসেবে, শিল্পের কাঁচামাল, মূলধনী যন্ত্রপাতি ও জ্বালানি তেল কিনতেও বড় অঙ্কের অর্থ গুনতে হবে সরকারকে। বাজেটের এই ঘাটতি মেটানোর প্রক্রিয়া হিসেবে প্রতিবছরের মতো এবারের বাজেটেও ঋণের ওপর নির্ভরতার ব্যতিক্রম হয়নি। অর্থ মন্ত্রণালয় বলছে, প্রবৃদ্ধি উর্ধমুখী থাকায় দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বাড়ার কারণে আমদানি খরচ বাড়ছে, যেটাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন অর্থমন্ত্রী। যদিও এডিপি ঠিকমতো খরচ না হলে ঋণ তেমন নেয়ার দরকার পড়ে না। তবু, অর্থনীতির গতি বিবেচনা ও বাজেটের নিয়ম অনুয়ায়ী এই অর্থের পরিকল্পনা সরকারের রাখতেই হয়। তবে আর্থিক খাত সংশ্লিষ্ট মহল বলছে, ২০১৭ সালে ব্যাংক খাতে লুটপাট কেলেঙ্কারির পর রাষ্ট্রায়ত্ত তো বটেই, বেশ কয়েকটি বেসরকারী ব্যাংকের আমানতের অবস্থাও অত্যন্ত নাজুক। এই অবস্থায় প্রায় মৃত ব্যাংকগুলোকে টাকা দিয়ে বাঁচিয়ে তোলার জায়গায় কিভাবে ঋণ নেয়া সম্ভব সে প্রশ্নই তুলছেন তারা। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘সরকার যখন ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেয়, তখন অন্য কোন খাতে ঋণ দেয়া ব্যাংকারদের জন্য কঠিন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে, ব্যাংকে আমানত না বাড়লে ঋণের বহুমাত্রিক সম্প্রসারণ করা যায় না। ব্যবসায়ীরা ঋণ পান না ঠিকমতো। ফলে ব্যাংক ঋণের ওপর সরকারের নির্ভরতা কমানো প্রয়োজন।’ ড. সালেহউদ্দিন আরও বলেন, ‘সরকার মেগা প্রকল্পগুলোতে প্রচুর খরচ করছে। সেজন্য আমদানি খরচ বাড়ছে। এসব খরচ মেটাতে ঘাটতি বাজেটের অর্থায়নে ব্যাংক বা অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থায় চাপ বাড়ছে। তাই, অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে অর্থায়নের চাপ কমাতে অপ্রয়োজনীয় এডিপি বাদ দেয়া উচিত। প্রবৃদ্ধির জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন হলেও তা মানুষের সঙ্গে কতটুকু সম্পর্কযুক্ত সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। তাছাড়া, রাজস্ব আয় বাড়াতে প্রত্যক্ষ করের দিকে বেশি মনোযোগ দেয়া উচিত।’ আয় বাড়াতে রফতানি পণ্যের বহুমুখীকরণের ওপরও জোর দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের এই সাবেক গবর্নর। সাবেক অর্থ উপদেষ্টা ড. আকবর আলী খান বলেন, ‘ব্যাংক থেকে সরকার ঋণ নিলে বেসরকারী খাতে ঋণ কমে যাবে। সুদের হার বেড়ে যাবে। দেশে যেহেতু বিনিয়োগ নেই, তাই এই পরিস্থিতি তৈরি করা যাবে না। তবে, বাজেট ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারকে এই ঋণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে হয়। এই ঘাটতি পূরণে সরকারের উচিত আয় বাড়ানো।’ নির্বাচনী বছরের বাজেটকে উচ্চাভিলাষী অভিহিত করে আকবর আলী বলেন, পৃথিবীর সব দেশেই ভোট পাওয়ার জন্য বেশি টাকা খরচ করে ক্ষমতাসীন সরকার। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। এদিকে, সরকার বাজেটে আয় ধরেছে মোট ৩ লাখ ৪০ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর নিয়ন্ত্রিত কর আদায় লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২শ’ কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ১১ হাজার ৪৬০ কোটি টাকা। কর বহির্ভূত বা সরকারের অন্যান্য খাত থেকে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩৩ হাজার ১১০ কোটি টাকা।
×